বিহার নির্বাচন 2025: রাহুল গান্ধীর সক্রিয়তায় মহাজোটের প্রচারে নতুন গতি, তেজস্বীর পাশে শক্তিশালী 'কান্ডারি'

বিহার নির্বাচন 2025: রাহুল গান্ধীর সক্রিয়তায় মহাজোটের প্রচারে নতুন গতি, তেজস্বীর পাশে শক্তিশালী 'কান্ডারি'

২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে মহাজোটের কৌশল রাহুল গান্ধীর সক্রিয়তায় আরও শক্তিশালী হয়েছে। তেজস্বী যাদব মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী, যেখানে রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রচারে নেমে প্রার্থী ও কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা সঞ্চার করছেন। জোটের শক্তি ও ঐক্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বিহার নির্বাচন 2025: বিহার বিধানসভা নির্বাচন এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক মহাভারতের রূপ নিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে সব দল নিজেদের শক্তি ও কৌশল নিয়ে সক্রিয়। এনডিএ-তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং চিরাগ পাসওয়ান সহ সমস্ত নেতা নির্বাচনী রণক্ষেত্রে নেমে পড়েছেন। অন্যদিকে, মহাজোটে আরজেডির তেজস্বী যাদব একাই নির্বাচনী অভিযান চালাচ্ছিলেন।

মহাজোটের জন্য এই নির্বাচন কেবল একটি নির্বাচনী যুদ্ধ নয়, বরং ক্ষমতা দখলের এক চূড়ান্ত লড়াই। তেজস্বী যাদবকে বিহারে মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে গণ্য করা হয়, কিন্তু এখন নির্বাচনী রণক্ষেত্রে তাঁর একজন অভিজ্ঞ নেতার প্রয়োজন, যিনি তাঁকে পথ দেখাবেন এবং প্রচারে নতুন শক্তি যোগাবেন। এই ভূমিকায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মহাজোটের রাজনৈতিক কান্ডারি হিসাবে বিহারে পৌঁছাচ্ছেন।

রাহুল গান্ধীর বিহারে সক্রিয়তা

২৪ সেপ্টেম্বরের পর এই প্রথম রাহুল গান্ধী বিহারে সক্রিয় হচ্ছেন। তিনি মুজাফফরপুর থেকে মহাজোটের প্রচার অভিযান শুরু করবেন। এই যাত্রায় তেজস্বী যাদব এবং মহাজোটের অন্যান্য নেতারাও তাঁর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেবেন। বিহারের জনগণের সামনে মহাজোট তাদের ঐক্যের বার্তা তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

রাহুল গান্ধীর আগমনে মহাজোটের প্রার্থী ও কর্মীদের মধ্যে নতুন শক্তির সঞ্চার হবে। গত মাসে রাহুল গান্ধীর অনুপস্থিতিতে কংগ্রেস এবং মহাজোটের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা গিয়েছিল। আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়েছিল এবং জোটের মধ্যে মতভেদ দেখা গিয়েছিল। রাহুল গান্ধীর আগমনে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মহাজোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণের সাত দিন আগে রাহুল গান্ধী মুজাফফরপুর থেকে 'মিশন-বিহার' শুরু করবেন। সাকরা এবং দারভাঙ্গায় তিনি মহাজোটের প্রার্থীদের সমর্থনে সমাবেশ করবেন। এই সময় আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ সাহানিও তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয়। আগামী দশ দিন ধরে রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বিহারে একের পর এক জনসভা করবেন। এই সময়ে দুজনের জুটি মহাজোটের শক্তি ও ঐক্য প্রদর্শনের চেষ্টা করবে।

রাহুল গান্ধীর অনুপস্থিতির প্রভাব

গত মাসে বিহারে রাহুল গান্ধীর অনুপস্থিতি মহাজোট এবং কংগ্রেসকে দুর্বল করেছিল। তৃণমূল স্তরে দল এবং জোটের কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ কমে গিয়েছিল। আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিবাদ এবং জোটের মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছিল। তেজস্বী যাদব একাই রাজনৈতিক রণক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন, যখন তাঁর পিতা লালু প্রসাদ যাদব স্বাস্থ্যগত কারণে সক্রিয় থাকতে পারেননি এবং ভাই তেজ প্রতাপ যাদব ভিন্ন পথে ছিলেন।

