বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) নিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে। নির্বাচন কমিশন প্রক্রিয়াটিকে বৈধ বলেছে, যেখানে এনজিও এবং নেতারা এটিকে অসাংবিধানিক এবং অস্বচ্ছ বলেছেন।
Bihar voter list: বিহারের নির্বাচন কমিশন (Election Commission) কর্তৃক শুরু হওয়া বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া (Special Intensive Revision - SIR) নিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) শুনানি হবে। এই প্রক্রিয়া নিয়ে মোট ২৮টি আবেদন দাখিল করা হয়েছে, যেখানে এটিকে অস্বচ্ছ এবং অসাংবিধানিক বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রক্রিয়াটিকে বৈধ এবং স্বচ্ছ বলে হলফনামা দাখিল করেছে। এনজিও, রাজনৈতিক দল এবং সমাজকর্মীরা এতে গুরুতর আপত্তি জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের SIR প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ২৪ জুন ভোটার তালিকা (voter list)-র বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (SIR) আদেশ জারি করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ভোটার তালিকা শুদ্ধ করা, অযোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া এবং যোগ্য ভোটারদের যুক্ত করা। নির্বাচন কমিশনের দাবি, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে চলছে।
নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হলফনামায় জানিয়েছে, সমস্ত প্রধান রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে এবং ১.৫ লক্ষেরও বেশি বুথ স্তরের এজেন্ট (Booth Level Agents - BLA) নিযুক্ত করা হয়েছে।
আবেদনকারীদের প্রধান আপত্তি
এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মোট ২৮টি আবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রধান আবেদনকারী এনজিও 'অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস' (Association for Democratic Reforms - ADR)।
ADR-এর অভিযোগ, SIR প্রক্রিয়া নির্বাচন পঞ্জীয়ন আধিকারিককে (Electoral Registration Officer - ERO) সীমাহীন ক্ষমতা দেয়, যার ফলে কোনও স্বচ্ছতা ছাড়াই লক্ষ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া যেতে পারে। তাঁদের আরও অভিযোগ, ভোটার তালিকা থেকে আধার কার্ড (Aadhaar Card) এবং রেশন কার্ড (Ration Card)-এর মতো জরুরি নথি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এর পেছনে কোনও উপযুক্ত কারণ জানানো হয়নি।
প্রতারণা এবং অনিয়মের অভিযোগ
ADR তাদের হলফনামায় অভিযোগ করেছে যে এই পুরো প্রক্রিয়া ভোটারদের সঙ্গে একটি "প্রতারণা"। তাদের দাবি, অনেক স্থানে বুথ স্তরের আধিকারিক (Booth Level Officer - BLO) নিজেরাই ফর্ম পূরণ করছেন। মৃত ব্যক্তিদের নামে আবেদন করা হচ্ছে এবং যারা কোনো আবেদন করেননি, তাদেরও ফর্ম জমা হওয়ার বার্তা পাঠানো হচ্ছে। ADR বলেছে যে এটি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিজেদের লক্ষ্য পূরণের একটি খেয়ালখুশিমতো উপায়, যা গণতন্ত্রের চেতনার পরিপন্থী।
রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ADR-এর আরও বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের এই দাবি ভুল যে রাজনৈতিক দলগুলির দাবিতে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এনজিও-র মতে, কোনো দলই ভোটার তালিকার নতুন পর্যালোচনার দাবি করেনি। বরং তাদের অভিযোগ ছিল যে আসল ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে এবং ভুয়া নাম যোগ করা হচ্ছে।
নেতাদের ব্যক্তিগত আবেদন
রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD) -এর রাজ্যসভার সাংসদ মনোজ ঝা এবং সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবও আলাদা আলাদা আবেদন দাখিল করেছেন।
মনোজ ঝা-র বক্তব্য, এই প্রথমবার ভোটার হওয়ার জন্য নাগরিকত্বের নথি চাওয়া হচ্ছে। আগে কেবল জন্মতারিখ এবং ঠিকানার প্রমাণ প্রয়োজন হত। এখন নাগরিকত্বের প্রমাণও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যোগেন্দ্র যাদবের আবেদনে বলা হয়েছে যে এই প্রক্রিয়ার ফলে প্রায় ৪০ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের পূর্বের মন্তব্য
১০ জুলাই বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার নেতৃত্বাধীন অবকাশকালীন বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল যে আধার কার্ড, ভোটার আইডি এবং রেশন কার্ডকে বৈধ নথির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়াও আদালত স্পষ্ট জানিয়েছিল যে সাত কোটির বেশি ভোটারের তালিকা পর্যালোচনার প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে পারে যতক্ষণ না পর্যন্ত চূড়ান্ত নির্দেশ আসছে।