ইলাহাবাদ হাইকোর্ট সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর একটি গুরুতর মামলায় অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আদালত স্পষ্ট করে বলেছে যে ডিজিটাল প্রযুক্তি এখন অপরাধের একটি নতুন এবং ভয়ংকর রূপ নিয়েছে, যেখানে ভাইরাল হওয়া অশ্লীল ছবি ও ভিডিওগুলি কেবল কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে না, বরং ভুক্তভোগীর জীবনও ধ্বংস করতে পারে।
বিচারপতি অজয় ভনোট হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এক মহিলার আপত্তিকর ছবি ভাইরাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত রামদেবের জামিনের আবেদন খারিজ করে বলেন, এই ধরনের মামলায় পুলিশের অত্যন্ত কঠোর মনোভাব নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, এই ধরনের অপরাধের মোকাবিলায় আইনের প্রতিটি উপাদানের ব্যবহার করা উচিত, যাতে সমাজে একটি স্পষ্ট এবং শক্তিশালী বার্তা যায় যে এই ধরনের কাজ বরদাস্ত করা হবে না।
ফরেনসিক তদন্ত এখনও মুলতুবি
মামলার শুনানির সময় আদালতকে জানানো হয় যে রামদেবের কাছ থেকে মহিলার কিছু আপত্তিকর ছবি উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলির ফরেনসিক তদন্ত এখনও মুলতুবি রয়েছে। আদালত এই তথ্যগুলিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে মন্তব্য করেছে যে এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্তের সম্ভাব্য জড়িত থাকার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না, তাই তাকে জামিন দেওয়া যেতে পারে না।
শুধু তাই নয়, আদালত ট্রায়ালের তত্ত্বাবধানের জন্য জেলা জজকে নির্দেশ দিয়েছে যে তিনি প্রতি সপ্তাহে মামলার অগ্রগতির রিপোর্ট নেবেন, যা নিশ্চিত করবে যে ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দিতে কোনো দেরি না হয়। আদালত জোর দিয়ে বলেছে যে এই ধরনের মামলায় বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এবং কার্যকর হওয়া উচিত।
FSL-কে দু মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ
হাইকোর্ট ফরেনসিক বিজ্ঞান পরীক্ষাগার (FSL)-কে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেছে যে তারা দু মাসের মধ্যে সমস্ত প্রযুক্তিগত প্রমাণ পরীক্ষা করে ট্রায়াল কোর্টে রিপোর্ট পেশ করবে। আদালত স্পষ্ট করেছে যে এই ধরনের সংবেদনশীল মামলায় তদন্তে দেরি ন্যায়বিচারে বাধা সৃষ্টি করে এবং ভুক্তভোগীর মানসিক কষ্ট আরও বাড়িয়ে তোলে।
আদালত আরও যোগ করেছে যে সময়মতো তদন্ত ছাড়া অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়া কঠিন হতে পারে, তাই সমস্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দ্রুত এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন
এই প্রথম নয় যখন বিচারপতি অজয় ভনোট সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের উপর কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ২০২৩ সালেও তিনি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া অশ্লীল কনটেন্টকে সমাজের জন্য অপমানজনক এবং ধ্বংসাত্মক বলেছিলেন। সেই সময়েও তিনি উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তদন্ত পদ্ধতির উপর প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং বলেছিলেন যে সাইবার অপরাধের তদন্তে গভীরতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব রয়েছে।
তিনি পুলিশের কাছে প্রত্যাশা করেছিলেন যে এই ধরনের সংবেদনশীল মামলাগুলিতে তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি মানবিক সংবেদনশীলতাও রাখতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা থাকে।
মামলাটি কী?
রামদেবের বিরুদ্ধে প্রয়াগরাজের উত্রাও থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধি (BNS) এর ধারা ৭৪, ৩৫২, ৩৫১(২), ৬৪(১) এবং আইটি অ্যাক্টের ধারা ৬৭A-এর অধীনে মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তকে ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তিনি সেই থেকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। এর আগে, ২৩ এপ্রিল ট্রায়াল কোর্ট তার জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দ্রুতগতিতে বেড়ে চলা অপরাধের উপর হাইকোর্টের এই মন্তব্য শুধু আইনশৃঙ্খলার জন্য একটি সতর্কবার্তা নয়, সমাজের জন্যও একটি বার্তা যে ইন্টারনেটের স্বাধীনতার অপব্যবহার আর সহ্য করা হবে না। আদালত যে কঠোরতা ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে এই মামলাটি পরিচালনা করেছে, তা ভবিষ্যতে এই ধরনের মামলার জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।