মহাজোটের এই পরিস্থিতি এনডিএ-র জন্য একটি সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং অন্যান্য নেতারা বিহারে সক্রিয় হয়ে প্রচার অভিযানকে আরও ধারালো করে তুলছিলেন। এর বিপরীতে তেজস্বী যাদব একাই মহাজোটের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বলে মনে হচ্ছিল।

মহাজোটের কৌশলে পরিবর্তন

তেজস্বী যাদব ভোটার অধিকার যাত্রার সময় কিছু জেলায় 'বিহার যাত্রা' করে উদ্দীপনা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু রাহুল গান্ধীর অনুপস্থিতিতে এই প্রচেষ্টা সীমিত প্রভাব ফেলেছিল। এখন রাহুল গান্ধী বিহারে মহাজোটের প্রচার অভিযানে সক্রিয় হতে চলেছেন।

রাহুল গান্ধী প্রথম দিন সাকরায় কংগ্রেস প্রার্থীর জন্য জনসভা করবেন এবং তারপর তেজস্বী যাদবের সঙ্গে দারভাঙ্গায় সমাবেশ করবেন। এই সময়ে মহাজোটের সমস্ত নেতা একটি মঞ্চে আসবেন। ৩০ অক্টোবর রাহুল গান্ধী দুটি সমাবেশ করবেন। বিহারে তাঁর মোট ১২ থেকে ১৪টি সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খাড়গের অবদান

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ১ নভেম্বর থেকে বিহারে নির্বাচনী প্রচারে নামবেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ৩১ অক্টোবর গোপালগঞ্জ থেকে প্রচার অভিযান শুরু করবেন। রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ছাড়াও রাজ্যসভার সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়হিও মহাজোটের প্রচারে সক্রিয় থাকবেন।

রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নির্বাচনী জুটি মহাজোটে নতুন শক্তি সঞ্চার করছে। এই জুটি বিহারের ভোটারদের কাছে মহাজোটের শক্তি ও ঐক্যের বার্তা দেবে।

তেজস্বী যাদব মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচনী রণক্ষেত্রে একা নন, তবে তাঁর রাহুল গান্ধীর মতো রাজনৈতিক কৌশল এবং দিকনির্দেশনার প্রয়োজন। রাহুল গান্ধীর আগমনে মহাজোটের প্রার্থী ও কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা বাড়বে।

বিহার নির্বাচন 2025-এ মহাজোটের লক্ষ্য

মহাজোট তাদের ইশতেহার প্রকাশ করেছে। এখন রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নির্বাচনী প্রচারে নামছেন। তেজস্বী যাদবের জন্য রাহুল গান্ধী বিহারে নির্বাচনী সারথি হবেন। মহাজোটের প্রতিটি পদক্ষেপ তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে হচ্ছে, তা পোস্টার হোক বা ইশতেহার।

বিহারের ভোটাররা এখন মহাজোটের ঐক্য, রাহুল-প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সক্রিয়তা এবং তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বকে দেখবে। এই নির্বাচন মহাজোটের জন্য ক্ষমতা অর্জনের এক চূড়ান্ত লড়াই।

মহাজোট কি সরকার গঠন করতে পারবে?

মহাজোট এখন তাদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছে। রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদবের জুটি জোটকে নতুন শক্তি দিচ্ছে। যদিও এনডিএ-ও শক্তিশালী এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সহ সমস্ত নেতা সক্রিয়।

এই নির্বাচনে মহাজোটের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ভোটারদের বিশ্বাস করানো যে, জোটের সরকার গঠিত হলে বিহারে উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা আসবে। রাহুল গান্ধীর বিহারে সক্রিয়তা, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সমর্থন এবং তেজস্বী যাদবের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি জোটকে লাভবান করতে পারে।

Leave a comment