আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান শনিবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হচ্ছে অভিনব পরিষেবা প্রকল্প নজরদারি করবেন সিনিয়র আইএএস অফিসাররা

আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান শনিবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হচ্ছে অভিনব পরিষেবা প্রকল্প নজরদারি করবেন সিনিয়র আইএএস অফিসাররা

নতুন উদ্যোগ, নতুন দায়িত্ব—শনিবার থেকে শুরু 'আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান'

আগামী ২ অগস্ট, শনিবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হতে চলেছে রাজ্য সরকারের বহুল প্রতীক্ষিত নতুন প্রকল্প ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে রাজ্য সরকার একপ্রকার কোমর বেঁধে নামছে এই প্রকল্প সফল করতে। 'দুয়ারে সরকার'-এর ছায়াতেই গড়ে উঠেছে এই কর্মসূচি, যার মূল উদ্দেশ্য স্থানীয় স্তরের সমস্যা সরাসরি সমাধান করা, জনসংযোগ বাড়ানো এবং রাজ্য প্রশাসনের উপর মানুষের আস্থা দৃঢ় করা।

তিন বুথে একটি শিবির, প্রশাসনের বিশেষ নির্দেশ

প্রত্যেক তিনটি বুথ নিয়ে একটি করে শিবির আয়োজিত হবে এই প্রকল্পের অধীনে। স্থানীয় প্রশাসন এই শিবিরগুলির আয়োজন করবে নিয়মিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক সপ্তাহ আগেই এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন এবং ইতিমধ্যেই মাঠে নামতে শুরু করেছে ব্লক প্রশাসন থেকে জেলা স্তরের আধিকারিকরা।

১৫টি অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ—রাস্তাঘাট থেকে বাজার, সব কিছুতেই নজর

‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির অধীনে রাজ্য সরকার ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাকে অগ্রাধিকার হিসেবে বেছে নিয়েছে। রাস্তাঘাট সংস্কার, নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়ন, পরিষ্কার জল সরবরাহ, এলাকা ভিত্তিক স্ট্রিট লাইট বসানো, বুথভিত্তিক শৌচাগার নির্মাণ, আইসিডিএস কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়ন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির মেরামতি ও উন্নয়ন, পুকুর সৌন্দর্যায়ন, ঘাট সংস্কার, বাজারগুলির ভৌত কাঠামো উন্নয়ন—এই সবই এবার দ্রুত সমাধানের পথে।

এক বুথে ১০ লক্ষ টাকা, বরাদ্দ ছাড়াল ৮ হাজার কোটি

মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করেছেন, প্রতিটি বুথের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ থাকবে এই প্রকল্পে। অর্থাৎ রাজ্যজুড়ে কয়েক হাজার বুথের জন্য ইতিমধ্যেই বরাদ্দ হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কোনও বুথে যদি অতিরিক্ত সমস্যার কথা উঠে আসে, তবে তা-ও দ্রুত সমাধান করতে হবে—নবান্নের তরফে পরিষ্কার নির্দেশিকা জারি হয়েছে এই নিয়ে।

নজরদারিতে ৪০ জন সিনিয়র আইএএস অফিসার, একাধিক দফতরের প্রধানরাও যুক্ত

এই প্রকল্প যাতে খোলসা ছাড়াই বাস্তবে রূপায়িত হয়, সেজন্য নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের ৪০ জন শীর্ষ আইএএস অফিসারকে। তাঁরা প্রত্যেকে একেকটি মহকুমা ধরে ধরে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের অগ্রগতি নজরে রাখবেন। জেলা শাসকদের দেবেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ। একাধিক দফতরের প্রধান সচিব ও অতিরিক্ত প্রধান সচিবদেরও মাঠে নামানো হয়েছে এই কর্মসূচি দেখভালের জন্য।

জনসংযোগ বাড়িয়ে ভোটের আগে জনমানসে প্রভাব, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে ‘স্ট্র্যাটেজিক’ উদ্যোগ

রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটের আগে এই ধরনের গণসংযোগমুখী পরিষেবা প্রকল্পের মাধ্যমে জনমানসে সরকারের উপস্থিতি ও সক্রিয়তা বোঝাতে চাইছে শাসকদল। ‘দুয়ারে সরকার’ যেভাবে পূর্ববর্তী সময়ে জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিল, তেমনই এ বার ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’-এর মাধ্যমেও একই ধরনের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার আশা করছে নবান্ন।

চেষ্টা থাকবে এক জায়গায় সব পরিষেবা—মানুষকে হেলদোল না করে সমস্যার সমাধান দেওয়াই মূল লক্ষ্য

এই প্রকল্পে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে শিবিরে একসঙ্গে বহু পরিষেবার সমাহার থাকবে। রাস্তা-নালা বা বিদ্যুৎ সমস্যা হোক কিংবা সরকারি প্রকল্পের আবেদন, সব বিষয়েই সমাধান দেওয়ার চেষ্টা হবে একসঙ্গে একটি কেন্দ্রীয় স্থানে। এতদিনে যে অভিযোগ উঠেছিল, সমস্যার সমাধানের জন্য মানুষকে অফিস থেকে অফিসে ছুটতে হয়—এই প্রকল্প সেই চিত্র বদলে দিতে পারে বলে আশা রাজ্য প্রশাসনের।

পাড়ায় পাড়ায় প্রশাসন নামলে সমস্যার সমাধান কতটা সম্ভব? উত্তর মিলবে কিছু দিনের মধ্যেই

পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রকল্পটি যে উচ্চাশাপূর্ণ, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বাস্তবায়নের সঠিক কৌশল ও দ্রুততর সিদ্ধান্ত ছাড়া এই উদ্যোগ মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থও হতে পারে। সব কিছুই নির্ভর করছে মাঠপর্যায়ে কর্মরত আধিকারিক ও প্রশাসনের আন্তরিকতার উপর। তবে এত বড় মাপের প্রস্তুতি রাজ্য সরকারের তরফে নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন অনেকে।

Leave a comment