ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়াকে ইয়েমেনে ১৬ই জুলাই ফাঁসি দেওয়ার কথা রয়েছে, যা বন্ধ করার জন্য রাজস্থানের চার্মেশ শর্মা রাষ্ট্রপতির কাছে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন।
নিমিশা প্রিয়া: কেরালার বাসিন্দা ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়াকে ইয়েমেনে ১৬ই জুলাই, ২০২৫-এ ফাঁসি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এই খবর প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেশজুড়ে উদ্বেগ ও অনুভূতির ঢেউ উঠেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই গুরুতর বিষয়ে রাজস্থান থেকেও আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে। বুন্দি জেলার সমাজকর্মী চার্মেশ শর্মা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে জরুরি ভিত্তিতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন, যাতে ভারতীয় নাগরিক নিমিশা প্রিয়ার জীবন বাঁচানো যায়।
রাজস্থানের বুন্দি থেকে ওঠা আওয়াজ
রাজস্থানের বুন্দি শহর থেকে সমাজকর্মী চার্মেশ শর্মা এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন, যেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে মানবিক ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানানো হয়েছে এবং ভারত সরকারের মাধ্যমে ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন যে, একজন ভারতীয় মহিলা, যিনি বহু বছর ধরে সেখানে জেলে বন্দি রয়েছেন, তাঁর জীবন বাঁচাতে দেশের একজোট হয়ে চেষ্টা করা উচিত।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও অভিযোগ দায়ের
চার্মেশ শর্মা শুধু রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ে আবেদন করেননি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও এই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। তাঁর আবেদনে বলা হয়েছে যে নিমিশা প্রিয়া একজন ভারতীয় নাগরিক এবং তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িত এই বিষয় অত্যন্ত গুরুতর ও মানবিক। তাই ভারত সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা এবং আইনি সহায়তাও নিশ্চিত করা।
নিমিশা প্রিয়ার সংগ্রাম – ৮ বছর ধরে জেলে
নিমিশা প্রিয়া একজন ভারতীয় নার্স যিনি কাজের সন্ধানে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে তাঁর সঙ্গে এমন একটি ঘটনা ঘটে যা তাঁর জীবন সম্পূর্ণভাবে বদলে দেয়। ইয়েমেনে তাঁর ক্লিনিকের পার্টনার, যিনি একজন ইয়েমেনি নাগরিক ছিলেন, তাঁর পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেন এবং জোর করে সেখানেই আটকে রাখেন। প্রিয়া যখন ভারতে ফেরার চেষ্টা করেন, তখন তিনি তাকে বাধা দেন।
বাধ্য হয়ে নেওয়া বিপজ্জনক পদক্ষেপ
জানা যায়, পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে নিমিশা প্রিয়া ওই ইয়েমেনি নাগরিককে নেশা করার ইনজেকশন দিয়েছিলেন, যাতে তিনি নথিপত্র নিয়ে পালাতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ওভারডোজের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর নিমিশাকে ইয়েমেন পুলিশ গ্রেফতার করে এবং তারপর থেকে তিনি সানার জেলে বন্দি রয়েছেন। প্রায় আট বছর ধরে তিনি জেলে বন্দি এবং এখন তাঁকে ১৬ই জুলাই ফাঁসি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারত সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন
এই গুরুতর পরিস্থিতিতেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও দৃঢ় বিবৃতি বা পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এই কারণেই সাধারণ নাগরিক এবং সমাজকর্মীরা এগিয়ে এসে আওয়াজ তুলছেন। চার্মেশ শর্মার মতো লোকেরা প্রশ্ন তুলছেন যে, বিদেশে আটকে পড়া অন্যান্য ভারতীয়দের সরকার বাঁচানোর চেষ্টা করলে, নিমিশা প্রিয়ার ক্ষেত্রে এত নীরবতা কেন?
কীভাবে মিলতে পারে মুক্তির পথ?
ইয়েমেনে ফাঁসির সাজা এড়ানোর বা বাতিল করার একটি উপায় হল 'ব্লাড মানি' অর্থাৎ মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, যা ইয়েমেনের বিচারব্যবস্থায় স্বীকৃত। আগেও এই বিষয়ে চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু অর্থনৈতিক বাধা এবং সঠিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অভাবে কোনও ফল হয়নি। এখন যখন ফাঁসির তারিখ খুব কাছে, তখন ভারত সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ করা উচিত।
জনতা ও সমাজকর্মীদের আশা – রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যায়বিচার
এখন সারা দেশের নজর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং ভারত সরকারের দিকে। দেশবাসীর অনুভূতি হল, একজন ভারতীয় মহিলার জীবন বাঁচাতে সব সম্ভাব্য উপায় অবলম্বন করা হোক। চার্মেশ শর্মার মতো লোকেরা এই মানবিক লড়াইকে নতুন দিশা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেছেন যে, সময় থাকতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হলে নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচানো যেতে পারে।