ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনসেনটিভ রিভিশন (SIR) চালু করতে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তার জন্য সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে বুথ লেভেল এজেন্টদের (BLA) তালিকা চাওয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই শুক্রবার সল্টলেকের দফতরে বৈঠকে বসল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটাই প্রশ্ন—রাজ্যের সব বুথেই কি আদৌ বিজেপির নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে? উত্তরে অস্বস্তিকর নীরবতা।
এক লক্ষ বুথ, অথচ বহু জায়গায় কমিটিই নেই বিজেপির
পশ্চিমবঙ্গে বুথের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ ছুঁই ছুঁই। তবে সূত্র জানাচ্ছে, বহু জায়গায় বিজেপির পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় কমিটিই গঠিত হয়নি। বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুথগুলিতে দলীয় সিদ্ধান্তেই কমিটি তৈরি করা হয়নি। ফলে ওই সব জায়গা থেকে বিএলএ-র নাম কমিশনকে দেওয়া অসম্ভব। আর এই অসুবিধার কথাই বৈঠকে মুখ খুলে স্বীকার করেন শীর্ষ নেতারা।
প্রশিক্ষণের নির্দেশ, নজর থাকবে ভোটার কারচুপির দিকেও
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যেসব বুথে বিএলএ রয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। উদ্দেশ্য একটাই—ভোটার তালিকায় তৃণমূলের কারচুপি ধরতে পারলে তা যেন কমিশনের নজরে আনা যায়। এই উদ্যোগের পিছনে মূল চালক শুভেন্দু অধিকারী নিজেই। তাঁর দাবি, রাজ্যের ভোটার তালিকায় গলাকাটা অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে।
বিজেপির অভিযোগ, তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা!
রাজ্য বিজেপির মতে, ভোটার তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গা শরণার্থীর নাম। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, "যদি সঠিকভাবে তালিকা ঝাড়াই–বাছাই হয়, তাহলে অন্তত ১ কোটি ২৫ লক্ষ অবৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়বে।" কিন্তু এই কাজ করতে গেলে প্রয়োজন বিএলএ–দের সক্রিয়তা। আর এখানেই বাধা—অনেক জেলাতেই বিজেপির নিজের লোক নেই।
সংখ্যালঘু এলাকায় নেই দলীয় উপস্থিতি, অসহায় রাজ্য নেতৃত্ব
এক বিজেপি শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুথগুলিতে। অথচ সেখানেই আমাদের কোনও কমিটি নেই। ফলে বিএলএ জোগাড় করাও কঠিন।” এর ফলে নির্বাচন কমিশনের ডাকে সাড়া দেওয়া নিয়েই সংকটে বিজেপি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটা দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার নগ্ন স্বীকৃতি।
শুভেন্দুর হুমকি—আট মাস পর সরকার গড়ব, আনব বুলডোজার!
বাঁকুড়ার এক সভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশন ঝাড়াই করুক। আট মাস পর তো বিজেপির সরকার হচ্ছেই। তখন উত্তরপ্রদেশের মতো বাংলাতেও বুলডোজার আনব রোহিঙ্গা ও অনুপ্রবেশকারীদের সাফ করতে।” এই ভাষা বিজেপির রণকৌশলের ইঙ্গিত দিলেও, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিশানাও।
তৃণমূলের পাল্টা কটাক্ষ—দেউলিয়াপনার চিহ্ন বিজেপির
বিজেপির এই অবস্থানকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের এক মুখপাত্র বলেন, “রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে বিজেপি। তাই এখন নির্বাচন কমিশনের হাত ধরেই লড়াইয়ে নামতে চাইছে।” স্পষ্টতই বিজেপির বুথ-স্তরের অগোছালো কাঠামো নিয়ে তৃণমূল রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে তৈরি।
সংগঠনের অভাবেই দিশেহারা গেরুয়া শিবির
নির্বাচনের বছরে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে। ভোটার তালিকা নিয়ে যুৎসই লড়াই করতে গেলে প্রয়োজন মাঠ পর্যায়ের সংগঠন। আর এখানেই পিছিয়ে বিজেপি। কমিশনের SIR প্রক্রিয়া যতই এগোক, ততই চাপ বাড়বে গেরুয়া শিবিরের উপর—কারণ, এজেন্ট না থাকলে অভিযোগ তুলে লাভ নেই।