ভরতপুরের মোতি মহল থেকে রাজকীয় পতাকা সরিয়ে ফেলার ঘটনায় মহারাজা বিশ্বেন্দ্র সিং-এর পুত্র অনিরুদ্ধ সিং-এর বিরুদ্ধে সর্বজনীন ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। জনসাধারণ এবং জাট সমাজ প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি করছে।
ভরতপুর: রাজস্থানের ভরতপুর জেলায় মোতি মহল থেকে রাজকীয় পতাকা সরিয়ে ফেলার ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মহারাজা বিশ্বেন্দ্র সিং-এর পুত্র অনিরুদ্ধ সিং এই পতাকা সরিয়ে অন্য পতাকা লাগানোর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো জেলায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষয়টি স্বয়ং বিশ্বেন্দ্র সিং তাঁর ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানিয়েছেন।
এই ঘটনার পর জনমনে গভীর ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিশেষ করে জাট সমাজের লোকেরা সর্বজনীন পঞ্চায়েত ডেকে এর প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, যদি ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজকীয় পতাকাটি ফিরিয়ে না লাগানো হয়, তাহলে তাঁরা নিজেরাই প্রাসাদে গিয়ে এটি পুনরায় স্থাপন করবেন।
ভরতপুর রাজত্বে পিতা-পুত্রের মধ্যে সম্পত্তি বিবাদ
পূর্বের ভরতপুর রাজত্বের মহারাজা বিশ্বেন্দ্র সিং এবং তাঁর পুত্র অনিরুদ্ধ সিং-এর মধ্যে সম্পত্তি ও অধিকার নিয়ে বহু বছর ধরে বিরোধ চলছে। এই বিরোধের জেরে বিশ্বেন্দ্র সিং কয়েক বছর আগে তাঁর মোতি মহল ছেড়ে খামারবাড়িতে থাকতে শুরু করেন। তা সত্ত্বেও, তাঁর পুত্র অনিরুদ্ধ সিং সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত তাঁর পিতার বিরুদ্ধে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ ও মন্তব্য করে চলেছেন।
স্থানীয় মানুষেরা বলছেন, বিশ্বেন্দ্র সিং সবসময় সমস্ত জাতি ও ধর্মকে একসঙ্গে নিয়ে চলেছেন, যার ফলে জেলায় পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। অন্যদিকে, অনিরুদ্ধ সিং-এর ক্রমাগত সমালোচনামূলক মন্তব্য সমাজে অসন্তোষ ছড়িয়ে দিয়েছে।
পতাকা সরানোর পর পঞ্চায়েতে ঐক্যবদ্ধতা
বিশ্বেন্দ্র সিং ফেসবুকে পতাকা সরানোর খবর জানানোর পর বিভিন্ন স্থানে পঞ্চায়েত অনুষ্ঠিত হয়। সর্বজনীন সমাজের লোকেরা অনিরুদ্ধ সিং-এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা জেলা পুলিশ সুপার এবং কালেক্টরকে স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে, যদি ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পতাকাটি ফিরিয়ে না লাগানো হয়, তাহলে তাঁরা নিজেরাই মোতি মহলের দিকে মিছিল করবেন।
এছাড়াও, বিশ্বেন্দ্র সিং পূর্বে তাঁর পুত্র এবং স্ত্রী দিব্যা সিং-এর বিরুদ্ধে জাল স্বাক্ষর করে লকার ভাঙার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। জাট সমাজের একটি প্রতিনিধিদল আজ এই বিষয়টি জানতে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে।
১৯৮৫ সালে পতাকা সরানোর সময় রাজা মান সিং প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন
ভরতপুরে রাজকীয় পতাকার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৮৫ সালে কংগ্রেস সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী শিবচরণ মাথুর-এর সময়েও এই পতাকা সরিয়ে রাজনৈতিক পতাকা লাগানো হয়েছিল, যা রাজা মান সিং-কে ক্ষুব্ধ করেছিল। সেই সময় তিনি হেলিকপ্টারের হ্যাংগারে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টারকে তাঁর জিপ দিয়ে ধাক্কা মেরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
এই ইতিহাস প্রমাণ করে যে রাজকীয় পতাকা কেবল প্রতীকী নয়, বরং ভরতপুরের গৌরবময় ঐতিহ্য ও সম্মানের প্রতীক। এই কারণেই মানুষেরা অনিরুদ্ধ সিং-এর বিরুদ্ধে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ।
জেলা প্রশাসন স্থানীয় বাসিন্দা এবং জাট সমাজের সঙ্গে আলোচনা করেছে
বর্তমানে অনিরুদ্ধ সিং এবং তাঁর মা দিব্যা সিং ভরতপুরে নেই, তবে পুলিশ ও প্রশাসন পুরো পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে। জেলা প্রশাসন স্থানীয় বাসিন্দা এবং জাট সমাজের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই বিরোধের সমাধানে প্রশাসন নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। যদি ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পতাকাটি পুনরায় স্থাপন না করা হয়, তবে জনসাধারণের মহল অভিমুখে মিছিল করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।