গরমে এসি চালিয়ে গলদঘর্ম অথচ বাতাস নয় বেরোচ্ছে গরম ভাব!

গরমে এসি চালিয়ে গলদঘর্ম অথচ বাতাস নয় বেরোচ্ছে গরম ভাব!

গ্রীষ্মের ভরদুপুরে এসি ছাড়া জীবন অচল। কিন্তু হঠাৎ যদি দেখা যায় এসি ঠান্ডা না দিয়ে গরম বাতাস ফেলছে?

এটা শুধু অস্বস্তিকর নয়, একেবারে যন্ত্রপাতির মারাত্মক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যার পেছনে মূল কারণ—এসি ইউনিটে বরফ জমে যাওয়া। ঠিক ফ্রিজের মতোই, এসির কয়েল বা পাইপলাইনের মধ্যে জমতে থাকে বরফের স্তর, যা ঠান্ডা বাতাসের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে। তাই এই পরিস্থিতি এড়াতে বরফ জমার কারণ এবং প্রতিকার জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রেফ্রিজারেন্ট কম? সতর্ক না হলে ঠান্ডা হবে কম, খরচ হবে বেশি!

যদি এসিতে পর্যাপ্ত রেফ্রিজারেন্ট না থাকে, তবে কুলিং কয়েলগুলি অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে বরফ তৈরি করে।ফলে বাতাস সেই কয়েলের সংস্পর্শে এসে জমাট বাঁধে, এবং এক সময় সম্পূর্ণ ভাবে বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে শুধু এসি ঠান্ডা করা বন্ধ করে দেয় তা-ই নয়, কম্প্রেসরেও ব্যাপক চাপ পড়ে, ফলে যন্ত্রের আয়ু কমে যেতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, রেফ্রিজারেন্টের লেভেল কম হলে তা অবিলম্বে রিফিল করানো উচিত, না হলে বিপদের ঝুঁকি থেকেই যাবে।

নোংরা ফিল্টার, বন্ধ ভেন্ট—দম বন্ধ হয়ে বরফ জমতে বাধ্য!

এসির ভেতরের ফিল্টার যদি সময়মতো পরিষ্কার না করা হয়, কিংবা ভেন্টের সামনে কোনও বাধা থাকে, তবে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়।বায়ুপ্রবাহ কমে গেলে কয়েলগুলোর চারপাশে তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায় এবং জলীয় বাষ্প জমে বরফ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া বারবার চললে এসি ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে। তাই বাড়িতে নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার রাখা এবং ভেন্ট ফাঁকা রাখাই সঠিক কুলিংয়ের একমাত্র উপায়।

থার্মোস্ট্যাটের ভুল সেটিং নষ্ট করছে এসির ভেতরের ভারসাম্য!

অনেক সময় থার্মোস্ট্যাট ঠিকভাবে কাজ না করলে এসি অনবরত চলে এবং অপ্রয়োজনে কুলিং কয়েল জমে যায়।যখন তাপমাত্রা ঠিকমতো মাপা যায় না, তখন এসি বন্ধ হওয়ার বদলে অনবরত কাজ করতে থাকে। এতে কয়েল অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে বরফ তৈরি করে। তাই নিয়মিত থার্মোস্ট্যাট পরীক্ষা এবং ক্যালিব্রেশন প্রয়োজন, যাতে তাপমাত্রার নির্ভুল নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।

বাতাসে আর্দ্রতা বেশি? সাবধান! বরফ জমতে সময় লাগবে না

উচ্চ আর্দ্রতা মানেই কয়েলে জলীয়বাষ্প জমে জমে বরফ হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ।বিশেষ করে বর্ষাকালে অথবা যেসব এলাকায় বাতাস স্যাঁতসেঁতে, সেখানে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বাতাস ঠান্ডা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলীয়বাষ্প জমে বরফে পরিণত হয়। এর প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে ডিহিউমিডিফায়ার কিংবা নিয়মিত ইনডোর সার্কুলেশন যাতে ঘর শুষ্ক থাকে এবং এসির উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসি হচ্ছে অকেজো, সার্ভিসিং জরুরি

