পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে চলা দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষ হল সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি বি. ভি. নাগরত্না শুনানিতে স্পষ্ট করে বলেন, “যখন কোনও পণ্যের উৎপাদনে অনুমতি দেওয়া হয়, তখন সেই পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়াও একটি স্বাভাবিক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া। বিজ্ঞাপন ব্যবসার মূল চালিকা শক্তি। এর পরেই আদালত মামলাটি বন্ধের নির্দেশ দেয়।
আইএমএ-র অভিযোগের ভিত্তি
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (IMA) অভিযোগ করেছিল, পতঞ্জলির কিছু বিজ্ঞাপনে এমন দাবি করা হয়েছে যে তাদের তৈরি আয়ুর্বেদিক পণ্য বহু রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞাপনগুলোতে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি তথা অ্যালোপ্যাথিকে অপ্রয়োজনীয় বা নিচু করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়। এই কারণেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল চিকিৎসক সংগঠন।
আদালতের রায় ও সতর্কবার্তা
শীর্ষ আদালত মামলা খারিজ করলেও পতঞ্জলি আয়ুর্বেদকে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছে। বিজ্ঞাপন করার সময় যেন তারা বিভ্রান্তিকর বা অতিরঞ্জিত দাবি না করে, সে বিষয়ে সচেতন থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আদালতের মতে, বিজ্ঞাপন করা আইনসম্মত হলেও ভুয়ো প্রচার একেবারেই মেনে নেওয়া হবে না।
কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা
শুনানিতে কেন্দ্র সরকারের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, “ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স রুলস, ১৯৪৫”–এর ১৭০ নম্বর ধারা ইতিমধ্যেই বাদ দেওয়া হয়েছে। আগে এই নিয়মে বলা ছিল, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা বা আয়ুর্বেদিক ওষুধের বিজ্ঞাপন করার আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। নতুন সিদ্ধান্তে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। তবে মেহতা এও আশ্বাস দেন, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রুল ১৭০ নিয়ে বিতর্ক
আইনজীবী প্রণব সচদেবা অবশ্য রুল ১৭০ বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দেন। তাঁর বক্তব্য, “অনেক সাধারণ মানুষ খুব সহজেই প্রতারিত হতে পারেন। যদি কোনও বিজ্ঞাপনে বলা হয় যে একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ শতভাগ রোগমুক্তি দেবে, তাহলে মানুষ প্রলুব্ধ হয়ে যাবেন। এটা বিপজ্জনক।” তবে মেহতা পাল্টা যুক্তি দেন, সাধারণ মানুষের বুদ্ধিমত্তা নিয়েও সন্দেহ করা উচিত নয়।
আদালতের চূড়ান্ত মন্তব্য
আদালত রায়ের শেষে জানায়, মামলার মূল উদ্দেশ্য ইতিমধ্যেই পূরণ হয়েছে। তাই আর এই মামলা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। একই সঙ্গে আদালত স্পষ্ট করে দেয়—পতঞ্জলি হোক বা অন্য কোনও সংস্থা, কেউই ভুয়ো বা বিভ্রান্তিকর দাবি করে বিজ্ঞাপন চালাতে পারবে না।
রুল বাতিলের পর নতুন প্রশ্ন
রুল ১৭০ বাদ যাওয়ায় এখন আয়ুর্বেদিক সংস্থাগুলি সহজে বিজ্ঞাপন দিতে পারবে। তবে তার ফলে বিভ্রান্তিকর প্রচারের ঝুঁকি বাড়বে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসক মহল। আধুনিক চিকিৎসা বনাম আয়ুর্বেদের টানাপোড়েন যে আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে, তা পরিষ্কার।
পতঞ্জলি–আইএমএ দ্বন্দ্বে জনমত
পতঞ্জলির বিরুদ্ধে এই মামলায় সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও ধরা পড়ছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে। অনেকের মতে, বিজ্ঞাপন ব্যবসারই অঙ্গ—তবে অতিরঞ্জিত দাবি করলে তা প্রতারণার সমান। অন্যদিকে, পতঞ্জলির সমর্থকরা মনে করেন, আধুনিক চিকিৎসা সব সময় সমাধান দিতে পারে না, তাই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার প্রচার বন্ধ করার কোনও মানে হয় না।
সমাপ্তি, তবে বিতর্ক বহাল
মামলা খারিজ হলেও, এই রায় দেশের স্বাস্থ্য–ব্যবস্থা ও বিজ্ঞাপন নীতিতে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। বিজ্ঞাপন স্বাভাবিক ব্যবসায়িক দিক হলেও, জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত কোনও পণ্যের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দাবি কতটা গ্রহণযোগ্য—তা নিয়ে আলোচনার শেষ হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের রায় একদিকে পতঞ্জলিকে স্বস্তি দিলেও, অন্যদিকে আরও বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দিল তাদের কাঁধে।