ছেলের সরকারি চাকরি দেখে পাত্রী ঠিক, ধুমধাম বিয়েও হল
আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা রোডের দক্ষিণ মজিদখানার এক যুবক, যিনি সরকারি চাকরিরত, তাঁর সঙ্গেই বিয়ের জন্য পাত্রী বেছে নিয়েছিলেন যশোডাঙার বিশ্বাসপাড়ার এক পরিবার। বৃহস্পতিবার রাতে সমস্ত নিয়ম-রীতি মেনে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়, চার হাত এক করে দেওয়া হয়। সকলেই ভাবছিলেন, স্বপ্নের মতো মসৃণভাবেই শেষ হবে এই নতুন যাত্রা। কিন্তু শুক্রবার দুপুরেই ঘটল চমক, যা গোটা পরিবারে বয়ে আনল ঘোর অন্ধকার।
‘বৌ’ সাজতে গিয়েই বেপাত্তা, রহস্য বাড়াল বিউটি পার্লার যাত্রা
শুক্রবার ছিল বাসি বিয়ের পর্ব, আর তার আগে ফের নতুন করে সাজতে চাইলেন নববধূ। পরিবারের তরফে ভাই তাঁকে নিয়ে যান এলাকার একটি পার্লারে। দুপুর আড়াইটার সময় সেখানেই পৌঁছন তাঁরা। এরপর ভাইকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে ভিতরে ঢোকেন ওই তরুণী। দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও যখন তিনি বাইরে বেরোলেন না, সন্দেহ দানা বাঁধে। পরে দেখা যায়, বিউটি পার্লার থেকেও বেরিয়ে গেছেন তিনি, আর খোঁজ নেই। তড়িঘড়ি খোঁজ শুরু হলেও, সন্ধান মেলেনি পাত্রীটির।
মুখ থুবড়ে পড়ল বিয়েবাড়ি, প্যান্ডেলের মাঝেই নিঃশব্দ কান্না
পাত্রের পরিবারের কাছে শুক্রবারের বিকেল থেকে রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। শোনা গিয়েছে, রবিবারের জন্য বড় প্যান্ডেল করা হয়েছিল বৌভাত উপলক্ষে। অতিথিদের ভোজন থেকে শুরু করে সমস্ত আয়োজন ছিল বিশাল। প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল পাত্রপক্ষের তরফে। কিন্তু যাঁর জন্য এত আয়োজন, তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় থমকে গেল গোটা বাড়ি। আনন্দ-উৎসব মুহূর্তে বিষাদে বদলে যায়।
“ও পালিয়ে গিয়েছে?” – সমাজের প্রশ্নে বিদ্ধ পাত্রপক্ষ
এই ঘটনায় উঠছে নানারকম প্রশ্ন। পাত্রের বাবার বক্তব্য, অনেকে বলছেন ও নিজের ইচ্ছেতেই পালিয়ে গিয়েছে। আমরা তা নিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু যদি বিয়েতে মত না থাকত, তা আগেই জানানো যেত। এখন সমাজের সামনে মুখ দেখানোই কঠিন হয়ে উঠেছে। তাঁর আরও সংযোজন, "আমরা টাকার অপচয় নিয়ে ভাবছি না, চাই শুধু ও ভালো থাকুক।
পুলিশে মিসিং ডায়েরি, তদন্তে নেমেছে শামুকতলা থানার পুলিশ
ওই তরুণীর পরিবার ইতিমধ্যেই শামুকতলা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করেছে। থানার অফিসার ইনচার্জ বিশ্বজিৎ দে জানিয়েছেন, "মেয়েটির খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কোথায় এবং কী কারণে নিখোঁজ হয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।" আপাতত পুলিশ সমস্ত সম্ভাবনার দিক খতিয়ে দেখছে—চলেছে মোবাইল ট্র্যাকিংও।
প্রেমঘটিত কোনও টানাপোড়েন? নাকি পারিবারিক চাপ? তদন্তে একাধিক দিক
সূত্রের খবর, মেয়েটি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কি না, কিংবা আগে থেকেই পালানোর পরিকল্পনা ছিল কি না, এসবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনকী প্রেমঘটিত কোনও সম্পর্ক ছিল কি না, সেদিকেও নজর রেখেছে পুলিশ। পরিবারের দাবি, মেয়েটি এমন কাজ করবে তা কখনও কল্পনাও করেননি তাঁরা। অন্যদিকে, পাত্রপক্ষ চাইছে—অন্তত তাঁদের অপমানে যেন ঘি না পড়ে।
সাজঘরে সাজ, আর তারপর রহস্য! বৌমার হদিশে দিন গুনছে দুই পরিবার
একদিকে একমাত্র মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে অসহায় বাবা-মা, অন্যদিকে পুত্রবধূ হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পাত্রের পরিবার—উভয় পরিবারই এখন দিন গুনছে মেয়েটির সন্ধানে। বিয়ের পর এত বড় ধাক্কা পরিবারে চিরকালীন রক্তাক্ত স্মৃতি হয়ে থাকবে বলেই মনে করছে সকলে।নিখোঁজ পাত্রী নিজের ইচ্ছেতেই গায়েব হয়েছেন নাকি ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে অন্য কিছু—তা স্পষ্ট হবে তদন্তেই। তবে এই ঘটনা ফের একবার মনে করিয়ে দিল, বিয়ে শুধু সম্পর্ক নয়, তা অনেক দায়িত্ব, আর অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত জীবনে নামিয়ে আনতে পারে তীব্র ঝড়।