অনিরুদ্ধাচার্যের লিভ-ইন সঙ্গীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, নারী মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় মঞ্চের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।
অনিরুদ্ধাচার্য: ধর্মীয় কথক এবং সন্ত হিসাবে পরিচিত অনিরুদ্ধাচার্য আবারও তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এবার তিনি লিভ-ইন সম্পর্ক, মহিলাদের মর্যাদা এবং সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এমন কিছু কথা বলেছেন যা কেবল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তাই নয়, সমাজের একটি বৃহৎ অংশে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনিরুদ্ধাচার্যের মতে, 'আজকের কলিযুগে বেশ্যাকে বেশ্যা বলা যায় না, তারা নিজেদের সতী-সাবিত্রী প্রমাণ করতে চায়।' এই উক্তির সাথে সাথে তিনি আধুনিক জীবনযাত্রা, বিশেষ করে লিভ-ইন সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেছেন এবং মহিলাদের সম্পর্কে আপত্তিকর তুলনাও করেছেন।
পুরো ঘটনাটি কী?
সম্প্রতি কথক অনিরুদ্ধাচার্য একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে তিনি আধুনিক সমাজের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অনুষ্ঠানে তিনি লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা মহিলাদের তুলনা বেশ্যাদের সাথে করে বলেন, 'আছে বেশ্যা কিন্তু নিজেকে সতী-সাবিত্রী বলে পরিচয় দিতে চায়। অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াবে আর চাইবে আমরা তাকে দেবী বলি।' এই বক্তব্য কেবল সামাজিকভাবে সংবেদনশীল নয়, এটি নারীর মর্যাদা ও স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের ওপরও আঘাত হানে।
'কলিযুগে সত্য বলা অপরাধ হয়ে গেছে' - অনিরুদ্ধাচার্য
অনিরুদ্ধাচার্য তাঁর বক্তব্যকে 'সত্য' হিসাবে তুলে ধরে যুক্তি দিয়েছিলেন যে বর্তমান যুগে, যাকে তিনি 'কলিযুগ' বলেন, মানুষ সত্য শুনতে চায় না। তিনি বলেন, 'আমি বলেছি লিভ-ইন করা ভুল, তাই লোকেরা আমার বিরোধিতা করেছে। কারণ এখন সত্য নয়, মিথ্যা প্রিয়।' তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন যে কোনও মা কি এমন পুত্রবধূ চাইবেন, যে লিভ-ইন করে বাড়ি আসবে? তাঁর যুক্তি ছিল সমাজে সাম্যের ধারণার অর্থ এই নয় যে নৈতিক মূল্যবোধ ত্যাগ করতে হবে।
সমালোচনা এবং প্রতিক্রিয়া
এই বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই এটিকে নারীবিদ্বেষী বলেছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে ধর্মীয় মঞ্চের অপব্যবহার বলে অভিহিত করেছেন।
- নারী অধিকার কর্মী রেখা ভাটনগর বলেছেন: 'এই ধরনের বক্তব্য মহিলাদের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে কথক তাঁর প্রভাব ব্যবহার করে মানুষকে অপমান করছেন।'
- যুব সমাজবিজ্ঞানী ডঃ বিবেক সরিন বলেছেন: 'লিভ-ইন বা অন্য কোনও বিকল্প জীবনধারা নিয়ে সমাজে ইতিমধ্যেই পূর্ব ধারণা রয়েছে। যখন কোনও ধর্মীয় ব্যক্তি এগুলিকে ভুল বলেন, তখন তিনি কয়েক হাজার-লক্ষ মানুষের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেন।'
ধর্ম, নৈতিকতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সংঘাতের গল্প
ভারতে ধর্ম ও সংস্কৃতির গভীর প্রভাব রয়েছে। কিন্তু যখন ধর্মকে মহিলাদের স্বাধীনতা, তাদের জীবনের পছন্দ বা সমাজের বৈচিত্র্যকে ছোট করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন এটি একটি বড় প্রশ্ন তৈরি করে। কথক তার কথা সত্য বলে উপস্থাপন করেছেন, কিন্তু প্রশ্ন হল সত্যের অর্থ কি এই যে তিনি কোনও বিশেষ শ্রেণীকে অপমান করবেন বা প্রকাশ্যে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়কে হেয় করবেন?
ধর্মীয় মঞ্চ থেকে এই ধরনের মন্তব্য কি उचित?
ধর্মগুরু এবং কথকদের ভূমিকা কেবল ধর্মীয় উপদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা সমাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে যখন কোনও কথক সামাজিক জীবনযাপন নিয়ে প্রকাশ্যে মহিলাদের সম্পর্কে মন্তব্য করেন, তখন প্রশ্ন ওঠে যে ধর্মীয় মঞ্চগুলিকে ব্যক্তিগত মতাদর্শের আখড়া হতে দেওয়া উচিত কি? ধর্মীয় ও সামাজিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। লিভ-ইন সম্পর্ক সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও, এটি ভারতের আইনে অবৈধ নয়। সংবিধান নাগরিকদের জীবনের স্বাধীনতা এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী জীবনধারণের অধিকার দেয়।
কে तय করবে 'সতী' और 'বেশ্যা'-র সংজ্ঞা?
এটি অত্যন্ত গুরুতর এবং চিন্তাশীল প্রশ্ন যে আজও মহিলাদের 'সতী' বা 'বেশ্যা'-র মতো শব্দে वर्गीकृत করা হচ্ছে। এই চিন্তা কেবল পশ্চাৎপদই নয়, এটি ভারতের সংবিধান এবং মহিলাদের অধিকারের বিরুদ্ধেও। মহিলাদের মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং সাম্য আজ কেবল সাংবিধানিক বিষয় নয়, সামাজিক চেতনারও কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।