টিটাগড় পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর আরমান মণ্ডলের দাদা খুররমকে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। শুক্রবার রাতে টিটাগড় থানার একটি বিশেষ দল হানা দেয় বরানগর অঞ্চলে। অভিযোগ, সেখানে অস্ত্র পাচারের জন্য জমায়েত হয়েছিল কয়েকজন দুষ্কৃতী, যাদের মধ্যে খুররমও ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ধরা পড়ে আরও পাঁচজন, যাদের মধ্যে অন্যতম ব্যারাকপুরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী আহমেদ আলি ওরফে চুনুয়া। সূত্রের খবর, গোপন খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ সকলকে প্রথমে আটক করে, পরে তাঁদের কাছ থেকে পাইপগান ও কার্তুজ-সহ বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়।
সমাজমাধ্যমে ভাইরাল খুররমের রাজনৈতিক যোগাযোগের ছবি, তীব্র বিতর্ক
ধৃত খুররমের সঙ্গে একাধিক রাজনৈতিক নেতার ছবি ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। কখনও তাঁকে দেখা যাচ্ছে শাসক দলের হেভিওয়েট নেতার পাশে, তো কখনও বিরোধী বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা অর্জুন সিং-এর সঙ্গে। এই ছবি ঘিরে রাজনীতিতে রীতিমতো বিতর্কের ঝড়। যদিও টিটাগড় পুরসভার পুরপ্রধান কমলেশ সাউ জানিয়েছেন, ‘খুররম কোনও রাজনৈতিক দলে নেই। কাউন্সিলারের দাদা হিসেবে ওর পরিচিতি থাকলেও ও নিজে কোনও রাজনীতিক নন।’ পাশাপাশি তিনি জিজ্ঞাসা তোলেন, ‘যদি অর্জুন সিং-এর সঙ্গেও ওর ছবি থাকে, তবে ও কোন দলের?’
চুনুয়ার গ্রেপ্তারে স্বস্তি পুলিশের, বহুদিন ধরেই ছিল মোস্ট ওয়ান্টেড
গ্রেপ্তার হওয়া দুষ্কৃতীদের মধ্যে চুনুয়া ছিল পুলিশি খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ তার সন্ধানে ছিল। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে একাধিক খুন, চাঁদাবাজি ও ব্যবসায়ীদের উপর দৌরাত্ম্যের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এবার অস্ত্র-সহ ধরা পড়ায় পুলিশ কিছুটা স্বস্তিতে। জানা যাচ্ছে, অভিযানের সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি পাইপগান এবং একটি তাজা কার্তুজ। পুলিশ সূত্রে খবর, বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে তার নামে এবং সবগুলিতেই এখন সক্রিয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
তৃণমূল কাউন্সিলরের পরিবারের বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ, অস্বস্তিতে শাসক শিবির
এর আগে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর আরমান মণ্ডল। এবার তাঁর দাদার নাম যুক্ত হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল। যদিও দলীয় নেতৃত্ব এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে আড়ালে অনেকে মনে করছেন—এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। খুররমের রাজনৈতিক যোগাযোগ অস্বীকার করলেও, ছবি আর স্থানীয়দের বক্তব্য অন্য গল্প বলছে। এলাকাবাসীর অনেকেই দাবি করছেন, দীর্ঘদিন ধরে খুররম এলাকার ‘চেকপোস্ট’ চালাতেন এবং তাঁর নাম বহু বিতর্কে উঠে এসেছে।
অস্ত্র পাচারের বড় চক্রের সম্ভাবনা, তদন্তে নামছে STF
এই গ্রেপ্তারির পর তদন্তে নেমেছে রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, অস্ত্র পাচারের পেছনে একটি বড় চক্র রয়েছে এবং টিটাগড় অঞ্চলকে তারা কেন্দ্র করেই কাজ চালাত। পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃতদের মোবাইল ফোনে বহু ‘ডেলিভারি চ্যাট’ রয়েছে, যেখান থেকে অস্ত্র লেনদেনের নতুন তথ্য উঠে আসতে পারে। তদন্তে নামছে সাইবার ক্রাইম শাখাও। চুনুয়া এবং খুররমের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ইতিমধ্যেই ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে।
জনতার ক্ষোভ, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের ‘যোগাযোগ’ নিয়ে প্রশ্ন
টিটাগড় ও ব্যারাকপুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনায় প্রবল উত্তেজনা। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, রাজনীতির সঙ্গে দুষ্কৃতীদের এহেন যোগাযোগ যদি থেকে যায়, তবে এলাকার নিরাপত্তা কীভাবে বজায় থাকবে? স্থানীয়দের বক্তব্য, বারবার শাসক দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ উঠলে, সাধারণ মানুষের আস্থা প্রশাসনের উপর থেকে উঠে যাবে। এই অবস্থায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার দাবি তুলেছেন বহু সমাজকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দা।