জেলে বসে সরকার চালাবে হয় নাকি অমিত শাহের কড়া কটাক্ষ

জেলে বসে সরকার চালাবে হয় নাকি অমিত শাহের কড়া কটাক্ষ

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফের একবার তীব্র মন্তব্য করলেন। লোকসভায় মঙ্গলবার তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও পদ থেকে ইস্তফা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেউ জেলে বসে সরকার চালাতে পারবে না। তিনি আরও জানান, নতুন বিলটি দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শাহের মতে, যদি দেশের প্রধান নেতারা গুরুতর অভিযোগে জেলে যান এবং সেখানে থেকে সরকার চালানোর চেষ্টা করেন, তা দেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি বড় আঘাত।শাহ বলেন, বিরোধীরা এখনও বিশ্বাস করেন, জেল থেকেও তারা সহজেই সরকার পরিচালনা করতে পারবেন। তবে গণতন্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী, সরকার চালানো কেবল দফতরের বাইরে বসে সম্ভব নয়। যদি কোনও নেতা জেলে থাকেন, তবে ৩০ দিনের মধ্যে জামিন না হলে পদত্যাগ করা বাধ্যতামূলক।

মোদী চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীকেও অন্তর্ভুক্ত হোক বিলের আওতায়

অমিত শাহ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই চাইছিলেন যে এই বিলকে আরও শক্তিশালী করা হোক। এতে প্রধানমন্ত্রীকেও অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যিক। শাহ স্মরণ করান, “ইন্দিরা গান্ধীর ৩৯তম সংশোধনী রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের পদকে বিচারিক পর্যালোচনার বাইরে রেখেছিল। কিন্তু মোদী সরকার এই পথে অগ্রসর হয় নি। আমরা পার্থক্য সৃষ্টি করেছি, কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে ক্ষমতা দফতরের বাইরে থাকা কোনও ব্যক্তির হাতে থাকা উচিত নয়।তিনি আরও বলেন, এই বিল শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি দেশের গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রীসহ যে কোনও নেতাকে যদি গুরুতর অভিযোগে জেলে রাখা হয়, তাহলে তাদের জন্য পদত্যাগের ব্যবস্থা রাখা হবে। এটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩০ দিন জেলে, ৩১ দিনে পদত্যাগ বাধ্যতামূলক

নতুন বিল অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা যেকোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যদি গুরুতর অভিযোগে জেলে যান, ৩০ দিনের মধ্যে জামিন না মিলে তাদের পদ ত্যাগ করতে হবে। শাহ মন্তব্য করেন, জেল থেকে সরকার চালানো গণতন্ত্রের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে। কেউ যদি এমন চেষ্টা করে, তবে তা দেশের সংবিধান ও সরকারের গঠনমূলক কাঠামোর বিরুদ্ধে যাবে।তিনি আরও বলেন, যদি একজন নেতা জামিন পান, তবে তিনি শপথ নিয়ে আবার পদভার গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু সেই পর্যন্ত জেল থেকে সরকার পরিচালনা করা কোনোরকমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি গণতন্ত্রের গরিমাকে হানি করে এবং জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ করে।

বিরোধীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া, সংসদে উত্তাপ

বিল পেশের সময় বিরোধীরা লোকসভায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। তারা কাগজ ছুড়ে মারার মাধ্যমে প্রতিবাদ দেখান। শাহ মন্তব্য করেন, সংসদ কি শুধুই শোরগোল করার জায়গা, নাকি সংবিধান ও দেশের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিলের ওপর বিতর্ক করার জায়গা? যদি বিল উপস্থাপন করা না হয়, তাহলে তা আসলে অগণতান্ত্রিক আচরণ।তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা অতীতেও প্রতিবাদ করেছি, তবে তাতে বিল পেশ বন্ধ করা হয়নি। বিরোধীদের উচিত, জনগণকে তাঁদের অবস্থান বোঝানো। সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা অবলম্বন করা সকলের দায়িত্ব।

কংগ্রেসকে নিশানা করে শাহর আক্রমণ

অমিত শাহ কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেন, মনমোহন সিং সরকারের সময় লালু যাদবকে বাঁচাতে অধ্যাদেশ আনা হয়েছিল। তখন রাহুল গান্ধী প্রকাশ্যে সেই অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। আজ একই কংগ্রেস সরকার লালু যাদবকে আঁকড়ে ধরে আছে। নৈতিকতার কথা আজ তারা কেন মনে করেন না?

তিনি আরও বলেন, বিরোধীরা এই বিলকে ‘কালা আইন’ বলে আখ্যায়িত করছে। কিন্তু দেশের স্বার্থে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কোনো একজন নেতা না থাকলে সরকার চলবে না—এই ধারণা আমরা একেবারেই মানি না। একজন সরে গেলে দলের অন্য সদস্য সরকার চালাবেন। তারপর জামিন পেলে পদে ফিরতে পারবেন। এতে কোনও অসঙ্গতি নেই।

জামিন পেলেই পুনরায় দায়িত্ব নিতে পারবেন মন্ত্রী

শাহের মতে, এই বিলের মাধ্যমে কোনো মন্ত্রীর জন্য অপরাধের অভিযোগ থাকলেও একটি সুষম ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, যদি কোনও নেতা জামিন পান, তবে তিনি পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন। এটি সংবিধান ও ন্যায়বিচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেউ জেল থেকে সরকার চালানোর চেষ্টা করলে তা দেশের গণতন্ত্রের প্রতি বড় আঘাত হবে।

গণতন্ত্রের গরিমা রক্ষার দাবি

অমিত শাহ আরও বলেন, এই বিল দেশের গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী জেল থেকে সরকারের নির্দেশ দেয়, তা দেশের সংবিধান ও জনগণের আস্থার জন্য ক্ষতিকর। আমরা চাই, কেউই সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা দেখাতে পারবে না।তিনি বলেন, বিরোধীরা যদি এই বিলকে কালা আইন বলে কটাক্ষ করে, তবে আমাদের লক্ষ্য দেশের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখা। একজন নেতা যদি দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়, তাহলে সঠিক সময়ে পদত্যাগের ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a comment