রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর অভ্যন্তরে পারিবারিক ও রাজনৈতিক সংঘাত আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। পার্টি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদবের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদব তাঁর ছোট ভাই তথা বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবকে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
বিহারের রাজনীতি: বিহারের রাজনীতিতে ফের একবার লালু যাদব পরিবারের অভ্যন্তরীণ কলহ শিরোনামে উঠে এসেছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদবের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদব তাঁর ছোট ভাই এবং বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন।
তেজস্বী যাদবকে 'বাঁশি বাজানো'র চ্যালেঞ্জ
তেজ প্রতাপ যাদব মহুয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে তাঁর নতুন রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করেছেন। মহুয়ায় নির্বাচনী প্রচারকালে তিনি শুধু তেজস্বী যাদবের তীব্র সমালোচনা করেননি, দলের বর্তমান বিধায়ক মুকেশ রোশনকেও আক্রমণ করেছেন। তেজ প্রতাপ দাবি করেছেন যে, আরজেডির অভ্যন্তরে গণতন্ত্র শেষ হয়ে গেছে এবং এখন তিনি জনগণের মধ্যে গিয়ে নিজের ক্ষমতায় লড়াই করবেন।
একটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তেজ প্রতাপ যাদব বলেন, তেজস্বী যদি নিজেকে অর্জুন মনে করেন, তবে আগে বাঁশি বাজিয়ে দেখান। অর্জুন ও কৃষ্ণের সম্পর্ক কী, তা সবাই জানে। তেজস্বীকে অর্জুন বলা হয়েছিল, কিন্তু এখন তিনি নিজেকে কৃষ্ণ প্রমাণ করতে চান। আগে বাঁশি বাজান, তারপর মানব। এই বক্তব্যে আবারও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, দুই ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্য এখন প্রকাশ্য সংঘাতে পরিণত হয়েছে।
মুকেশ রোশনকে 'বহুরূপী' মন্তব্য
তেজ প্রতাপ মহুয়ার বর্তমান আরজেডি বিধায়ক মুকেশ রোশনকে 'বহুরূপী' বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি বলেন, "এখানে এক বহুরূপী ঘুরে বেড়াচ্ছে, যে সবসময় কাঁদে। যখন সেই বহুরূপী কাঁদবে, তখন তাকে ঝুনঝুনি ধরিয়ে দেবেন। আমি যখনই মহুয়ায় আসি, সে কাঁদতে শুরু করে।" তেজ প্রতাপের এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি এই আসনে মুকেশ রোশনের রাজনৈতিক প্রভাবকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন।
নির্বাচনী প্রচারের সময় তেজ প্রতাপ যাদব মহুয়ার জন্য বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, পারসোনিয়ার সবজি বাজারকে व्यवस्थित করার জন্য আলাদা করে বিল্ডিং তৈরি করা হবে, যাতে মহিলা ও দরিদ্র সবজি বিক্রেতারা একটি নিরাপদ এবং সুসংহত স্থান পেতে পারে। এছাড়াও, তিনি এলাকায় রাস্তা, বিদ্যুৎ এবং যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন।
আরজেডি থেকে বহিষ্কার ও রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা
কিছু মাস আগে তেজ প্রতাপ যাদবকে আরজেডি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, যার পর তিনি দীর্ঘ সময় ধরে জনসমক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে ফিরে আসছেন এবং তাঁর কৌশল সরাসরি আরজেডি নেতৃত্ব, বিশেষ করে তেজস্বী যাদবকে চ্যালেঞ্জ করা বলে মনে হচ্ছে। আরজেডির অভ্যন্তরে এই ফাটল নতুন নয়, তবে এবার তেজ প্রতাপের স্বাধীনভাবে নির্বাচন লড়া এবং তেজস্বীকে প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো পার্টি এবং পরিবার উভয়ের জন্যই গুরুতর ইঙ্গিত। যেখানে তেজস্বী যাদবকে দলের প্রধান মুখ হিসেবে মনে করা হয়, সেখানে তেজ প্রতাপের এই বিদ্রোহ আরজেডিকে রাজনৈতিকভাবে অস্থির করে তুলতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তেজ প্রতাপের এই বিদ্রোহের কারণে আরজেডি আসন-স্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে সেই অঞ্চলগুলিতে যেখানে যাদব ভোটব্যাঙ্ক નિર્ણায়ক ভূমিকা পালন করে। যদি তেজ প্রতাপ স্থানীয় সমর্থন পান, তবে এটি তেজস্বীর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।