অভিষেক–কল্যাণ বৈঠকে তৃণমূলের অন্দরে নতুন সমীকরণের গন্ধ

অভিষেক–কল্যাণ বৈঠকে তৃণমূলের অন্দরে নতুন সমীকরণের গন্ধ

দলের ভেতরে সক্রিয়তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ কর্মসূচিতে সক্রিয় উপস্থিতি—সবদিকেই অভিষেক দিয়েছেন পরিষ্কার বার্তা। ঘণ্টা দেড়েকের এই বৈঠক তৃণমূলের অন্দরে নতুন জল্পনার আগুনে যেন আরও ঘি ঢেলে দিল।

সচেতক পদ ছাড়ার নেপথ্যের ঘটনা

কিছুদিন আগে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ থাকায়, লোকসভায় দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন অভিষেককে। সেই বৈঠকেই সাংসদদের সমন্বয়ের অভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলনেত্রী। এর পরই সচেতকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন কল্যাণ। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, এই পদত্যাগ শুধুই সাংগঠনিক বার্তা নয়, বরং দলের ভিতরে চলা অস্বস্তিরই প্রতিফলন।

ফোনালাপ থেকে বৈঠকের প্রস্তুতি

সচেতক পদ ছাড়ার দিনই অভিষেককে ফোন করেছিলেন কল্যাণ। অভিষেক তখনই জানিয়েছিলেন, দিল্লিতে গেলে সাক্ষাৎ করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি রাখলেন তৃণমূলের দ্বিতীয় শীর্ষনেতা—বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লিতে ঘনিষ্ঠ আলোচনায় বসলেন দু’জনে। দলের শীর্ষ মহলের মতে, এই বৈঠক শুধু সমঝোতার প্রয়াস নয়, বরং সাংসদদের দলীয় কর্মসূচিতে ফের সক্রিয় করার কৌশলও।

অভিষেকের স্পষ্ট বার্তা

বৈঠকে অভিষেক সাফ জানিয়েছেন—দলের সব কর্মসূচিতে থাকতে হবে কল্যাণকে, এবং নতুন সচেতক কাকলি ঘোষদস্তিদার ও ডেপুটি লিডার শতাব্দী রায়ের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। দলের কোনও নেতা বা নেত্রীকে নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য না করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। তৃণমূল সূত্র বলছে, এই শর্তাবলিই মূলত কল্যাণের সক্রিয়তা ফেরানোর চাবিকাঠি।

কল্যাণের প্রতিশ্রুতি ও সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া

অভিষেকের নির্দেশ মেনে কল্যাণ জানিয়েছেন, তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া—"খুব ভালো আলোচনা হয়েছে, সব বিষয়েই কথা হয়েছে, অভিষেক আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন।" রাজনৈতিক মহলের মতে, এই মন্তব্যে আপাতত দ্বন্দ্ব প্রশমনের ইঙ্গিত থাকলেও পুরো সমীকরণ এখনও স্থায়ী হয়নি।

সক্রিয়তার অভাব নিয়ে ক্ষোভ

লোকসভায় সচেতকের পদ ছাড়ার পরপরই অভিষেক প্রায় ৯,০০০ নেতা–কর্মীকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন, যেখানে অনুপস্থিত ছিলেন কল্যাণ। সংসদ ভবনের বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতেও তাঁর অনুপস্থিতি দলের একাংশের অসন্তোষ বাড়িয়েছে। এই প্রেক্ষিতে দিল্লির বৈঠককে তৃণমূলের সাংগঠনিক ঐক্য ফেরানোর বড় পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

Leave a comment