ভারতের মুখ্য আলোচক রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদল সফলভাবে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা সম্পন্ন করে এবং এই মাসের শুরুতেই ওয়াশিংটন থেকে ফিরে আসে।
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রস্তাবিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (BTA) নিয়ে আলোচনা শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। বাণিজ্য মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত একজন শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন যে, ভারতের আরও একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে, যেখানে এই চুক্তির প্রথম এবং অন্তর্বর্তী পর্যায়ের আলোচনা চলবে।
এর আগে, এই মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতের একটি প্রতিনিধিদল আমেরিকা থেকে আলোচনা সেরে ফিরে আসে, যেখানে বাণিজ্য বিভাগের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়াল ছিলেন মুখ্য আলোচক।
পরবর্তী বৈঠকের তারিখ শীঘ্রই নির্ধারিত হবে
এখনও পর্যন্ত প্রতিনিধিদলের ওয়াশিংটন সফরের তারিখগুলি চূড়ান্ত হয়নি, তবে সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে এই সফর হতে পারে। এই সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ আমেরিকা ভারতের উপর ২৬ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ১লা আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে, এই আলোচনা উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
চুক্তির প্রথম পর্যায় শরৎকালের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি
রাজেশ আগরওয়াল বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, ভারত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি জানান, আলোচনার লক্ষ্য হল এই বছরের শরৎকালে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের চুক্তি সম্পন্ন করা। এর আগে, উভয় দেশ একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিতে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার দিকেও কাজ করছে।
ভারত এখন পর্যন্ত ১৪টি FTA কার্যকর করেছে
আগরওয়াল জানিয়েছেন, ভারত এখন পর্যন্ত ২৬টি দেশের সঙ্গে ১৪টির বেশি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) কার্যকর করেছে। তিনি বলেন, এখন ভারতের দৃষ্টি সেই প্রধান বাজারগুলির উপর, যেখানে রপ্তানি এবং বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারত সম্প্রতি ব্রিটেনের সঙ্গেও একটি চুক্তি করেছে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সঙ্গেও আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকার সঙ্গেও আলোচনার গতি বাড়ানো হচ্ছে, যাতে দ্রুত কোনো সুস্পষ্ট রূপ দেওয়া যায়।
আলোচনার কেন্দ্রে কোন বিষয়গুলি থাকবে?
কর্মকর্তাদের মতে, ভারতীয় দলের আসন্ন সফরের সময় বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, যার মধ্যে প্রধান বিষয়গুলি হল:
- ভারত থেকে আমেরিকায় যাওয়া কৃষি পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক
- মার্কিন কোম্পানিগুলিকে ভারতে ডেটা অ্যাক্সেসের অনুমতি
- উভয় দেশের মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং উত্পাদন সহযোগিতা
- ভারতের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যগুলির স্বীকৃতি প্রক্রিয়া
- শুল্ক এবং অ-শুল্ক বাধাগুলি কীভাবে হ্রাস করা যায়
এই সমস্ত বিষয় দীর্ঘদিন ধরে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার এজেন্ডায় রয়েছে এবং এগুলির সমাধানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ব্যাপক সুবিধা হতে পারে।
আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার
ভারতের মোট রপ্তানিতে আমেরিকার অংশীদারিত্ব প্রায় ১৮ শতাংশ, যা এটিকে ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য করে তোলে।
অন্যদিকে, ভারত আমেরিকা থেকে প্রচুর পরিমাণে আমদানিও করে, যার মধ্যে রয়েছে বিমান, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, তেল ও গ্যাস প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম।
এমন পরিস্থিতিতে, যদি কোনো বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হয়, তবে উভয় দেশের মধ্যে পরিমাণ এবং মূল্যের দিক থেকে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
চিলি, পেরু এবং নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেও আলোচনা চলছে
রাজেশ আগরওয়াল জানিয়েছেন যে, ভারত কেবল আমেরিকার সঙ্গেই নয়, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গেও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। এর মধ্যে চিলি এবং পেরুর মতো দেশগুলি অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়াও, ভারত সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE) সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যা এখন কার্যকর হয়েছে। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেও আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে।
রপ্তানি লজিস্টিকস প্রোগ্রামে দেওয়া তথ্য
রাজেশ আগরওয়াল ‘রপ্তানি লজিস্টিকস’-এর উপর আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন, যেখানে তিনি বলেন যে, ভারতের বাণিজ্য কৌশল এখন আরও বিস্তৃত হয়েছে এবং সরকার প্রতিটি প্রধান বাজারের সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর দিকে কাজ করছে।
তাঁর মতে, যদি ভারতকে তার উত্পাদন ক্ষমতা এবং রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হয়, তবে তাকে আরও বেশি FTA এবং BTA-এর মতো চুক্তির অংশ হতে হবে।