বিজেপি সভাপতির নতুন উদ্যোগ মুরলীধর সেন লেনে বসবেন শমীক ভট্টাচার্য

বিজেপি সভাপতির নতুন উদ্যোগ মুরলীধর সেন লেনে বসবেন শমীক ভট্টাচার্য

কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের উদ্যোগ

কলকাতার মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির পুরোনো দপ্তরে এবার থেকে এক অভিনব প্রথা শুরু করতে চলেছেন দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি সপ্তাহে একদিন তিনি সেখানে বসে দলের নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। এই উদ্যোগকে ঘিরে ইতিমধ্যেই দলের ভেতরে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।

সংগঠনে পুরোনো কর্মীদের গুরুত্ব বাড়ানোর বার্তা

দলের ভেতরে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ ছিল, রাজ্য দপ্তরে আসল কর্মীদের গুরুত্ব তেমনভাবে প্রতিফলিত হয় না। এবার শমীক ভট্টাচার্যের এই সিদ্ধান্তে তাঁদের মনে আলাদা জায়গা তৈরি হবে বলেই মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কর্মীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমেই সংগঠনকে নতুন প্রাণ দেওয়া সম্ভব।

প্রতিশ্রুতির পথে প্রথম পদক্ষেপ

মাস দু’য়েক আগে রাজ্য সভাপতি পদে বসে শমীক দুটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন— মুরলীধর সেন লেনের পুরোনো দপ্তরকে আবার প্রাণবন্ত করা এবং সংগঠনে পুরোনো কর্মীদের গুরুত্ব ফেরানো। বাস্তবে এই দুই প্রতিশ্রুতি এখনও পূর্ণ হয়নি। তবে তাঁর আশেপাশের নেতাদের মতে, ‘দরবার’ চালু হলে এই প্রতিশ্রুতিগুলোই ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে।

প্রথম দিন পিছোলেও সিদ্ধান্ত অটল

প্রথমে ঠিক ছিল ১লা সেপ্টেম্বর থেকেই এই দরবার শুরু হবে। কিন্তু সাংগঠনিক কাজে দিল্লি যেতে হওয়ায় সেই পরিকল্পনা পিছিয়ে যায়। তবে দলীয় সূত্রের দাবি, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই এই উদ্যোগ শুরু হবে। অতীতে বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি অফিসে দরবার চালু করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তবে এবার শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য সভাপতির পদেই থেকে এই প্রথা চালু করতে চলেছেন, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।

কেন এই ভিন্ন পথে হাঁটলেন শমীক

রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের ভেতরে আসল পরিস্থিতি বোঝার জন্য বুথস্তরের কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগই একমাত্র ভরসা। অনেক জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাই বাস্তব অবস্থা যাচাই করার জন্যই শমীক এই উদ্যোগ নিচ্ছেন। দলের সাধারণ কর্মীরা যাতে তাঁদের মনের কথা বলতে পারেন, সেটাই মূল উদ্দেশ্য।

পুরোনো অফিস ফের জমজমাট করার পরিকল্পনা

মধ্য কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই অফিস অনেকদিন ধরেই নির্জন হয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীদের আনাগোনা কমে গিয়েছিল। শমীকের ঘনিষ্ঠ এক নেতার দাবি, সপ্তাহে একদিন সভাপতি নিজে বসলে আবার প্রাণ ফিরে পাবে এই ঐতিহাসিক দপ্তর। কর্মীরাও আগের মতো ভিড় জমাবেন, আর অফিস আবার রাজনৈতিক আড্ডার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠবে।

কর্মীদের অভিযোগ জানানোর সুযোগ

দরবারের সবচেয়ে বড় দিক হল— এখানে কর্মীরা সরাসরি সভাপতি শমীকের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন। যে কোনও সমস্যা বা ক্ষোভ মুখোমুখি আলোচনা করা যাবে। এভাবে অভিযোগ বা মতভেদ চাপা না থেকে খোলাখুলি আলোচনার পরিবেশ তৈরি হবে। এতে সংগঠনের ভিত আরও শক্ত হবে বলেই আশা।

আসন্ন ভোটের আগে কৌশলগত পদক্ষেপ

বিধানসভা নির্বাচনের আগে বুথস্তরের কর্মীদের মানসিকতা যাচাই করা বিজেপির জন্য অত্যন্ত জরুরি। রাজ্য নেতৃত্বের দেওয়া তথ্য ও কর্মীদের বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে মিল কতটা আছে, সেটাই এখন যাচাই করতে চাইছেন শমীক। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এ এক কৌশলগত পদক্ষেপ যা ভবিষ্যতের সংগঠন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

সভাপতির স্পষ্ট ঘোষণা

শমীক ভট্টাচার্য নিজেও প্রকাশ্যে বলেছেন, "সপ্তাহে একদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি মুরলীধর সেন লেনের দপ্তরে বসব। সেখানে কর্মীদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করব। এই অফিসের সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাই কর্মীদের আবেগকে গুরুত্ব দিতেই এই উদ্যোগ।" তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, ব্যক্তিগতভাবে এই দপ্তরের প্রতি তাঁর আলাদা টান রয়েছে।

নিরাপত্তা প্রাচীর সরানোর ভাবনা

বিজেপি সূত্রে খবর, দপ্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। কয়েক বছর আগে দোতলার সিঁড়ির মুখে লোহার গেট বসানো হয়েছিল এবং সেখানেই নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছিল। তাতে অনেক কর্মী বিরক্ত হয়ে দপ্তরে আসা বন্ধ করে দেন। শমীক চান সেই লোহার গেট সরিয়ে আরও উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। এতে কর্মীরা আবার আগের মতো নির্ভয়ে দপ্তরে আসতে পারবেন।

আবেগ-রাজনীতি একসাথে

এই সিদ্ধান্ত কেবল সংগঠন নয়, দলের আবেগের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে। কর্মীরা যাতে নিজেদের মূল্যবান মনে করেন, সেই চেষ্টা করছেন সভাপতি। দলের পুরোনো ইতিহাসে মুরলীধর সেন লেন অফিসের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এই দরবার কর্মীদের কাছে শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং আবেগের পুনর্জাগরণও বটে।

Leave a comment