ভাদ্রপদ অমাবস্যা ২০২৫ এই বছর ২৩শে অগাস্ট পালিত হবে। একে পিঠোরী অমাবস্যাও বলা হয়। এই দিন গঙ্গা স্নান, পিণ্ডদান, তর্পণ এবং দান-পুণ্য করা শুভ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে পিতৃ চালিসা পাঠ করলে পূর্বপুরুষরা প্রসন্ন হন, পিতৃ দোষ দূর হয় এবং গৃহের অশান্তি দূর হয়।
ভাদ্রপদ অমাবস্যা ২০২৫: হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে ভাদ্রপদ অমাবস্যা ২০২৫ সালের ২৩শে অগাস্ট, শনিবার পালিত হবে। এই তিথি পিতৃপুরুষদের শান্তি ও আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিনে ভক্তরা গঙ্গা সহ পবিত্র নদীগুলিতে স্নান করে ভগবান শিবকে গঙ্গাজল অর্পণ করেন। এছাড়াও পিণ্ডদান, তর্পণ ও দান-ধ্যান করার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, ভাদ্রপদ অমাবস্যায় পিতৃ চালিসা পাঠ করলে পিতৃপুরুষরা প্রসন্ন হন, পিতৃ দোষ समाप्त হয় এবং পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে।
পবিত্র স্নান ও পূজার মাহাত্ম্য
পঞ্জিকা অনুসারে, ভাদ্রপদ অমাবস্যার দিনে গঙ্গা বা অন্য কোনও পবিত্র নদীতে স্নান করা পুণ্যজনক বলে মনে করা হয়। যারা গঙ্গায় যেতে পারেন না, তারা যেকোনো পবিত্র জলাশয়, পুকুর বা বাড়িতেই গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করতে পারেন। এর পরে ভগবান শিবকে জল অর্পণ করার বিধান আছে। এমন করলে সাধক বিশেষ পুণ্য লাভ করেন এবং ভগবান শিব প্রসন্ন হয়ে তাঁর কষ্ট দূর করেন।
পিতৃপুরুষদের শান্তির জন্য তর্পণ ও পিণ্ডদান
এই দিনে পিতৃপুরুষদের শান্তির জন্য তর্পণ ও পিণ্ডদান করার রীতি প্রচলিত আছে। বলা হয় যে এই কাজগুলি করলে পিতৃপুরুষদের আত্মার শান্তি মেলে এবং তাঁরা তাঁদের বংশধরদের সুখ-সমৃদ্ধি ও আশীর্বাদ দেন। শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদান সম্পর্কে আরও একটি বিশ্বাস রয়েছে, তা হল এর ফলে পিতৃ দোষ দূর হয় এবং পরিবারে সম্প্রীতি বজায় থাকে। তাই এই দিনে ভক্তরা বিশেষ শ্রদ্ধার সঙ্গে পিতৃ তর্পণ করেন।
কেন পিতৃ চালিসা পাঠ করা হয়
ভাদ্রপদ অমাবস্যায় পিতৃ চালিসা পাঠ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভরে পিতৃ চালিসা পাঠ করলে পূর্বপুরুষরা প্রসন্ন হন। তাঁরা তাঁদের বংশধরদের আশীর্বাদ করে জীবনে আসা নানান বাধা কম করেন। বিশেষ করে গৃহের অশান্তি ও পারিবারিক বিবাদও পিতৃপুরুষদের কৃপায় শেষ হয়ে যায়।
পিতৃ চালিসাতে পিতৃপুরুষদের মহিমা ও গুণগান করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে পিতৃপুরুষদের ছাড়া মোক্ষ লাভ করা সম্ভব নয়। এটিও বিশ্বাস করা হয় যে পিতৃপুরুষদের আশীর্বাদ ছাড়া কোনও কাজ সফল হতে পারে না। চালিসাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে পিতৃপুরুষদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলে তাঁরা সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
এই চালিসাতে সাধক পিতৃপুরুষদের কাছে প্রার্থনা করেন, তাঁরা যেন পরিবারের উপর তাঁদের কৃপা বজায় রাখেন এবং বাড়িতে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন। এতে পিতৃপুরুষদের শক্তি, তাঁদের মহিমা এবং তাঁদের আশীর্বাদে পাওয়া লাভের বিস্তারিত উল্লেখ আছে।
ঝুনঝুনু ধাম সম্পর্কিত বিশ্বাস
রাজস্থানের ঝুনঝুনু জেলার একটি বিশেষ মাহাত্ম্য পিতৃ পূজনের সঙ্গে জড়িত। এখানে পিতৃ ধামের দর্শন করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে এখানে দর্শন করলে এবং জল অর্পণ করলে জীবনের পাপ ধুয়ে যায় এবং ব্যক্তি নতুন পথ খুঁজে পায়। চালিসাতেও ঝুনঝুনু ধামের উল্লেখ আছে।
পিতৃপুরুষদের জন্য জল ও অন্ন অর্পণ করা হয়
এই দিনে পিতৃপুরুষদের নামে জল অর্পণ করা এবং অন্ন দান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে পিতৃপুরুষরা ছাপ্পান্ন ভোগ চান না, তাঁরা শুধুমাত্র শুদ্ধ জলেই তৃপ্ত হন। তাই ভক্তরা সকাল বেলায় সূর্যোদয়ের সময় অঞ্জলি ভরে জল অর্পণ করেন।
পূজার ঐতিহ্য
ভাদ্রপদ অমাবস্যায় পূজার ঐতিহ্য বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কোথাও এই দিনে অখণ্ড প্রদীপ জ্বালানোর বিধান আছে, আবার কোথাও বা ব্রত রেখে পিতৃপুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ভোজ করানো হয়। অনেক জায়গায় বিশেষ ভজন ও জাগরণের আয়োজনও করা হয়। পাশাপাশি কিছু পরিবারে এই দিনে বিশেষভাবে নন্দীমুখ শ্রাদ্ধ এবং জাত জাডুলার ঐতিহ্য পালন করা হয়।