প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (P&G) পাকিস্তানে তাদের উৎপাদন এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানি এখন থার্ড-পার্টি ডিস্ট্রিবিউশন মডেলের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করবে। কর্মীদের বিদেশে নিয়োগ বা সেপারেশন প্যাকেজ দেওয়া হবে। শেল এবং ফাইজারের পর P&G-এর এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের অর্থনীতি এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য একটি চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়।
পাকিস্তান: প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (P&G) পাকিস্তানে তাদের টাইড, প্যাম্পার্স এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানি এখন পাকিস্তানে থার্ড-পার্টি ডিস্ট্রিবিউশন মডেলের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পণ্য সরবরাহ করবে। কর্মীদের বিদেশি নিয়োগ বা সেপারেশন প্যাকেজ দেওয়া হবে। শেল এবং ফাইজারের পর এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রস্থানকে নির্দেশ করে।
ব্যবসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত
P&G জানিয়েছে যে এই সিদ্ধান্ত তাদের বৈশ্বিক পুনর্গঠন কর্মসূচির অংশ। কোম্পানি ইতিমধ্যেই তাদের ব্র্যান্ডের সংখ্যা কমানো এবং আগামী দুই বছরে ৭,০০০ চাকরি কমানোর ঘোষণা করেছিল। ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ, দুর্বল চাহিদা এবং ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য শুল্কের কারণে কোম্পানি এই পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল এখন সেইসব বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যারা পাকিস্তানে তাদের ব্যবসা কমিয়েছে বা বন্ধ করেছে।
কর্মচারীরা প্যাকেজ পাবেন
P&G জানিয়েছে যে পাকিস্তানে কর্মরত কর্মীদের দুটি বিকল্প দেওয়া হবে। যেসব কর্মীর জন্য বিদেশে নিয়োগ সম্ভব হবে, তাদের সেখানে স্থানান্তরিত করা হবে। বাকি কর্মীদের সেপারেশন প্যাকেজ অফার করা হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কোম্পানি পাকিস্তানে তাদের ব্যবসায়িক মডেলকে থার্ড-পার্টি ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছে, যাতে পরিচালনার খরচ কমানো যায়।
জিলেট পাকিস্তানের রাজস্ব গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। দুই বছর আগে এটি ৩ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছিল, কিন্তু জুন ২০২৫-এ শেষ হওয়া আর্থিক বছরে এটি প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। কোম্পানির বোর্ড ডিলিস্টিং এবং অন্যান্য সম্ভাব্য পদক্ষেপ বিবেচনা করার জন্য মিটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পাশাপাশি, শেয়ারের মূল্য ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তিন সপ্তাহের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
ব্যবসার সূচনা ও সম্প্রসারণ
P&G ১৯৯১ সালে পাকিস্তানে তাদের ব্যবসা শুরু করেছিল। প্যাম্পার্স, এরিয়াল, হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স এবং প্যান্টিন-এর মতো ব্র্যান্ড নিয়ে কোম্পানি দ্রুত সেখানকার শীর্ষস্থানীয় কনজিউমার গুডস কোম্পানি হয়ে ওঠে। ১৯৯৪ সালে কোম্পানি একটি সাবান প্ল্যান্ট এবং ২০১০ সালে একটি ডিটারজেন্ট প্ল্যান্ট কিনে তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ করে। এখন কোম্পানি থার্ড-পার্টি ডিস্ট্রিবিউশন মডেল গ্রহণ করে পণ্যের সরবরাহ চালিয়ে যাবে।
জিলেট পাকিস্তানের প্রাক্তন CEO সাদ আমানুল্লাহ খান এই সিদ্ধান্তের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান যে উচ্চ বিদ্যুৎ খরচ, খারাপ অবকাঠামো এবং নিয়ন্ত্রক চাপ ব্যবসাকে প্রভাবিত করেছে। তার মতে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রস্থান সরকারের জন্য একটি ইঙ্গিত যে ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি প্রয়োজন।
পাকিস্তানের অর্থনীতিতে প্রভাব
এর আগে শেল এবং ফাইজারের মতো বড় ব্র্যান্ডগুলোও পাকিস্তান থেকে প্রস্থান করেছিল। এখন P&G-এর এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। দুর্বল মুদ্রা, উচ্চ করের হার এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য পাকিস্তানকে কম আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
P&G স্পষ্ট করেছে যে তারা পাকিস্তানে তাদের গ্রাহকদের পরিষেবা প্রদান চালিয়ে যাবে। কোম্পানির থার্ড-পার্টি ডিস্ট্রিবিউশন মডেলের মাধ্যমে টাইড, প্যাম্পার্স এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের পণ্য এখনও দোকানে পৌঁছাবে। তবে, উৎপাদন এবং সরাসরি কার্যক্রম এখন বন্ধ করে দেওয়া হবে।