জাতীয় দলে ডাক পেয়েও অভিষেকের স্বপ্ন অপূর্ণ
২০২১-২২ মরশুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ফলস্বরূপ জাতীয় দলের ডাক পেয়েছিলেন বাংলার ওপেনার অভিমন্যু ঈশ্বরন। প্রথমবারের মতো নীল জার্সির দলে থাকা সত্ত্বেও সেই মৌসুমেই বা তার পরে প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি তাঁর। একাধিক সিরিজে ১৬ জনের স্কোয়াডে জায়গা মিললেও মাঠে নামার সুযোগ থেকে গিয়েছিল অধরা। ফলে ভারতের ‘এ’ দলে খেলা, অনুশীলন আর বেঞ্চ গরম করেই কেটে গেছে এই দীর্ঘ সময়।
অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফিতেও একই চিত্র
সদ্য সমাপ্ত অ্যান্ডারসন তেন্ডুলকর ট্রফিতেও দেখা গেল একই দৃশ্য। অভিমন্যু ঈশ্বরন, কুলদীপ যাদব ও অর্শদীপ সিং — তিনজনের কাউকেই প্রথম একাদশে দেখা যায়নি একটিও ম্যাচে। যদিও অর্শদীপ ও কুলদীপের বাইরে থাকার কারণ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে ক্রিকেট মহলে, অভিমন্যুর নাম যেন হারিয়ে গিয়েছিল সেই বিতর্কের ভিড়ে।
সংখ্যার হিসাবে পিছিয়ে পড়া
অভিমন্যুর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে হিসেব বলছে—এখন পর্যন্ত ১৫ জন ক্রিকেটারের অভিষেক হয়ে গেছে। এই তালিকায় কেএস ভরত, যশস্বী জয়সওয়াল, সূর্যকুমার যাদব, ঈশান কিষান, রজত পতিদার, সরফরাজ খান, ধ্রুব জুরেল ও নীতীশ কুমার রেড্ডির মতো নাম রয়েছে। এমনকি অনেকেরই জায়গা হয়েছে টেস্টে বা ওয়ান ডেতে, কিন্তু অভিমন্যু থেকে গেছেন অপেক্ষার তালিকায়। বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার অবসর-পরবর্তী সময়ে সুযোগ আসবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু সেটাও বাস্তব হয়নি।
সৌরভের বিশ্বাস—সময় এখনও শেষ হয়নি
কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে অভিমন্যুর প্রসঙ্গে মুখ খুললেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক ও বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ওর বয়স আছে, আমি বিশ্বাস করি অভিমন্যুর সুযোগ রয়েছে। যশস্বী জয়সওয়াল, কেএল রাহুল, শুবমান গিল, ঋষভ পন্থ, রবীন্দ্র জাডেজা — সবাই রানের মধ্যে রয়েছে। শুধু টেস্টে তিন নম্বর জায়গাটা টলমল। আমার মতে অভিমন্যুকে সেখানে খেলানো দরকার।” সৌরভের এই মন্তব্যে স্পষ্ট, অভিমন্যুর জন্য দরজা এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি।
প্রতিযোগিতা তীব্র, তবে সুযোগ আসতে পারে
ভারতীয় দলে ওপেনার ও মিডল অর্ডারে এখন প্রতিযোগিতা চরমে। যশস্বী, গিল, রাহুল, সূর্যকুমার—প্রত্যেকেই নিয়মিত ভালো করছেন। ফলে নতুন কাউকে জায়গা দিতে হলে প্রমাণ করতে হবে নিজেকে অতুলনীয়ভাবে। তবে সৌরভের বক্তব্যে একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত—টেস্ট দলে তিন নম্বরে অনিশ্চয়তা এখনও রয়েছে, যা অভিমন্যুর জন্য বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।
দলীপ ট্রফি—নতুন করে প্রমাণের মঞ্চ
আগামী দলীপ ট্রফিতে অভিমন্যুর খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে ব্যাট হাতে বড় রান পেলে জাতীয় নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার সুযোগ মিলতে পারে। সৌরভও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই টুর্নামেন্টই হতে পারে অভিমন্যুর জন্য সেই মঞ্চ যেখানে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে প্রথম একাদশে জায়গা আদায় করা সম্ভব।
সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ
দলীপ ট্রফির পর ভারত খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ। এই দুটি সিরিজে সিনিয়র প্লেয়ারদের বিশ্রাম বা রোটেশন নীতি কার্যকর হলে অভিমন্যুর ডাক পড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বিশেষত বিদেশি মাটিতে ওপেনার হিসেবে তাঁর দৃঢ় টেকনিক এবং ধৈর্য্য জাতীয় দলের জন্য কাজে লাগতে পারে।
সমর্থকদের প্রত্যাশা এখনও অটুট
বাংলা ক্রিকেটপ্রেমীরা এখনও আশা হারাননি অভিমন্যুর প্রথম একাদশে অভিষেক দেখা নিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বহুবার বড় রান করে তিনি প্রমাণ করেছেন নিজের মান। ফলে প্রশ্ন উঠছে—আর কতদিন অপেক্ষা? সৌরভের বক্তব্যে আশা জেগেছে, হয়তো খুব শিগগিরই জাতীয় দলের হয়ে তাঁকে সাদা পোশাকে দেখা যাবে।