কলকাতা-আরামবাগ প্রধান সড়কে ওঠা জল, যান চলাচলে বিপর্যয়
অতিবৃষ্টি ও ডিভিসি-র টানা জল ছাড়া আরামবাগ-কলকাতা প্রধান সড়কে জল উঠে এসেছে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই। বহু জায়গায় রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নদীর জল। এই রাস্তায় যান চলাচল অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ভারী যানবাহন তো বটেই, সাধারণ ছোট গাড়িরও চলাফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে, তবে এভাবে জল বাড়তে থাকলে যে কোনও সময় রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
চার পঞ্চায়েত এলাকা জলের তলায়, নতুন করে জলমগ্ন বহু গ্রাম
আরামবাগের অন্তর্গত চারটি পঞ্চায়েত এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ইতিমধ্যেই জলের নিচে চলে গিয়েছে। নতুন করে আরও বেশ কয়েকটি গ্রামে ঢুকে পড়েছে নদীর জল। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামের বহু ঘরবাড়ির একতলা পুরোপুরি ডুবে গিয়েছে। জরুরি পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে বলে আশঙ্কা।
মায়াপুরের বাজার প্লাবিত, দোকানে দোকানে ঢুকেছে জল
মায়াপুর অঞ্চলের দোকানপাটেও ঢুকেছে নদীর জল। বাজার এলাকায় বেশ কিছু দোকানভাড়া, মুদিখানা, ওষুধের দোকান এমনকি ছোট ছোট খাবারের দোকানও জলের কবলে পড়েছে। অনেক দোকানদার সকাল সকাল উঠে এসে কোনওরকমে মালপত্র সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে যে হারে জল বাড়ছে, তাতে আরও ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
কোমর সমান জলে যাতায়াত, দুর্ভোগের শেষ নেই
আরামবাগের বেশ কিছু এলাকায় কোমর সমান জল পার করে মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, চিকিৎসাকেন্দ্র, অফিস—সব কিছুই কার্যত অচল হয়ে গিয়েছে। নৌকা বা বাঁশের ভেলায় করে অনেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
মুণ্ডেশ্বরী নদীর শাখা খাল উপচে, বিপন্ন বিস্তীর্ণ এলাকা
মুণ্ডেশ্বরী নদীর একটি শাখা খাল উপচে পড়ে ইতিমধ্যেই বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশের গ্রামগুলি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়েকটি বাড়িতে ঢুকেছে কোমর সমান জল। বাসিন্দাদের অনেকেই ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। কোনও রকমে খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
ডিভিসির টানা জল ছাড়া, চূড়ান্ত সংকটে আরামবাগ
ডিভিসি-র তরফে যেভাবে একটানা জল ছাড়া হচ্ছে, তাতে জলস্তর আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবণতা বজায় থাকলে আরামবাগ ছাড়াও আশেপাশের খানাকুল, গোঘাট ও আরও কিছু অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে। প্রশাসন এখনও পর্যন্ত জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে আনতে কোনও বড় পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠছে স্থানীয়দের।
খানাকুলেও আতঙ্ক, জল ঢোকার সম্ভাবনা প্রবল
আরামবাগের জলস্তর বাড়তে থাকায় খানাকুল এলাকাতেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মুণ্ডেশ্বরীর জল ঢুকে পড়লে খানাকুল শহর ও সংলগ্ন এলাকা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইতিমধ্যেই কিছু নীচু এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র সরতে শুরু করেছেন।
জেলা প্রশাসনের নজরদারি ও প্রস্তুতি প্রশ্নের মুখে
এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত ত্রাণ বা উদ্ধার ব্যবস্থার কোনও স্পষ্ট চিত্র নেই। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিজে উদ্যোগ নিয়ে সাহায্যের চেষ্টা চালাচ্ছেন, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। এই পরিস্থিতিতে ডিভিসির জল ছাড়াও যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ে, তবে আরামবাগের সঙ্গে সংলগ্ন আরও অঞ্চল বন্যার কবলে পড়তে পারে। নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
মানবিকতার আশ্রয় খুঁজছে জলবন্দি পরিবারগুলি
অতিবৃষ্টির দুর্যোগ ও প্রশাসনিক ঢিলেমির মাঝে আরামবাগের মানুষ এখন একটাই প্রশ্ন তুলছেন—কখন মিলবে উদ্ধার ও ত্রাণ? শিশুর দুধ, ওষুধ, শুকনো খাবার ও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চেয়ে রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। রাষ্ট্রীয় স্তরে হস্তক্ষেপ না হলে আরামবাগের বিপর্যয় থামার কোনও লক্ষণ আপাতত নেই।