জাপানের ইন্টারনেট: ১.০২ মিলিয়ন GBPS গতির নতুন বিশ্ব রেকর্ড

জাপানের ইন্টারনেট: ১.০২ মিলিয়ন GBPS গতির নতুন বিশ্ব রেকর্ড

জাপান ১.০২ মিলিয়ন GB প্রতি সেকেন্ডের ইন্টারনেট গতির রেকর্ড গড়েছে, যা দিয়ে এক সেকেন্ডের মধ্যে নেটফ্লিক্সের সম্পূর্ণ লাইব্রেরি ডাউনলোড করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতের স্মার্ট সিটি, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং AI সিস্টেমের জন্য বিপ্লবী হতে চলেছে।

জাপান: ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে বিশ্বে প্রতিযোগিতা এখন শুধু গতির নয়, ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ারও। এই দিকেই একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে জাপান। সম্প্রতি, জাপান ১.০২ মিলিয়ন গিগাবাইট প্রতি সেকেন্ডের ইন্টারনেট গতি অর্জন করে একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেছে। এই সাফল্যে শুধু প্রযুক্তিবিদরাই বিস্মিত হননি, বরং এটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল জগতের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

এই রেকর্ডটি আসলে কী এবং এটি কেন বিশেষ?

জাপানের বিজ্ঞানীরা যে গতি অর্জন করেছেন, তা ১.০২ পেটাবাইট প্রতি সেকেন্ডের সমান। তুলনা করলে, এটি আমেরিকার গড় ইন্টারনেট গতির চেয়ে ৩.৫ গুণ এবং ভারতের গড় গতির চেয়ে প্রায় ১.৬ কোটি গুণ বেশি দ্রুত। অর্থাৎ, আপনি যে সিনেমা বা শো ডাউনলোড করতে ১০ মিনিট সময় নেন, তা জাপানে চোখের পলকে ডিভাইসে চলে আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই গতিতে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম এবং ডিজনি+ এর সম্পূর্ণ লাইব্রেরি এক সেকেন্ডের মধ্যে ডাউনলোড করা যেতে পারে। এটি কেবল একটি প্রযুক্তিগত পরীক্ষা নয়, বরং ইন্টারনেটের ভবিষ্যতের ঝলক।

এই আবিষ্কারটি কে করেছে?

এই বিপ্লবের পিছনে রয়েছে জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজি (NICT)। এই সংস্থার বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক মাল্টি-কোর ফাইবার এবং হাই-এন্ড সিগন্যাল প্রসেসিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই গতি অর্জন করেছেন। এই প্রযুক্তিকে বিদ্যমান হোম কানেকশনের তুলনায় ১,০০,০০০ গুণ দ্রুত বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, যদি আপনার ওয়াইফাই ১০০ Mbps গতি দেয়, তবে জাপানের প্রযুক্তি ১০,০০০,০০০ Mbps পর্যন্ত যাচ্ছে।

কত ডেটা ট্রান্সফার করা যেতে পারে?

এই রেকর্ড প্রমাণ করে যে কেবল বিনোদন নয়, AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), IoT (ইন্টারনেট অফ থিংস), স্মার্ট সিটি, টেলিমেডিসিন, এবং অনলাইন শিক্ষা-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতেও নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ:

  • এক সেকেন্ডে ১০,০০০ এর বেশি ৪K সিনেমা ডাউনলোড করা যেতে পারে।
  • রিয়েল টাইমে একাধিক হাসপাতাল একে অপরের সাথে বিশাল মেডিকেল ডেটা শেয়ার করতে পারে।
  • দূরবর্তী অঞ্চলে রিমোট সার্জারি বা অনলাইন স্ক্যানিং সম্ভব হবে।
  • স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা রিয়েল টাইম ডেটার উপর কাজ করতে পারবে।

নিরাপত্তা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি

এই প্রযুক্তির আগমনের ফলে ডেটা নিরাপত্তা, স্মার্ট এনার্জি, এবং ব্যবসা যোগাযোগের জগৎও দ্রুত পরিবর্তন হবে। কোম্পানিগুলো বড় ফাইল বা ভিডিও কনফারেন্সিং ডেটা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে পাঠাতে পারবে, যা উৎপাদনশীলতায় বড় ধরনের উন্নতি ঘটাবে।

ভারতের বর্তমান অবস্থা কী?

ভারতের কথা বললে, ২০২৫ সালের শুরুতে গড় ইন্টারনেট গতি ৬৩.৫৫ Mbps রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও বিপুল সংখ্যক মহিলার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নেই। NSO-এর রিপোর্ট অনুসারে, ৪৮.৪% গ্রামীণ মহিলা নিজেদের নামে ফোন রাখেন না। এমতাবস্থায়, এই ধরনের উন্নত প্রযুক্তির ভারতে আগমন বর্তমানে একটি চ্যালেঞ্জ।

এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

  • বিপুল বিনিয়োগ: বিদ্যমান নেটওয়ার্ক আপগ্রেড করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে।
  • নতুন হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন: মাল্টি-কোর ফাইবার এবং অত্যাধুনিক রাউটার, সুইচ-এর মতো ডিভাইসের প্রয়োজন হবে।
  • আন্তর্জাতিক মান: এই প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে প্রয়োগ করার জন্য অভিন্ন নিয়ম ও মানদণ্ডের প্রয়োজন হবে।
  • খরচ এবং সাশ্রয়ী প্রবেশাধিকার: এটিকে সাধারণ মানুষের জন্য সস্তা এবং সহজলভ্য করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

জাপানের 6G গতিও আলোচনায়

এই স্পিড রেকর্ড ছাড়াও, জাপান সম্প্রতি 6G ডিভাইসের একটি প্রোটোটাইপও পেশ করেছে, যার গতি ১০০Gbps এর বেশি বলে জানা গেছে। এই ডিভাইসটি ৩০০ ফুটের বেশি দূরত্ব থেকেও এত দ্রুত গতি সরবরাহ করে। এটি বিদ্যমান 5G-এর চেয়ে ২০ গুণ বেশি দ্রুত। ভারতে যেখানে 5G নেটওয়ার্কের বিস্তার এখনও চলছে, সেখানে জাপান পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিতে ঝাঁপ দিয়েছে।

Leave a comment