ধমদাহা বিধানসভা ২০২৫: লেসি সিং-এর আধিপত্যে কি ফাটল ধরাতে পারবে নতুন দলগুলি?

ধমদাহা বিধানসভা ২০২৫: লেসি সিং-এর আধিপত্যে কি ফাটল ধরাতে পারবে নতুন দলগুলি?

ধমদাহা বিধানসভা আসনে ২০২৫ বিহার নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। জেডিইউ-এর লেসি সিং-এর শক্তিশালী আধিপত্যের মধ্যে নতুন দলগুলিও ময়দানে নামছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোমাঞ্চকর ও নির্ণায়ক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, গোটা রাজ্যে নির্বাচনী তৎপরতা ততই বাড়ছে। এর মধ্যে, পূর্ণিয়া জেলার ধমদাহা বিধানসভা আসনের দিকে সব দলের নজর রয়েছে। ধমদাহা আসনের রাজনৈতিক ইতিহাস গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায় যে এই এলাকাটি পূর্বে কংগ্রেস এবং সমাজতান্ত্রিক আদর্শের দলগুলির কেন্দ্র ছিল। ১৯৫৭ সালে এই আসনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যদিও ১৯৫২ সালে এটি সহ-কোঢ়ার সাথে একটি যৌথ বিধানসভা কেন্দ্র ছিল। প্রাথমিক বছরগুলিতে কংগ্রেসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল এবং তারা এখানে মোট ছয়বার জয়লাভ করেছিল।

সমাজতান্ত্রিক দলগুলির প্রভাব

কংগ্রেসের পর ধমদাহায় সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রভাব দেখা যায়। জনতা দল, জনতা পার্টি এবং আরজেডি-এর মতো দলগুলি এই আসনে সফলতা লাভ করে। ১৯৯৫ সালে দিলীপ কুমার যাদব জনতা দলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন। এরপরে ২০০৫ (অক্টোবর) সালে তিনি আরজেডি-এর টিকিটে জয়লাভ করেন। এভাবেই ধমদাহার রাজনৈতিক সমীকরণ পরিবর্তিত হয়েছে, তবে এটি সবসময়ই একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং নির্ণায়ক আসন ছিল।

জেডিইউ-এর শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হওয়া

২০০০-এর দশকের শুরুতে লেসি সিং তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেন এবং এই আসনের ইতিহাস বদলে দেন। তিনি প্রথম ২০০০ সালে সমতা পার্টির টিকিটে নির্বাচনে জিতে ধমদাহায় তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ২০১০, ২০১৫ এবং ২০২০ সালে জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর টিকিটে টানা তিনটি নির্বাচনে জিতে এই আসনটিকে জেডিইউ-এর একটি শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত করেন। শুধুমাত্র ২০০৫ (অক্টোবর) সালের নির্বাচনে তাঁকে আরজেডি-এর দিলীপ কুমার যাদবের কাছে হারের মুখে পড়তে হয়েছিল।

লেসি সিং-এর জয়

২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ধমদাহা আসনে জেডিইউ-এর প্রার্থী লেসি সিং ৯৭,০৫৭ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আরজেডি-এর দিলীপ কুমার যাদব ৬৩,৪৬৩ ভোট পেয়েছিলেন। লেসি সিং ৩৩,৫৯৪ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। এই নির্বাচনে মোট ১৮ জন প্রার্থী ময়দানে ছিলেন, যার মধ্যে এলজেপি, আরএলএসপি, এনসিপি এবং বেশ কয়েকজন নির্দল প্রার্থীও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

ভোটার এবং ভোটের শতাংশ

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ধমদাহা বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ৩,১৫,৭৫৪ জন ভোটার ছিলেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছিলেন ১,৬৩,১০১ জন এবং মহিলা ভোটার ছিলেন ১,৫২,৬৪৬ জন। ভোটের শতাংশ ছিল ৬৩.৩৯%। এই পরিসংখ্যান দেখায় যে এই এলাকার ভোটাররা সক্রিয় এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বেশ আগ্রহী।

২০২৫ সালে নতুন দলগুলির প্রবেশ

আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এ ধমদাহা আসনে জেডিইউ-এর শক্তিশালী আধিপত্যের মধ্যে নতুন দলগুলির প্রবেশ এটিকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলছে। প্রশান্ত কিশোরের নতুন দল 'জন সুরাজ' এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (এএপি) ও নির্বাচনী ময়দানে নামছে। এই নতুন দলগুলির আগমনের ফলে ধমদাহাসহ সমগ্র বিহারের সব ২৪৩টি বিধানসভা আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যেতে পারে।

সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা

লেসি সিং-এর টানা জয় এবং জেডিইউ-এর শক্তিশালী ঘাঁটি হওয়া সত্ত্বেও, এবার রাজনৈতিক দলগুলির কৌশল এবং ভোটারদের ধারণা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ, জনস্বার্থ নীতি এবং স্থানীয় ইস্যুগুলির ভিত্তিতে ভোটাররা তাঁদের সিদ্ধান্ত নেবেন। নতুন দলগুলির অংশগ্রহণের ফলে ভোট বিভাজনের সম্ভাবনা বেড়েছে, যা প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আগের চেয়ে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলতে পারে।

ধমদাহার রাজনৈতিক সমীকরণ

ধমদাহা বিধানসভা আসনের রাজনৈতিক সমীকরণ বছরের পর বছর ধরে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাথমিক বছরগুলিতে কংগ্রেসের শক্তিশালী আধিপত্য ছিল। এরপর সমাজতান্ত্রিক দলগুলি এটিকে তাদের প্রভাব বলয়ে নিয়ে আসে। ২০০০-এর দশকে লেসি সিং এই আসনে জেডিইউ-এর শক্তিশালী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে এটিকে দলের ঘাঁটিতে পরিণত করেন। আজও ভোটারদের মধ্যে তাঁর প্রভাব উচ্চ এবং তিনি টানা চতুর্থবার জিততে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Leave a comment