২৬/১১ মুম্বাই হামলার আসামি তাহাউর রানা: ISI ও লস্করের সঙ্গে সম্পর্ক স্বীকার

২৬/১১ মুম্বাই হামলার আসামি তাহাউর রানা: ISI ও লস্করের সঙ্গে সম্পর্ক স্বীকার

২৬/১১ হামলার আসামি তাহাউর রানা পাকিস্তানি সেনা, ISI এবং লস্করের সঙ্গে সম্পর্ক স্বীকার করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন এবং মুম্বাইয়ে রেকিও করেছিলেন। খুব শীঘ্রই গ্রেপ্তার হতে পারে।

তাহাউর রানা: ২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড, তাহাউর হোসেন রানা সম্প্রতি মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-এর কাছে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। রানা শুধু নিজেকে পাকিস্তানি সেনার এজেন্ট হিসাবে উল্লেখ করেননি, বরং লস্কর-ই-তৈয়বা এবং ISI-এর সঙ্গে তার সম্পর্কও স্বীকার করেছেন।

পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে সম্পর্ক এবং সৌদি আরব মিশন

জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাহাউর রানা স্বীকার করেছেন যে তিনি পাকিস্তানি সেনার একজন নির্ভরযোগ্য এজেন্ট ছিলেন। তিনি প্রকাশ করেছেন যে খালিজ যুদ্ধের সময় তাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে তিনি একটি গোপন মিশনে ছিলেন। এই স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে যে রানা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের গোয়েন্দা কার্যকলাপে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

লস্কর-ই-তৈয়বা: শুধু সন্ত্রাসী সংগঠন নয়, একটি গুপ্তচর নেটওয়ার্কও

রানা জানিয়েছেন যে লস্কর-ই-তৈয়বা কেবল একটি সন্ত্রাসী সংগঠনই নয়, এটি পাকিস্তানের জন্য একটি সুসংগঠিত গুপ্তচর নেটওয়ার্ক হিসাবেও কাজ করে। তিনি আরও স্বীকার করেছেন যে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডেভিড হেডলি লস্করের হয়ে বহুবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। হেডলির মাধ্যমেই মুম্বাই হামলার ষড়যন্ত্রগুলি সম্পন্ন করা হয়েছিল।

মুম্বাইয়ে ইমিগ্রেশন ফার্মের আড়ালে সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্র

তাহাউর রানা স্বীকার করেছেন যে তিনি মুম্বাইয়ে একটি ইমিগ্রেশন ফার্ম খোলার পরিকল্পনা করেছিলেন। এই ব্যবসার ব্যবহার করা হয়েছিল সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে আড়াল করার জন্য। রানা জানিয়েছেন যে কোম্পানির আর্থিক লেনদেনগুলি কেবল ব্যবসায়িক খরচ হিসাবে দেখানো হয়েছিল, যখন বাস্তবে এটি ছিল হামলার পরিকল্পনা এবং সমর্থন সম্পর্কিত।

ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসের রেকির স্বীকারোক্তি

জিজ্ঞাসাবাদে রানা স্বীকার করেছেন যে তিনি মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস সহ বেশ কয়েকটি স্থানে রেকি করেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল এই স্থানগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জনসমাগমের মূল্যায়ন করা যাতে সহজে হামলা চালানো যায়। এটি সেই স্থান ছিল যেখানে ২৬/১১ হামলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

ISI-এর ভূমিকা নিয়ে বড় প্রকাশ

রানা আরও স্বীকার করেছেন যে ২৬/১১ হামলার পুরো ষড়যন্ত্রটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ISI-এর সঙ্গে মিলে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি জানান যে হামলার প্রতিটি পর্যায়ে ISI-এর সমর্থন ছিল, তা পরিকল্পনা করা হোক বা সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক। এই প্রকাশের ফলে ভারতের বিরুদ্ধে ISI-এর কার্যকলাপ আরও স্পষ্ট হয়েছে।

রানার গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি নিচ্ছে মুম্বাই পুলিশ

NIA-এর জিজ্ঞাসাবাদের পর, মুম্বাই পুলিশ এখন রানাকে গ্রেপ্তার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুলিশের ধারণা, রানাকে হেফাজতে নিলে এই হামলার সঙ্গে জড়িত আরও অনেক তথ্য প্রকাশ হতে পারে। মুম্বাই পুলিশ তাকে তাদের হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি আইনিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ডেভিড হেডলির সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক

তাহাউর রানা এবং ডেভিড হেডলি একে অপরের খুব ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। আমেরিকায় থাকার সময় তাদের দেখা হয়েছিল এবং সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত থাকার সূচনা হয়েছিল। হেডলিও জিজ্ঞাসাবাদের সময় বহুবার রানার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে রানা তাকে ভারতে আসতে এবং হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন জুগিয়েছিলেন।

২৬/১১ হামলার পটভূমি

উল্লেখ্য, ২৬ নভেম্বর ২০০৮-এ, পাকিস্তান থেকে আসা ১০ জন সন্ত্রাসী সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ে প্রবেশ করে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা চালায়। এর মধ্যে ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস, হোটেল তাজ, হোটেল ওবেরয় এবং নরিম্যান হাউস-এর মতো স্থানগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলায় ১৬৬ জন নিহত হয়েছিল এবং কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছিল।

Leave a comment