ফিলিপ নোয়েল বেকার: ইতিহাসের একমাত্র ক্রীড়াবিদ যিনি জিতেছেন অলিম্পিক ও নোবেল শান্তি পুরস্কার

ফিলিপ নোয়েল বেকার: ইতিহাসের একমাত্র ক্রীড়াবিদ যিনি জিতেছেন অলিম্পিক ও নোবেল শান্তি পুরস্কার
সর্বশেষ আপডেট: 3 ঘণ্টা আগে

ফিলিপ নোয়েল বেকার ইতিহাসের একমাত্র এমন ক্রীড়াবিদ যিনি খেলাধুলা এবং মানবতা উভয় ক্ষেত্রেই নিজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি ১৯২০ সালে অলিম্পিক পদক এবং ১৯৫৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতে একটি অনন্য বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেছেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং অলিম্পিক পদক: লন্ডনের কিংবদন্তি খেলোয়াড় ফিলিপ নোয়েল বেকার ক্রীড়া জগৎ এবং বিশ্ব শান্তি উভয় ক্ষেত্রেই ইতিহাস তৈরি করেছেন। তিনি ১৯২০ সালে অলিম্পিকে রৌপ্য পদক জেতার পর ১৯৫৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। বেকারকে এই সম্মান যুদ্ধ-বিরোধী প্রচেষ্টা এবং মানবতার সেবার জন্য প্রদান করা হয়েছিল, যার ফলে তিনি বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এই দুটি সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করেন।

খেলাধুলা এবং শান্তি উভয় ক্ষেত্রেই ইতিহাস সৃষ্টি

ফিলিপ নোয়েল বেকার বিশ্বের একমাত্র এমন ক্রীড়াবিদ যিনি খেলাধুলা এবং মানবতা উভয় ক্ষেত্রেই এক অবিস্মরণীয় ছাপ রেখেছেন। তিনি ১৯২০ সালে অলিম্পিক গেমসে রৌপ্য পদক জিতে ব্রিটেনকে গর্বিত করেছিলেন এবং এর চার দশক পর ১৯৫৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে বিশ্ব ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করেন।

বেকারের এই অর্জন এই কারণেও বিশেষ যে তিনি প্রমাণ করেছেন যে ক্রীড়া চেতনা এবং সামাজিক দায়িত্ব একে অপরের পরিপূরক। যেখানে মাঠে তিনি প্রতিযোগিতার উদাহরণ হয়ে উঠেছিলেন, সেখানেই জীবনে তিনি সংগ্রাম, ন্যায়বিচার এবং শান্তির জন্য কাজ করে বিশ্বের সামনে একটি আদর্শ স্থাপন করেছেন।

লন্ডনে জন্ম, পড়াশোনা এবং খেলাধুলা উভয় ক্ষেত্রেই ছিলেন অসামান্য

ফিলিপ নোয়েল বেকার ১৮৮৯ সালের ১ নভেম্বর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১৩ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। ইতিহাস এবং অর্থনীতির ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও, তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও সমানভাবে সক্রিয় ছিলেন এবং তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে স্থান পেয়েছিলেন।

কেমব্রিজে পড়াশোনা করার সময় তিনি বেশ কয়েকটি অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন এবং অনেক খেতাব জিতেছিলেন। তার অধ্যবসায় এবং শারীরিক সক্ষমতা তাকে দ্রুত ব্রিটিশ অলিম্পিক দলে নিয়ে যায়, যেখান থেকে তার অসাধারণ ক্রীড়া জীবনের সূচনা হয়।

দু’বার অলিম্পিকে খেলে রৌপ্য পদক জয়

ফিলিপ নোয়েল বেকার ১৯১২ এবং ১৯২০ সালের অলিম্পিক গেমসে গ্রেট ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯১২ সালের স্টকহোম অলিম্পিকে তিনি ১৫০০ মিটার দৌড়ের ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে চমৎকার পারফর্ম করেন, কিন্তু পদক থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েন।

তবে, আট বছর পর ১৯২০ সালের অ্যান্টওয়ার্প অলিম্পিকে তিনি দুর্দান্তভাবে ফিরে আসেন। ১৫০০ মিটার দৌড়ে বেকার তার গতি এবং সংযম দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন এবং মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে রৌপ্য পদক জয় করেন। এই অর্জন তাকে ব্রিটেনের অন্যতম প্রধান ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

খেলাধুলা থেকে রাজনীতি এবং তারপর শান্তির পথে

খেলাধুলা থেকে অবসর নেওয়ার পর ফিলিপ নোয়েল বেকার তার জীবন মানবতা এবং শান্তির কাজে উৎসর্গ করেন। তিনি যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বেশ কয়েকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সামরিক পরিষেবা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরিবর্তে, তিনি ইতালিতে একটি ব্রিটিশ অ্যাম্বুলেন্স ইউনিটে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।

পরে তিনি জাতিসংঘে (UN) বেশ কয়েকটি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন এবং বিশ্ব শান্তি প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার নেতৃত্ব এবং ধারণা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলিকে শান্তি ও সহাবস্থানের পথ দেখিয়েছিল, যা আজও তার উত্তরাধিকার হিসেবে স্মরণ করা হয়।

রাজনীতি এবং লেখাতেও গভীর ছাপ রেখেছিলেন

ফিলিপ নোয়েল বেকার শুধু একজন খেলোয়াড় বা শান্তি-কর্মীই ছিলেন না, বরং একজন দূরদর্শী রাজনীতিবিদও ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ সংসদে ৩৬ বছর ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন এবং ১৯২৯ সালে কভেন্ট্রি থেকে প্রথমবার নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে তার মনোযোগ সর্বদা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং নিরস্ত্রীকরণের উপর নিবদ্ধ ছিল।

এর পাশাপাশি, তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ বই — “The League of Nations at Work” (1926) এবং “Disarmament” (1934) — রচনা করেন, যেখানে তিনি বিশ্ব শান্তি এবং কূটনীতির দিকে গভীর ধারণা উপস্থাপন করেছিলেন। এই রচনাগুলি তাকে একজন চিন্তাশীল লেখক এবং বিশ্ব শান্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

নোবেল শান্তি পুরস্কারে অমর সম্মান

১৯৫৯ সালে ফিলিপ নোয়েল বেকারকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এই পুরস্কার তাকে লিগ অফ নেশনস, জাতিসংঘ এবং যুদ্ধ শরণার্থীদের জন্য তার উল্লেখযোগ্য অবদানের কারণে দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র অলিম্পিয়ান যিনি এই সম্মান পেয়েছেন।

নোবেল সম্মান প্রাপ্তির পরেও তিনি তার কাজ চালিয়ে যান এবং জীবনের শেষ বছরগুলি পর্যন্ত যুদ্ধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে কথা বলেন। ১৯৮২ সালের ৯ অক্টোবর লন্ডনে তার জীবনাবসান হয়, তবে তার ধারণা ও কাজ আজও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

Leave a comment