৪০ বছরেও অধরা দেশীয় জেট ইঞ্জিন: তেজস-এর জন্য এখনও বিদেশি নির্ভরতা

৪০ বছরেও অধরা দেশীয় জেট ইঞ্জিন: তেজস-এর জন্য এখনও বিদেশি নির্ভরতা

ভারতের দেশীয় কাভেরি জেট ইঞ্জিন প্রকল্প ১৯৮৬ সালে শুরু হয়েছিল। এটি বিকাশের জন্য বড় স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, কিন্তু ৪০ বছর পরেও ভারতকে তেজস ফাইটার জেটের জন্য বিদেশি ইঞ্জিনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

নতুন দিল্লি: দেশীয় জেট ইঞ্জিন কাভেরি প্রকল্প ১৯৮৬ সালে শুরু হয়েছিল এবং এটি নিয়ে দেশে বড় স্বপ্ন দেখা হয়েছিল। কিন্তু ৪০ বছর পরেও ভারতকে জেট ইঞ্জিনের জন্য অন্য দেশগুলির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমেরিকান কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক (GE) সময়মতো ইঞ্জিন সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে ভারতীয় বিমানবাহিনীকে দেশীয় তেজস ফাইটার জেটের পরিচালনায় দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে।

এই সময়ে, কাভেরি প্রকল্পের খরচ গত চার দশকে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন এটি মূল অনুমানের ছয় গুণেরও বেশি হয়ে গেছে। এখনও স্পষ্ট নয় যে দেশের দেশীয় জেট ইঞ্জিন তৈরির স্বপ্ন কবে পূরণ হবে।

কাভেরি ইঞ্জিনের সাথে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ

কাভেরি ইঞ্জিন বিকাশে শুরু থেকেই অনেক প্রযুক্তিগত বাধা ছিল। প্রধান সমস্যাগুলি নিম্নরূপ:

  • থ্রাস্টের অভাব – ফাইটার জেটের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাভেরি ইঞ্জিন পর্যাপ্ত থ্রাস্ট সরবরাহ করতে পারেনি।
  • বেশি ওজন এবং তাপমাত্রা – ইঞ্জিনের ওজন বেশি ছিল এবং গরম হওয়ার সমস্যাও ক্রমাগত সামনে এসেছে।
  • শিল্প ক্ষমতার অভাব – ভারতে উপলব্ধ শিল্প সংস্থানগুলির সঠিক সমন্বয় এবং প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার হয়নি।

এই কারণগুলির জন্য কাভেরি ইঞ্জিন ১৯৭০-এর দশকে তৈরি বিদেশি ইঞ্জিনগুলির তুলনায় দুর্বল প্রমাণিত হয়েছে এবং তেজস জেটের জন্য আমেরিকান GE ইঞ্জিন ব্যবহার করতে হয়েছে।

বিদেশী সংস্থাগুলির সাথে সহযোগিতা সীমিত ছিল।

কাভেরি ইঞ্জিন প্রকল্পে ব্যবস্থাপনা এবং কৌশলগত সমন্বয়ের অভাবও ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে যদি প্রাথমিকভাবে সঠিক অংশীদারিত্ব এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর হত, তবে কাভেরি ইঞ্জিন ভারতের কাছে আরও শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য হতে পারত। ব্যক্তিগত খাত এবং দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলির সঠিক ব্যবহার করা যায়নি।

আমেরিকান F414 ইঞ্জিনের প্রায় ৮০% প্রযুক্তির সাহায্য পাওয়া গেছে, অন্যদিকে ফ্রান্সের Safran কোম্পানির কাছ থেকেও পঞ্চম প্রজন্মের নতুন ইঞ্জিনের জন্য সহযোগিতা চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে যদি প্রথম থেকেই কৌশল সঠিক হত তবে ভারতের কাছে আজ একটি শক্তিশালী দেশীয় জেট ইঞ্জিন থাকত।

কাভেরি ইঞ্জিনের বর্তমান এবং ভবিষ্যত

যদিও, কাভেরি ইঞ্জিন এখনও পর্যন্ত কেবল কয়েকটি টেস্ট ফ্লাইটের জন্য ব্যবহার করা গেছে। কিন্তু এর পরেও ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলিতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ভারত একটি নতুন স্টিলথ ড্রোন ‘ঘাতক’ তৈরি করছে। ড্রোনের জন্য ফাইটার জেটের তুলনায় কম শক্তিশালী ইঞ্জিনের প্রয়োজন হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে কাভেরি ইঞ্জিন ভবিষ্যতে উপযোগী প্রমাণিত হতে পারে।

অনেক সমালোচক মনে করেন যে যদি সম্পদ এইভাবে বিতরণ করা হয়, তবে মূল তেজস ইঞ্জিন প্রকল্প আরও বেশি বিলম্বিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এবং আশাবাদীরা মনে করেন যে কাভেরি ইঞ্জিন দেশীয় প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করেছে।

Leave a comment