আগ্রার ৮০ বছর বয়সী অর্জুন বহল ব্লু অরিজিনের সাবঅরবিটাল ফ্লাইটে মহাকাশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ১৯৭৫ সালে মাত্র ১০৮ ডলার নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমানো বহল এখন একজন সফল ব্যবসায়ী এবং মহাকাশচারী।
UP: বয়স বাড়লে বেশিরভাগ মানুষই আরাম ও শান্তির জীবনের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু উত্তর প্রদেশের আগ্রার বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী অর্জুন সিং বহল এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। তিনি এমন একটি কাজ করে দেখিয়েছেন, যা অধিকাংশ তরুণও কল্পনা করতে পারে না। আমেরিকার মাটি থেকে ব্লু অরিজিনের সাবঅরবিটাল স্পেস মিশন NS-34-এর অধীনে মহাকাশে যাত্রা করে বহল শুধু ভারত নয়, পুরো বিশ্বকে এই বার্তা দিয়েছেন যে, উদ্দীপনা থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়।
তাজমহলের ছায়া থেকে মহাকাশের উচ্চতা পর্যন্ত
অর্জুন বহলের জন্ম উত্তর প্রদেশের ঐতিহাসিক শহর আগ্রায়। তাঁর শৈশব কেটেছে তাজমহলের শীতল ছায়ায় এবং শুরুতে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে অন্য পথে চালিত করে। জীবন ধারণের জন্য তিনি দার্জিলিংয়ের চা বাগানে পৌঁছান এবং তারপর দিল্লির কাছে একটি গার্মেন্ট কারখানা স্থাপন করেন।
১০৮ ডলার থেকে আমেরিকার মাটি এবং তারপর আকাশ পর্যন্ত
একটি অচেনা ভূমি, ভাষার প্রাচীর এবং সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও অর্জুন বহল সাহস হারাননি। ছোটখাটো পণ্য বিক্রি করে জীবনের চাকা সরিয়েছেন, কিন্তু স্বপ্ন সবসময় বড় ছিল। মেধা, একাগ্রতা এবং আত্মবিশ্বাসের জোরে তিনি রিয়েল এস্টেট খাতে পা রাখেন এবং 'Bahal Properties' নামে নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। আজ এই কোম্পানি আমেরিকাতে সুপরিচিত। বহল আমেরিকার নাগরিকত্ব পান এবং তিনি শুধুমাত্র একজন সফল ব্যবসায়ী নন, বরং একজন 'Tireless Traveler' হিসাবেও পরিচিত হন। তাঁর যাত্রা থামেনি এবং ৮০ বছর বয়সে তিনি মহাকাশকে নিজের গন্তব্য বানিয়ে নিয়েছেন।
NS-34 মিশন: মহাকাশ পর্যটনের নতুন দিগন্ত
জেফ বেজোসের এরোস্পেস কোম্পানি ব্লু অরিজিন তাদের ৩৪তম মিশনের অধীনে নিউ শেফার্ড যানের মাধ্যমে ৬ জন ব্যক্তিকে মহাকাশের সাবঅরবিটাল যাত্রায় পাঠিয়েছে। এই উড়ানটি আমেরিকার টেক্সাসের ভ্যান হর্নের কাছে একটি ব্যক্তিগত উৎক্ষেপণ স্থল থেকে শনিবার শুরু হয়েছিল। এই মিশনের বিশেষত্ব হল এটি একটি সাবঅরবিটাল ফ্লাইট ছিল—অর্থাৎ এটি পৃথিবীর নিম্ন স্তর থেকে কয়েক মিনিটের জন্য মাধ্যাকর্ষণ মুক্ত পরিবেশে পৌঁছায় এবং তারপর ফিরে আসে। এই সময়ে যাত্রীরা কিছু সময়ের জন্য মহাকাশের অভিজ্ঞতা লাভ করেন, যা অনন্য।
৮০ বছর বয়সে নতুন উড়ান
বহল এই মিশনের অংশ হয়ে কেবল ভারতের সবচেয়ে বয়স্ক মহাকাশ পর্যটক হয়েছেন তাই নয়, তিনি এই বয়সে নতুন রেকর্ডও স্থাপন করেছেন। তাঁর এই যাত্রা কোনো বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিগত অবদানের থেকে কম নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে মানুষের ইচ্ছাশক্তি সীমাহীন। এই যাত্রার পর তিনি বেশ আবেগপ্রবণ ছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি কখনো ভাবিনি যে যে দেশ থেকে আমি ১০৮ ডলার নিয়ে বেরিয়েছিলাম, তারাই আমাকে মহাকাশে পৌঁছে দেবে। কিন্তু স্বপ্ন যদি বড় হয়, তাহলে পথ আপনা আপনি তৈরি হয়ে যায়।'
প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য অনুপ্রেরণা
অর্জুন বহলের এই যাত্রা শুধু ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং সারা বিশ্বের প্রবাসী ভারতীয়দের জন্যেও অনুপ্রেরণা। তিনি সেই লক্ষ লক্ষ ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব করেন, যারা নিজের দেশের মাটি থেকে বেরিয়ে বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের ছাপ ফেলছেন। তাঁর সাফল্য এটাই দেখায় যে ভারতের ছোট ছোট শহর এবং গ্রামগুলোতেও এমন তারা রয়েছে, যাদের যদি সুযোগ মেলে তবে তারা মহাকাশেও পৌঁছাতে পারে।