বিজেপি এমপি, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা সহ ৯টি রাজ্যে নতুন রাজ্য সভাপতিদের ঘোষণা করেছে। জাতীয় সভাপতির নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে, দলের ফোকাস আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলির উপর।
নয়াদিল্লি: ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সম্প্রতি ৯টি রাজ্যে নতুন রাজ্য সভাপতি নিয়োগ করেছে। দলের উদ্দেশ্য সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং আসন্ন নির্বাচনগুলির জন্য প্রস্তুত থাকা। যদিও, জাতীয় সভাপতির নির্বাচনে আপাতত বিলম্বের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে কারণ দলের মনোযোগ এখন উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটক, দিল্লি এবং হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচনগুলির উপর কেন্দ্রীভূত।
মধ্যপ্রদেশ: হেমন্ত খান্ডেলওয়ালকে দেওয়া হলো দায়িত্ব
মধ্যপ্রদেশে বিজেপি হেমন্ত কুমার খান্ডেলওয়ালকে নতুন রাজ্য সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করেছে। তিনি বেতুল থেকে দু’বার বিধায়ক এবং সাংসদ ছিলেন। তাকে মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে মনে করা হয়। এছাড়াও, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এও তার ভালো প্রভাব রয়েছে। এই নিয়োগের মাধ্যমে দল বৈশ্য সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মহারাষ্ট্র: রবীন্দ্র চহ্বানকে দেওয়া হলো দায়িত্ব
মহারাষ্ট্রে ডোম্বিভলি থেকে চার বারের বিধায়ক রবীন্দ্র চহ্বানকে রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে। তিনি রাজ্য সরকারে লোকনির্মাণ, খাদ্য এবং নাগরিক সরবরাহের মতো বিভাগগুলিতে মন্ত্রী পদ সামলেছেন। চহ্বানকে দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নির্ভরযোগ্য হিসেবে মনে করা হয়। তার নিয়োগের মাধ্যমে দল সংগঠন এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয় আরও ভালো করার চেষ্টা করছে।
উত্তরাখণ্ড: মহেন্দ্র ভাট-এর পুনঃআগমন
উত্তরাখণ্ডে বিজেপি আবারও মহেন্দ্র ভাটকে রাজ্য সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করেছে। তিনি ২০২২ সালেও এই পদে ছিলেন। ভাট দু’বারের বিধায়ক এবং তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন এ.বি.ভি.পি.-র মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। রাজ্যে ঠাকুর মুখ্যমন্ত্রী এবং ব্রাহ্মণ সভাপতির জুটি তৈরি করে দল জাতিগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেছে।
হিমাচল প্রদেশ: রাজীব বিন্দল তৃতীয়বারের জন্য সভাপতি
হিমাচল প্রদেশে রাজীব বিন্দলকে টানা তৃতীয়বারের জন্য রাজ্য সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। বিন্দল পাঁচবার বিধায়ক ছিলেন এবং একসময় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ছিলেন। তাকে দলের জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার ঘনিষ্ঠ হিসেবে মনে করা হয়। বিন্দলের নিয়োগের মাধ্যমে সংগঠনে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কৌশল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আন্ধ্রপ্রদেশ: অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব
আন্ধ্রপ্রদেশে বিজেপি পিভিএন মাধবকে রাজ্য সভাপতি বানিয়েছে। তিনি বিজেপির পুরনো নেতা এবং আন্ধ্রপ্রদেশে দলের শক্তিশালী মুখ। তাঁর বাবাও অবিভক্ত আন্ধ্রপ্রদেশে বিজেপি সভাপতি ছিলেন। পিভিএন মাধব দলের যুব ইউনিট এবং সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেন, যার মাধ্যমে দল এই শ্রেণীকে তাদের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে।
তেলেঙ্গানা: রামচন্দ্র রাও সুযোগ পেলেন
তেলেঙ্গানায় এন রামচন্দ্র রাওকে রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনেক সিনিয়র নেতার অবমূল্যায়ন সত্ত্বেও নেওয়া হয়েছে, যা দলের অভ্যন্তরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, রাজা সিং এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তা সত্ত্বেও, দল রামচন্দ্র রাওয়ের উপর আস্থা রেখেছে।
অন্যান্য রাজ্য: জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব এবং লাক্ষাদ্বীপ
বিজেপি অন্যান্য কিছু রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সাংগঠনিক নিয়োগ করেছে, যার মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব এবং লাক্ষাদ্বীপ অন্তর্ভুক্ত। যদিও এই রাজ্যগুলিতে সভাপতির নাম আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল।
জাতীয় সভাপতির নির্বাচন আপাতত স্থগিত
দলীয় সূত্রে খবর, জাতীয় সভাপতির পদের নির্বাচনের জন্য কমপক্ষে ১৯টি রাজ্যে সভাপতির নিয়োগ প্রয়োজন। বিজেপি এখনও পর্যন্ত ২৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নিয়োগ করেছে, তবে জাতীয় সভাপতির নির্বাচন নিয়ে দল আপাতত তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না। এর একটি বড় কারণ হল, আগামী মাসগুলিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, যেখানে দলের পূর্ণ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত।