টিভি এবং বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক অভিনেত্রী আছেন, যাঁরা ঐতিহ্যপূর্ণ পরিবার থেকে উঠে এসে নিজের চেষ্টায় নাম এবং খ্যাতি অর্জন করেছেন। এমনই এক প্রেরণাদায়ক গল্প হল টিভির জনপ্রিয় অভিনেত্রী অনিতা হাসানন্দানির, যিনি তাঁর জীবনের প্রতিবন্ধকতাগুলি অতিক্রম করে সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছেন।
এন্টারটেইনমেন্ট: বলিউড হোক বা টিভি ইন্ডাস্ট্রি, এমন অনেক সুন্দরী আছেন যারা রক্ষণশীল পরিবার থেকে আসেন, কিন্তু তাঁদের পরিশ্রম ও সংগ্রামের মাধ্যমে সেই জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের নাম ও পরিচয় তৈরি করেন। তেমনই একজন সুন্দরী হলেন ‘ছোড়িয়া চলি গাঁও’ খ্যাত অনিতা হাসানন্দানি। অনিতা তাঁর কর্মজীবনে অনেক টিভি শো এবং সিনেমায় কাজ করেছেন, কিন্তু এখানে পৌঁছানো তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তাঁর সংগ্রাম এবং দৃঢ় সংকল্পই তাঁকে এই স্থানে পৌঁছে দিয়েছে, যেখানে আজ তিনি তাঁর প্রতিভা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে রাজ করছেন।
মদ্যপ বাবা এবং পরিবারের চ্যালেঞ্জ
অনিতা হাসানন্দানি অনেক জনপ্রিয় টিভি শো এবং সিনেমায় তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন, কিন্তু তাঁর জীবনের যাত্রা সহজ ছিল না। অনিতা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তাঁর বাবা মদ্যপ ছিলেন, যার কারণে বাড়িতে ক্রমাগত উত্তেজনা ও সমস্যা বাড়তেই থাকত। যখন অনিতার বয়স মাত্র ১৫ বছর, তখন তাঁর বাবা মারা যান। সেই সময় তিনি নিজে খুব কম বয়সী ছিলেন এবং মায়ের সঙ্গে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে পড়ে।
অনিতা বলেন যে বাবার মদ্যপ স্বভাবের কারণে তাঁর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কিছুটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু বাবার প্রতি তাঁর ভালোবাসা সবসময় অটুট ছিল। তিনি মনে করেন যে তাঁর বাবা একটি আসক্তির শিকার ছিলেন, যিনি কোনো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই কারণে পরিবারে অনেকবার অসন্তোষ এবং সংঘর্ষ দেখা গেছে।
সংগ্রামের মাঝে চাকরি করে সামলেছেন দায়িত্ব
বাবার মৃত্যুর পর অনিতা এবং তাঁর মায়ের জীবনে আর্থিক অভাব দেখা দেয়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাঁর মা এবং বড় বোনের বিয়ের পর এই প্রশ্ন তুলেছিলেন যে তাঁরা দু'জনে কিভাবে নিজেদের জীবন চালাবেন। তখন অনিতা হার মানেননি এবং পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। তিনি জানান যে প্রথমে তিনি মনোজ কুমারের ছেলে কুনাল গোস্বামীর অফিসে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।
একদিন কুনালের ভাই তাঁকে পরামর্শ দেন যে তিনি যেন ফটোশুট করিয়ে মডেলিং বা অভিনয়ের জগতে পা রাখেন। এই কথা অনিতার জন্য নতুন সুযোগের দরজা খুলে দেয়।
অভিনয় জগতে প্রবেশ এবং সাফল্য
কিছুদিন রিসেপশনিস্টের চাকরি করার পর অনিতা ফটোশুট করান এবং অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে শুরু করেন। তাঁর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা ফল দেয় এবং ধীরে ধীরে তিনি টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নেন। ‘ছোড়িয়া চলি গাঁও’ এর মতো শো-তে তাঁর অভিনয় খুব প্রশংসিত হয়, যা তাঁকে পরিচিতি এনে দেয়। আজ অনিতা হাসানন্দানি টিভি-র অন্যতম সফল এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তিনি প্রমাণ করেছেন যে কঠিন পরিস্থিতিতে ঘেরা পরিবার থেকে এলেও যদি পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে যে কোনও লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
অনিতার গল্প সেই সকল মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা, যারা কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের পরিচয় তৈরি করতে চান। তিনি কেবল নিজের জন্য নয়, তাঁর পরিবারের জন্যও নতুন আশা জাগিয়েছেন। বাবার সংগ্রামপূর্ণ জীবন এবং তাঁর মৃত্যুর পরেও তিনি হার মানেননি এবং নিজের সাহসিকতায় সাফল্যের নতুন ইতিহাস লিখেছেন।