আগ্রা-বরেলী গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে: উত্তর প্রদেশে দ্রুতগতির যোগাযোগের নতুন দিগন্ত

আগ্রা-বরেলী গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে: উত্তর প্রদেশে দ্রুতগতির যোগাযোগের নতুন দিগন্ত

উত্তর প্রদেশের বাসিন্দারা শীঘ্রই ভ্রমণে বড় সুবিধা পেতে চলেছেন। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (NHAI) আগ্রা থেকে বরেলী পর্যন্ত একটি গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করছে। এই প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ২২৮ কিলোমিটার এবং এর আনুমানিক খরচ প্রায় ৭৭০০ কোটি টাকা।

এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হওয়ার পরে মথুরা, হাথরাস, কাসগঞ্জ, বদায়ুঁ-র মতো শহরগুলি আগ্রা এবং বরেলীর সঙ্গে দ্রুত এবং সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারবে। বর্তমানে এই পথটি অতিক্রম করতে প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে, কিন্তু ২০২৭ সালের মধ্যে এটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এই পথটি মাত্র আড়াই ঘণ্টায় অতিক্রম করা সম্ভব হবে।

প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে মথুরা থেকে হাথরাস পর্যন্ত অর্ধেক রাস্তা তৈরি হয়েছে

এই গ্রিন করিডরটি চারটি পর্যায়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে মথুরা থেকে হাথরসের মধ্যে ৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। আধিকারিকদের মতে, এই অংশের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং কিছু অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে মথুরা এবং হাথরসের মধ্যে যাত্রীরা সরাসরি এবং আরও ভালো রাস্তা পাচ্ছেন। নির্মাণে গুণমান এবং গতি উভয়ের দিকেই বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এই রাস্তাটি টেকসই এবং সুগম থাকে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে হাথরাস থেকে কাসগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তার ৩০ শতাংশ নির্মাণ সম্পন্ন

গ্রিন করিডরের দ্বিতীয় পর্যায়ে হাথরাস থেকে কাসগঞ্জ পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এই অংশের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, এই অংশটি এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ করা হবে।

এই অংশে বেশ কয়েকটি গ্রামীণ এবং শহরতলী এলাকাও নতুন সংযোগ পাবে, যার ফলে বাণিজ্য, যাতায়াত এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হবে।

পরবর্তী পরিকল্পনা: কাসগঞ্জ থেকে বদায়ুঁ এবং তারপর বরেলী পর্যন্ত

প্রকল্পের পরবর্তী পর্যায়ে কাসগঞ্জ থেকে বদায়ুঁ পর্যন্ত ৪৬ কিলোমিটার এবং বদায়ুঁ থেকে বরেলী পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে। এই দুটি সেকশনেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে।

এই নতুন করিডরটি শহরগুলির মধ্যে সরাসরি রাস্তার বিকল্প তৈরি করবে, যা ভারী যানবাহন এবং সাধারণ যাত্রী উভয়ের জন্যই উপকারী হবে। মানুষকে বারবার শহরের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না এবং যানজট থেকেও মুক্তি মিলবে।

২০টি ফ্লাইওভার এবং ২৬টি আন্ডারপাসের মাধ্যমে যানজটমুক্ত যাত্রা

আগ্রা-বরেলী গ্রিন করিডরকে সম্পূর্ণভাবে হাইস্পিড এবং সুবিধাজনক করার প্রস্তুতি চলছে। এই পুরো প্রকল্পে মোট ২০টি ফ্লাইওভার, ২৬টি আন্ডারপাস, ৫টি বড় সেতু এবং ৬টি রেল ওভার ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে। এই কাঠামো road-এর ওপর ট্র্যাফিককে না থামিয়ে চলতে সাহায্য করবে।

ফ্লাইওভার এবং আন্ডারপাসগুলি সেইসব জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে যেখানে যান চলাচলের চাপ বেশি থাকে বা রেললাইন গেছে। এর ফলে সাধারণ যাত্রীরা কোনো বাধা ছাড়াই ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা পাবেন।

কৃষক এবং স্থানীয় মানুষরাও উপকৃত হবেন

এই গ্রিন করিডর শুধু যাত্রীদের জন্যই নয়, রাস্তার আশেপাশে বসবাসকারী গ্রাম ও কৃষকদের জন্যও উপকারী হবে। রাস্তার উভয় পাশে বাজার, গুদাম এবং পরিবহন সুবিধা তৈরি করা হবে, যা কৃষি পণ্য পরিবহনে সুবিধা দেবে। অনেক কৃষক জানিয়েছেন যে, আগে ফসল বাজারে নিয়ে যেতে কয়েক ঘণ্টা লাগত, কিন্তু এখন রাস্তা তৈরি হওয়ার ফলে সময় এবং খরচ দুটোই বাঁচবে।

মথুরা, হাথরাস, কাসগঞ্জ, বদায়ুঁ এবং বরেলীর মতো জেলাগুলির মধ্যে এই গ্রিন করিডর নতুন শিল্প এবং লজিস্টিক হাবের বিকাশের সম্ভাবনাও নিয়ে আসছে। এনএইচএআই জানিয়েছে যে, রাস্তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভবিষ্যতে রেস্ট এরিয়া, পেট্রোল পাম্প, টোল প্লাজা এবং অন্যান্য সুবিধাও তৈরি করা হবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশা করছেন যে, এই রাস্তার কারণে পর্যটন, বাণিজ্য এবং চাকরির সুযোগ বাড়বে, কারণ এখন ভ্রমণ কম সময়ে এবং আরামদায়ক হবে।

প্রকল্পে গতি, ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার আশা

এনএইচএআই-এর আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, প্রকল্পটিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের অগ্রগতি দেখে আধিকারিকরা আশা করছেন যে, এই প্রকল্পটি ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

বদায়ুঁ সেকশনে কর্মরত এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে, হাথরাস-কাসগঞ্জ সেকশনের পরবর্তী পর্যায়ের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সম্পদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Leave a comment