Birbhum Tourism: বীরভূম জেলার রাজনগর একসময় ছিল রাজ্য রাজধানী। রাজা নরসিংহদেব, সেন রাজবংশ, রাজা বীরচন্দ্র থেকে শুরু করে আফগান-পাঠান শাসকরা পর্যন্ত এই ভূমিতে রাজত্ব করেছেন। বর্তমানে তাদের উত্তরসূরিরা এখানেই বসবাস করছেন। অথচ সরকারি উদ্যোগের অভাবে আজও রাজনগর পর্যটন মানচিত্রে সেভাবে জায়গা পায়নি। রাজপরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনগরকে ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক।

ঐতিহ্যের সাক্ষী রাজনগর
বীরভূমের রাজনগর একসময় রাজ্যের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। ঐতিহাসিক দলিলে উল্লেখ রয়েছে—বীরভূম ছাড়াও বিহার, সাঁওতাল পরগণা, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের কিছু অংশও রাজনগর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজা নরসিংহদেব, সেন বংশ, রাজা বীরচন্দ্র এবং পরে আফগান-পাঠান শাসকেরা এখানকার ইতিহাসে নিজেদের ছাপ রেখে গেছেন।বর্তমানেও তাঁদের উত্তরসূরিরা রাজনগরে বসবাস করেন এবং এলাকার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রাচীন স্থাপনায় ইতিহাসের ছোঁয়া
রাজনগরে এখনও টিকে আছে একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা—রাজবাড়ি, ইমামবাড়া, হামামখানা, মতিচূড়া মসজিদ, কালীদহ পুকুর, হাওয়াখানা এবং সাঁওতাল বিদ্রোহের স্মৃতিবিজড়িত ফাঁসিঘর। এই স্থাপনাগুলি আজও দেশ-বিদেশের ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।টেরাকোটার কারুকাজ ও প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের মেলবন্ধন রাজনগরের গর্ব। তবে অবহেলায় অনেক জায়গা এখন ধ্বংসের মুখে।

সংরক্ষণের অভাবে হারাচ্ছে ঐতিহ্য
রাজপরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজনগরের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলি পর্যাপ্ত সংরক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেবল কয়েকটি জায়গার সামান্য সংস্কার হলেও অধিকাংশ স্থাপনা ভেঙে পড়ার মুখে। তাঁদের দাবি, রাজ্য প্রশাসনের সক্রিয় হস্তক্ষেপে দ্রুত সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে রাজনগরের ঐতিহ্য বিলীন না হয়ে যায়।
পর্যটনের বিকাশে নতুন দিগন্ত
রাজনগরকে যদি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবে এটি হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ঐতিহাসিক পর্যটন গন্তব্য। এতে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন যেমন সম্ভব, তেমনই রাজ্যের ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রেও নতুন করে জায়গা পাবে।রাজপরিবারের সদস্যদের মতে, “রাজনগর কেবল ইতিহাস নয়, এটি বীরভূমের সংস্কৃতির প্রতীক।

পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ছে ধীরে ধীরে
স্থানীয়দের পাশাপাশি এখন বাইরের পর্যটকরাও রাজনগরের ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে আসছেন। অনেকের মতে, পর্যাপ্ত প্রচার ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটলে রাজনগর হয়ে উঠবে পশ্চিমবঙ্গের ‘হেরিটেজ সার্কিট’-এর অন্যতম গন্তব্য।পর্যটকরা বলছেন—“রাজনগরের ইতিহাস বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হলে আগে সংরক্ষণই হতে হবে প্রথম পদক্ষেপ।

বীরভূম জেলার ঐতিহাসিক রাজধানী রাজনগর আজও বহন করছে অতীতের গৌরব। রাজা বীরচন্দ্র থেকে নরসিংহদেব পর্যন্ত একাধিক রাজবংশের শাসনের সাক্ষী এই স্থানকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার দাবিতে সরব হয়েছেন রাজপরিবার ও স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, সংরক্ষণ হলে এই অঞ্চল রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী গন্তব্য হয়ে উঠবে।











