ইংল্যান্ড সফর শেষ, নতুন করে উঠল প্রশ্ন
ভারতীয় দলের সাম্প্রতিক ইংল্যান্ড সফরে অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকার ট্রফি টেস্ট সিরিজ রোমাঞ্চকর সমাপ্তি ঘটিয়েছে। পাঁচ ম্যাচের লড়াই ২-২ সমতায় শেষ হলেও, আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছেন জসপ্রীত বুমরাহ। কারণ, পুরো সিরিজে তিনি মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। বাকি দুটি ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকায় ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে উঠেছে বড় বিতর্ক।
বুমরাহর তিন ম্যাচ, তবু সেরা পারফরম্যান্স
যতটুকু খেলেছেন, তাতেই যেন বাজিমাত করেছেন বুমরাহ। তিন ম্যাচে ১৪টি উইকেট, যার মধ্যে রয়েছে দুটি পাঁচ উইকেট হাউল। এমন পরিসংখ্যান অনেকের চোখে যথেষ্ট হলেও, প্রশ্ন উঠেছে—ভারতের প্রধান পেসার কেন পুরো সিরিজে খেললেন না? তার অনুপস্থিতিতে অন্য বোলাররা দায়িত্ব নিলেও এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিশেষজ্ঞমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ভুবনেশ্বরের ভরসা বুমরাহর পক্ষে
এবার সেই বিতর্কে মুখ খুললেন ভারতীয় পেসার ভুবনেশ্বর কুমার। এক পডকাস্টে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন—“যদি কোনও পেসার নিজের সর্বোচ্চটা দিতে পারে, তবে তাকে সব ম্যাচ খেলতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।” ভুবির মতে, বুমরাহর ফিটনেস ধরে রাখার জন্যই ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট জরুরি।
শরীরের চাপ ও মানসিক ক্লান্তি
ভুবি মনে করিয়ে দেন, বুমরাহ তিন ফরম্যাটেই নিয়মিত খেলে আসছেন বহু বছর ধরে। তার বোলিং অ্যাকশন এমন যে চোটের ঝুঁকি সবসময়ই প্রবল। তাছাড়া, তিনি প্রায়ই দলের সবচেয়ে কঠিন সময়ে বোলিং করেন—যেখানে চাপ মানসিকও, শারীরিকও। তাই প্রতিটি ম্যাচে খেললে ক্যারিয়ারের স্থায়িত্ব কমে যেতে পারে বলেই মনে করছেন ভুবনেশ্বর।
ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট জরুরি: ভুবির মত
একজন খেলোয়াড়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ার চাইলে তাকে ঠিকঠাকভাবে ব্যবহার করতে হবে। পাঁচটির মধ্যে তিন ম্যাচ খেলেও যদি সে ম্যাচ-উইনার হয়ে ওঠে, তবে সেটা যথেষ্ট,—বলেছেন ভুবি। তার মতে, নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট যদি জানে কোন ম্যাচে বুমরাহ সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলতে পারেন, তবে সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোটাই যুক্তিসঙ্গত।
এশিয়া কাপ নিয়ে ধোঁয়াশা
তবে এখানেই শেষ নয়। সামনে এশিয়া কাপ ২০২৫, যা অনুষ্ঠিত হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানেও বুমরাহর অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও তার ফর্ম ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এশিয়া কাপে ভারতের জন্য বিশাল ভরসা হতে পারে, ফিটনেস ম্যানেজমেন্টে শীর্ষ কর্তারা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
দলের সাফল্যে অন্য পেসারদের ভূমিকা
বুমরাহ মাঠে না থাকলেও ভারতের বাকি পেসাররা নিজেদের দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছেন। এজবাস্টন ও ওভাল টেস্টে ভারত জয় পেয়েছে বুমরাহ ছাড়া। ফলে অনেকে বলছেন, দল সামগ্রিকভাবে এখন শক্তিশালী, শুধু একজন বোলারের ওপর নির্ভরশীল নয়। তবে ভুবির মতে, দলের সেরা পেসারের ফিট থাকা সবসময়ই বাড়তি প্রাপ্তি।
সাবেকদের প্রশ্ন, সমসাময়িকের সমর্থন
কিছু প্রাক্তন ক্রিকেটার বুমরাহর ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, বড় সিরিজে দলের প্রধান অস্ত্রকে একশো শতাংশ ব্যবহার করা উচিত। তবে ভুবনেশ্বরের মতো বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটাররা বরং আধুনিক পদ্ধতিকে সমর্থন করছেন। ফ্রিকোয়েন্ট ইনজুরির যুগে খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে ব্যবহার করাই নাকি মূল চাবিকাঠি।
ভুবনেশ্বরের নিজের অভিজ্ঞতা
ভুবি নিজেও ভালো করেই জানেন চোটের ধাক্কা কেমন। একাধিকবার চোটের কারণে তিনি দীর্ঘদিন জাতীয় দল থেকে বাইরে ছিলেন। শেষবার ভারতের হয়ে খেলেছেন ২০২২ সালের নভেম্বরে। তাই তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারেন—অতিরিক্ত চাপ কীভাবে একজন ফাস্ট বোলারের ক্যারিয়ারকে ছোট করে দিতে পারে।
ভুবির ঝলমলে পরিসংখ্যান
৩৫ বছর বয়সী ভুবনেশ্বর এখন পর্যন্ত ভারতের হয়ে ২১টি টেস্ট, ১২১টি ওয়ানডে ও ৮৭টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। সবমিলিয়ে তার আন্তর্জাতিক উইকেট সংখ্যা ২৯৪। তবে বয়স ও ইনজুরির কারণে এখন জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই হয়তো আরও বেশি দৃঢ়ভাবে তিনি বুমরাহর পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
সামনে বড় টুর্নামেন্ট, কী হবে বুমরাহর ভাগ্য?
এখন ক্রিকেট মহলে একটাই প্রশ্ন—এশিয়া কাপে কি দেখা যাবে বুমরাহকে? তার ফর্ম নিঃসন্দেহে ভারতের বড় শক্তি, কিন্তু তার ফিটনেস ম্যানেজমেন্টই শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে আসন্ন টুর্নামেন্টে তিনি কতটা খেলতে পারবেন। ভুবনেশ্বরের মতো অনেকে বলছেন, তিন ম্যাচ খেললেও যদি সেই তিন ম্যাচে বুমরাহ জেতান, সেটাই হবে আসল সাফল্য।