এশিয়ার আকাশযুদ্ধের আগামী অধ্যায়ে জয়-পরাজয় আর শুধু বিমানের চেহারা বা অস্ত্রভান্ডারের উপর নির্ভর করবে না। এবার মাপকাঠি হবে ইঞ্জিনের ক্ষমতা। এই কারণে ভারতীয় হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (HAL) এখন এমন ইঞ্জিনের সন্ধানে, যা শুধু অতিশক্তিশালী নয়, বরং প্রযুক্তি হস্তান্তরের দিক থেকেও গেম-চেঞ্জার।
চীনের J-20–এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন পরিকল্পনা
চিনের পঞ্চম প্রজন্মের J-20 যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য বড় হুমকি। কিন্তু যদি জাপানের Mitsubishi XF9-1 ইঞ্জিন ভারতের হাতে আসে, তাহলে আগামী দশকে AMCA শুধু সমকক্ষই হবে না, বরং ফায়ারপাওয়ার ও কর্মক্ষমতায় J-20–কে পেছনেও ফেলতে পারে।
আকাশযুদ্ধের ভারসাম্যে ভারতের নতুন পাল্লা
XF9-1 এমন এক ‘হৃদপিণ্ড’ যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। চীন ও জাপানের ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ভারত এই জোটে যুক্ত হলে আকাশযুদ্ধে একেবারে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে।GE ও Safran–কে পিছনে ফেলে জাপানের পথে HALসূত্রের খবর, HAL এখন GE F414 বা Safran M88–এর পরিবর্তে XF9-1–এর দিকেই বেশি ঝুঁকছে। কারণ, শক্তি, প্রযুক্তি এবং পূর্ণ প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ— এই তিন ক্ষেত্রেই XF9-1 তুলনাহীন।
বহুমুখী অংশীদারিত্বের সন্ধানে ভারত
২০২৫ সালের মে মাসে ব্লুমবার্গ জানিয়েছিল, HAL শুধু GE F414–এর উপর নির্ভর করতে চাইছে না। AMCA ও Twin Engine Deck Based Fighter (TEDBF)–এর মতো প্রকল্পে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জাপানের সঙ্গে যৌথ ইঞ্জিন উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা চলছে।XF9-1–এর ‘সুপারক্রুজ’ ক্ষমতাMitsubishi Heavy Industries–এর তৈরি XF9-1 আসলে জাপানের FX ফাইটারের জন্য বানানো। আফটারবার্নার চালু অবস্থায় এটি ১১০ কিলোনিউটন থ্রাস্ট দেয়, আর ড্রাই থ্রাস্ট ৬৫–৭০ কিলোনিউটন। GE F414–এর ৯৮ কিলোনিউটন ও Safran M88–এর ৭৫ কিলোনিউটন তুলনায় অনেক পিছিয়ে। সুপারক্রুজ ক্ষমতার ফলে আফটারবার্নার ছাড়াই অতিসonic গতিতে দীর্ঘ পথ অতিক্রম সম্ভব হবে।
রোলস-রয়েসের ভারতমুখী প্রস্তাব
২০২৫ সালের এপ্রিলে ব্রিটেনের Rolls-Royce যৌথ উন্নয়ন ও পূর্ণ মেধাস্বত্ব হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রস্তাবিত ইঞ্জিনের থ্রাস্ট ৭৫ কিলোনিউটন (ড্রাই) ও ১১০–১৩০ কিলোনিউটন (আফটারবার্নার)। পাশাপাশি, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত থেকে যন্ত্রাংশ সংগ্রহ দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।সাফরানের আপগ্রেড পরিকল্পনাফরাসি Safran তাদের M88 ইঞ্জিন আপগ্রেড করে AMCA ও TEDBF–এর জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন সংস্করণে ড্রাই থ্রাস্ট ৭৫–৮০ কিলোনিউটন এবং আফটারবার্নার থ্রাস্ট ১১০–১২০ কিলোনিউটন থাকবে। সময়সীমা মিলিয়ে ২০২৮ সালের মধ্যে প্রথম ফ্লাইটের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
সীমান্ত থেকে ভারত মহাসাগর—সর্বত্র আধিপত্য
যদি AMCA–তে শুরু থেকেই XF9-1 যুক্ত হয়, তবে তা সরাসরি চিনের J-20 ও J-31 প্রোগ্রামের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। IAF–এর হাতে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম আসবে, যা সীমান্ত রক্ষা থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগরে আকাশ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম।যুদ্ধবিমানের ভবিষ্যৎ—ইঞ্জিনেই আসল খেলাবিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনের আকাশযুদ্ধে ইঞ্জিনই হবে নির্ধারক। এই কারণে HAL এমন একটি সমাধান খুঁজছে যা শক্তি, প্রযুক্তি ও কৌশল— তিন ক্ষেত্রেই ভারতকে শীর্ষে পৌঁছে দেবে। আর সেই তালিকায় XF9-1 এখন সবচেয়ে এগিয়ে।