অপেক্ষা করছি বাঁধ নির্মাণ শেষ হলেই ১০টি মিসাইল ভারতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি মুনিরের !

অপেক্ষা করছি বাঁধ নির্মাণ শেষ হলেই ১০টি মিসাইল ভারতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি মুনিরের !

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ফের যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন। দীর্ঘক্ষণ চলা সংঘর্ষবিরতির মধ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করলেন মুনির। আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি পারমাণবিক সংঘাতের ভয়াবহ হুমকি দিলেন। শুধু তাই নয়, ভারতীয় সরকারের সিন্ধু নদীর জল নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হলেই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার কথা জানালেন তিনি। পাকিস্তানের এমন উস্কানিমূলক বাগ্মীতা নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে।

অপারেশন সিঁদুর পর পাকিস্তানের তড়িঘড়ি সংঘর্ষবিরতি, তারপর ভারতকে দোষারোপ

অপারেশন সিঁদুর নামের সামরিক অভিযানের পর পাকিস্তান তড়িঘড়ি সংঘর্ষবিরতির আবেদন করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সেনাপ্রধান মুনির নাম না করে ভারতকে প্রমাণ ছাড়াই আক্রমণ করেছে। ভারতের বিরুদ্ধে এ ধরনের দোষারোপ এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিচুক্তির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। মুনিরের এই বিবৃতি পরবর্তীতে আমেরিকার মাটিতেও গর্জন ছড়িয়ে দিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।

ফ্লোরিডার নৈশভোজে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, ‘অর্ধেক বিশ্ব ধ্বংস করব’

মুনিরের ‘যুদ্ধের আগুন জ্বালানোর’ এই মনোভাব ফের ফুটে উঠল ফ্লোরিডায় এক নৈশভোজে। সেখানে তিনি জানান, ‘আমাদেরও পারমাণবিক অস্ত্র আছে এবং যদি আমরা ধ্বংস হতে যাই, তাহলে অর্ধেক বিশ্বকেই ধ্বংস করে দেব।’ এই ধরণের হুমকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এক বড় আতঙ্কের বিষয়। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে এমন ভয়ঙ্কর ভাষ্যই ভবিষ্যতে এক ভয়াবহ সংঘাতের পূর্বাভাস দেয়। পাশাপাশি, পাকিস্তানের এই কঠোর অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

আর্থিক দেউলিয়া পাকিস্তান ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের প্রভাব

গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। দেশটি দেউলিয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এদিকে, দেশের বালোচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় বিদ্রোহী সংগঠনগুলি সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যা রাষ্ট্রের ভেতরে অস্থিরতা বৃদ্ধি করছে। এই অবস্থায়, সেনাপ্রধান মুনিরের মতো উগ্র মনোভাবের নেতারা নিজেদের অবস্থান মজবুত করার জন্য যুদ্ধের জিগির তুলছেন। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এমন উত্তেজক বক্তৃতা দিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে।

কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে মুনিরের যুদ্ধ উস্কানি

পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরই মুনিরের কঠোর বক্তব্য দেশটির রাজনৈতিক মানচিত্রে প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধের হুমকি দিয়ে দেশের জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা চলছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এই সময়কালে মুনিরের উস্কানিমূলক বয়ান পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক মহলেও এই যুদ্ধের আগুন জ্বালানোর নিন্দা হচ্ছে, কিন্তু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এর প্রভাব প্রতিহত করা কঠিন।

সিন্ধু জল চুক্তি ও বাঁধ নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা

পহেলগাম হামলার পরে ভারত সিন্ধুজল চুক্তি বাতিল করায় উত্তেজনা বেড়েছে দুই দেশের মধ্যে। ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু নদীতে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা পাকিস্তানের জন্য বড় হুমকি। আসিম মুনির স্পষ্ট ভাষায় জানান, ‘আমরা ভারতের বাঁধ নির্মাণের জন্য অপেক্ষা করব, সেই বাঁধ শেষ হলেই আমরা ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে দেব।’ এই হুমকির মাধ্যমে তিনি জল সম্পদ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বকে নতুন রূপ দিয়েছেন।

রাশিয়ার তেল কেনার অজুহাত ও আমেরিকার শুল্ক

বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের অবস্থান নিয়ে উত্তেজনা থাকায় আমেরিকা ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। বিশেষ করে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতকে টার্গেট করা হয়েছে। এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান চেষ্টা করছে আমেরিকার নজরে ভালো ইমেজ গড়তে। সেনাপ্রধান মুনিরের বক্তব্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার ঘোষণা এই কৌশলগত প্রয়াসের অংশ বলে মনে হচ্ছে।

আমেরিকার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার কৌশল

মুনিরের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, পাকিস্তান বর্তমানে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করছে। ‘যারা ভালো কাজ করে, আমরা তাদের প্রশংসা করি’—এই মনোভাব প্রকাশ করে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে প্রশংসা করেছেন। তবে এই প্রশংসা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হলেও ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে আমেরিকার ভূমিকা এখনও অনিশ্চিত। পাকিস্তানের এমন কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দুই দেশের মধ্যকার জটিল সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব পায়।

 উত্তপ্ত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি

আসিম মুনিরের এই বক্তব্য এবং ভারতের বিরুদ্ধে হুমকির মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক উত্তেজনা আবারও বেড়ে উঠেছে। পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি ও জল সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব একদিকে যেমন অঞ্চলটির জন্য উদ্বেগজনক, অন্যদিকে এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি বড় নিরাপত্তা সংকটের ইঙ্গিত দেয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এখন কঠোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও সংলাপ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

Leave a comment