নির্বাচনের প্রস্তুতি না রাজনৈতিক চাল বাংলায় কমিশনের প্রশিক্ষণ ঘিরে ‘সার’ জল্পনা চরমে

নির্বাচনের প্রস্তুতি না রাজনৈতিক চাল বাংলায় কমিশনের প্রশিক্ষণ ঘিরে ‘সার’ জল্পনা চরমে

প্রশিক্ষণেই শুরু 'সার'-এর গল্প? রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ ঘিরে চড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ

রাজনীতির মঞ্চে ফের ঝড় তুলল নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। শনিবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে শুরু হয়েছে বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) প্রশিক্ষণ। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও দুই ২৪ পরগনার BLO-রা এদিন সেই শিবিরে অংশ নেন। তবে এই প্রশিক্ষণ শুধু কি রুটিন কার্যকলাপ? নাকি এটি বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা ‘সার’-এর সূচনা? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলা রাজনীতির অন্দরে।প্রথমবার এমন BLO প্রশিক্ষণ আয়োজনে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে জল্পনার ঝড়। ভোটার তালিকার ‘সার’ প্রক্রিয়ার সম্ভাবনা ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভাজন। বিরোধীরা বলছে, এটি এনআরসি-র সূক্ষ্ম ছায়া। সরকার বলছে, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় লড়াই চলবে।

তৃণমূলের সন্দেহ, বিজেপির চাল? ‘সার’ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে

তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণ শিবির আসলে এক প্রকার ভূমিকা তৈরির কৌশল। রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ সরাসরি অভিযোগ এনেছেন, ‘বিজেপির নির্দেশেই সার চালু হচ্ছে।’ এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন— বাংলাতেও বিহারের মতো ‘সার’ চালু হলে কমিশনের অফিস ঘেরাও করা হবে।তৃণমূলের অভিযোগ, ভোটার তালিকা থেকে বৈধ নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। সার-এর ছুতোয় ‘ডিজিটাল এনআরসি’-র পথে হাঁটতে চাইছে বিজেপি। পাল্টা বিজেপির দাবি— অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দেওয়া হোক, সেটাই সংবিধান সম্মত।

বিহার থেকে অনুপ্রেরণা? সার প্রসঙ্গে শুভেন্দুর কড়া বার্তা

বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই প্রশিক্ষণকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, “বাংলার ভোটার তালিকা থেকে ১.২৫ কোটি অনুপ্রবেশকারীর নাম বাদ পড়বে।” পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দেন, দুর্নীতি করলে BLO-রা ছাড় পাবেন না। বিহারের মতো গ্রেপ্তারও হতে পারেন।বিহারে প্রায় ৬০ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে ‘সার’-এর জেরে। বাংলাতেও অনুরূপ পদক্ষেপ হলে বিজেপি খুশি। শাসক পক্ষের আশঙ্কা, এই পথে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে চালু হবে পিছনের দরজার এনআরসি।

নির্বাচন কমিশনের অবস্থান: পর্দার আড়ালে ‘সার’?

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল বিষয়টি ঘিরে সরাসরি কিছু না বললেও তিনি অস্বীকারও করেননি। তাঁর বক্তব্য, “প্রথমবার এই প্রশিক্ষণ হচ্ছে। সার হলে তা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফেই জানানো হবে।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা সব কিছুর জন্যই প্রস্তুত।”কমিশনের তরফে না স্বীকার না অস্বীকারের মনোভাবেই জল্পনা আরও ঘনীভূত হয়েছে। একাংশ মনে করছে, এটি নিছক প্রস্তুতি নয়— এর পেছনে রয়েছে বৃহত্তর পরিকল্পনা।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? রাজনৈতিক উদ্দেশ্য না সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের আগে প্রশিক্ষণ শিবির ও ‘সার’ প্রসঙ্গ আসা মোটেই কাকতালীয় নয়। এই বিষয়টিকে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত তীব্র হচ্ছে। কেউ বলছেন এটি ভোটার পরিচিতি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া, কেউ আবার বলছেন, এটি একটি রাজনৈতিক অস্ত্র।রাজনীতির ময়দানে ‘সার’ এক নতুন ঘূর্ণি। নির্বাচনী সংস্কার না বিভাজনের হাতিয়ার— সেই প্রশ্নেই দ্বিধাবিভক্ত দেশ। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ বাংলায় পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।

Leave a comment