প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তত একবার এসি সার্ভিস করান—এই অভ্যাস জীবন বাঁচাতে পারে যন্ত্রের!রেফ্রিজারেন্ট লেভেল ঠিক আছে কি না, ফিল্টার পরিষ্কার কি না, কয়েল ময়লা জমে আছে কি না—এসব নিয়মিত না দেখলে এসির ওপর চাপ পড়ে। নিয়মিত সার্ভিসিং কেবল বরফ জমা প্রতিরোধ করে না, বরং এসির কুলিং ক্ষমতা ঠিক রাখে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করে।

ফিল্টার বদলান সময়মতো, নচেত ঠান্ডা বাতাসের রাস্তা বন্ধ!

নোংরা ফিল্টার কেবল কুলিং কমায় না, ইলেকট্রিক বিলও বাড়িয়ে দেয়।মাসে অন্তত একবার ফিল্টার চেক করুন এবং বেশি ময়লা হলে পরিবর্তন করুন। ফিল্টার পরিষ্কার থাকলে বায়ুপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে এবং এসির কার্যকারিতা বহাল থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই বরফ জমার মূলে থাকে শুধু একটি অবহেলিত ফিল্টার!

ভেন্টের সামনে কিছু আছে? অবিলম্বে সরান!

ভুল স্থানে পর্দা, সোফা বা আলমারি রাখলে বায়ুপ্রবাহ আটকে যায়, এবং তাতেই কয়েল জমে বরফ!ভেন্টের সামনে বড় ফার্নিচার বা মোটা কাপড় থাকলে ঠান্ডা বাতাস ঠিকভাবে ঘরে ছড়াতে পারে না। ফলে ফিরে আসে অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস এবং এতে কয়েল জমাট বাঁধে। কাজেই ভেন্টের সামনে জায়গা ফাঁকা রাখা একান্ত দরকার।

ইনসুলেশন ঠিক না থাকলে ঠান্ডা বাইরে, বরফ ভেতরে

তাপমাত্রার তারতম্য বাড়লে এসির কয়েল তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে বরফ জমতে পারে।জানালার ফাঁক, দরজার চিলেকোঠা দিয়ে যদি বাইরের উষ্ণতা ভেতরে প্রবেশ করে, তাহলে এসিকে বেশিক্ষণ কাজ করতে হয়। ফলে সিস্টেমে চাপ পড়ে এবং বরফ জমে। তাই ইনসুলেশন ঠিকঠাক রাখতে পারলেই এক ধাক্কায় অনেক সমস্যার সমাধান হয়।

থার্মোস্ট্যাট কমে সেট করলেই ঠান্ডা বেশি নয়, বরং বরফ জমে

অনেকে ঠান্ডা বেশি চেয়ে থার্মোস্ট্যাট খুব নিচে নামিয়ে দেন, ফল উল্টো!কম তাপমাত্রা মানেই অতিরিক্ত কুলিং, ফলে কয়েল দ্রুত ঠান্ডা হয়ে বরফ জমে। পরিবর্তে এমন তাপমাত্রা সেট করুন যাতে ঘর আরামদায়ক থাকে, কিন্তু যন্ত্রের উপর চাপ না পড়ে। এতে করে যেমন বিল কমবে, তেমনই যন্ত্র দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।

ঘরের আর্দ্রতা কমাতে ব্যবহার করুন ডিহিউমিডিফায়ার

এয়ার কন্ডিশনারের কাজ সহজ করতে ঘরকে আগে শুকনো করুন।ডিহিউমিডিফায়ার বাতাসের অতিরিক্ত আর্দ্রতা শুষে নেয়, ফলে এসিকে অতিরিক্ত ঠান্ডা হতে হয় না। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বর্ষাকাল দীর্ঘ, সেখানে এটি ব্যবহার করলে বরফ জমার আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পায়।

Leave a comment