বিহারের শিক্ষকদের দুর্গাপূজার ছুটি: শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

বিহারের শিক্ষকদের দুর্গাপূজার ছুটি: শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

বিহারের নবরাত্রি ও দুর্গাপূজার সময় শিক্ষকদের ছুটিতে ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা গেছে। ৩,০০০ এরও বেশি শিক্ষক ছুটিতে আছেন, যার ফলে বিদ্যালয়ের কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে। বেতন সংক্রান্ত অভিযোগ এবং নির্বাচনী কাজের মতো দায়িত্বও বেড়েছে।

পাটনা: বিহারের নবরাত্রি ও দুর্গাপূজার সময় শিক্ষা দপ্তর (Education Department) শিক্ষকদের ছুটির জন্য বিপুল সংখ্যক আবেদন পাচ্ছে। সাধারণ দিনগুলিতেও প্রতিদিন প্রায় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ শিক্ষক ছুটিতে থাকেন। উৎসবের সময় এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। দুর্গাপূজার প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষক ছুটির জন্য অনলাইন পোর্টালে আবেদন করেছেন।

জেলায় শিক্ষকদের অবস্থা

পাটনা জেলায় মোট ২৪,০০০ শিক্ষক কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে প্রায় ১,০০০ শিক্ষক অন্য জায়গায় প্রেষণে (deputation) আছেন এবং বাকিরা স্থানীয় বিদ্যালয়ে উপস্থিতি (attendance) দেন। উৎসবের সময় ছুটির জন্য বিপুল সংখ্যক আবেদন আসায় বিভাগকে পরিচালনায় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, ছুটির প্রধান কারণ সাধারণত দুর্গাপূজা এবং অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব।

উৎসবের সময় শিক্ষক সংকট

সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে দুর্গাপূজার ছুটি ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার প্রায় ১,০০০ শিক্ষক ২২ সেপ্টেম্বর থেকেই ছুটির আবেদন জমা দিয়েছেন। বেশিরভাগ আবেদন সেই শিক্ষকদের, যারা দূরবর্তী এলাকা থেকে বিদ্যালয়ে আসেন। এতে বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক সংকটের সমস্যা বেড়ে যায় এবং স্থানীয় শিক্ষকরাই বিদ্যালয় পরিচালনায় ভরসা হন।

বেতন নিয়ে শিক্ষকদের অভিযোগ

শিক্ষকরা পোর্টালে বেতন (salary) নিয়েও অভিযোগ নথিভুক্ত করছেন। জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু শিক্ষক অভিযোগ করেছেন যে তাদের বেতন নিয়মিত হয়নি। এতে বেশিরভাগই নবনিযুক্ত (newly appointed) শিক্ষক অন্তর্ভুক্ত আছেন। বিভাগীয় স্তরে এই সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে।

ছুটিতে যাওয়া শিক্ষক এবং নির্বাচনী কাজ

মহেন্দ্রু অঞ্চলের একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন যে, দুর্গাপূজা, ছট, দীপাবলি এবং হোলির মতো উৎসবের সময় শিক্ষকদের ব্যাপক অভাব দেখা যায়। দূরবর্তী এলাকার অধিকাংশ শিক্ষক দীর্ঘ ছুটিতে চলে যান। স্থানীয় শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের ভরসায় বিদ্যালয়গুলি পরিচালিত হয়। কিছু শিক্ষক নির্বাচনী কাজে বিএলও (Booth Level Officer) হিসাবেও নিযুক্ত থাকেন, যার ফলে বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকের সংখ্যা আরও কমে যায়।

সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ছুটি

উৎসব এবং শীতকালীন ছুটি বিবেচনা করে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলিতে মোট ২২ দিনের ছুটি থাকবে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  • ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর: দুর্গাপূজা
  • ২০ থেকে ২৯ অক্টোবর: ধনতেরাস, দীপাবলি, চিত্রগুপ্ত পূজা, ভাইফোঁটা এবং ছট পূজা
  • ৫ নভেম্বর: কার্তিক পূর্ণিমা এবং গুরু নানক জয়ন্তী
  • ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর: শীতকালীন ছুটি এবং ক্রিসমাস-ডে

এই সময়ে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য স্থানীয় শিক্ষক এবং সহকারী কর্মীদের উপর বেশি চাপ পড়বে।

শিক্ষা দপ্তরের চ্যালেঞ্জসমূহ

উৎসবের সময় বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের ছুটি নেওয়ায় বিভাগকে পরিচালনা (administration) জনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক সংকট, বেতন সংক্রান্ত অভিযোগ এবং নির্বাচনী কাজের মতো দায়িত্ব বেড়ে যায়। বিভাগকে এটি নিশ্চিত করতে হয় যে শিশুদের পড়াশোনা যেন প্রভাবিত না হয় এবং বিদ্যালয় পরিচালনা মসৃণভাবে চলতে থাকে।

Leave a comment