মার্কিন বিনিয়োগকারী সংস্থা ব্ল্যাকরক কথিতভাবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪,২০০ কোটি টাকা) এর বেশি অঙ্কের একটি বড়সড় প্রতারণার শিকার হয়েছে। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও বঙ্কিম ব্রহ্মভট্ট তাঁর টেলিকম সংস্থার মাধ্যমে এই প্রতারণা করেছেন।
ওয়ার্ল্ড নিউজ: আমেরিকায় একটি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও বঙ্কিম ব্রহ্মভট্ট (Bankim Brahmbhatt)-এর বিরুদ্ধে ৫০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪,২০০ কোটি টাকা) প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়টি আমেরিকার বিশাল বিনিয়োগকারী সংস্থা ব্ল্যাকরক (BlackRock) এবং তার প্রাইভেট ক্রেডিট শাখা এইচপিএস ইনভেস্টমেন্ট পার্টনার্স (HPS Investment Partners)-এর সঙ্গে জড়িত।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্ল্যাকরকের সহযোগী সংস্থা এইচপিএস ব্রহ্মভট্টের টেলিকম সংস্থায় বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছিল। অভিযোগ রয়েছে যে ব্রহ্মভট্ট ভুয়ো অ্যাকাউন্ট, নকল ইমেল ঠিকানা এবং দেউলিয়া সংস্থাগুলির মাধ্যমে একটি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছেন। এখন এই মামলাটি মার্কিন আদালতে পৌঁছেছে এবং পুলিশ এর তদন্ত করছে।
কীভাবে শুরু হলো এই ঘটনা?
ব্ল্যাকরকের প্রাইভেট ক্রেডিট ইউনিট এইচপিএস ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্কিম ব্রহ্মভট্টের টেলিকম সংস্থার সাথে একটি বিনিয়োগ চুক্তি করেছিল। শুরুতে ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল, যা পরে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে ৪৩০ মিলিয়ন ডলার করা হয়। এই বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল টেলিকম পরিকাঠামো সম্প্রসারণ করা।

কিন্তু ২০২৫ সালের জুলাই মাসে এইচপিএস কিছু সন্দেহজনক ইমেল এবং আর্থিক নথি সম্পর্কে জানতে পারে। সংস্থার তদন্তে দেখা যায় যে অনেক ইমেল ঠিকানা নকল ছিল এবং নথিতে উল্লিখিত ক্লায়েন্টরা বাস্তবে অস্তিত্বহীন ছিল। যখন এই বিষয়টি ব্রহ্মভট্টকে জানানো হয়, তখন তিনি এইচপিএসকে আশ্বাস দেন যে সবকিছু ঠিক আছে এবং তদন্ত চলছে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি সংস্থার কল এবং ইমেলের জবাব দেওয়া বন্ধ করে দেন।
সংস্থার দফতর বন্ধ, সিইও নিখোঁজ
এইচপিএস-এর কর্মকর্তারা যখন নিউইয়র্কস্থিত ব্রহ্মভট্টের সংস্থার দফতর পরিদর্শন করেন, তখন সেটি বন্ধ অবস্থায় দেখতে পান। অফিসে কোনো কর্মচারী উপস্থিত ছিল না, এবং স্থানীয়রা জানান যে সংস্থাটি মাসখানেক আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সংস্থাটি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু বিনিয়োগকারীদের এই বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। পরে তদন্তে আরও জানা যায় যে সংস্থার ভুয়ো অ্যাকাউন্ট এবং নথিপত্রের সাহায্যে ব্রহ্মভট্ট বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছিলেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন তদন্তকারী সংস্থাগুলি ব্রহ্মভট্টের গার্ডেন সিটি (Garden City, New York) স্থিত বাড়িতে অভিযান চালায়, তখন তাঁকে সেখানে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে যে তিনি ভারতে রয়েছেন।
কোথায় গেল বিনিয়োগের টাকা?
এইচপিএস-এর দাবি, বিনিয়োগ করা বেশিরভাগ অর্থ ভারত ও মরিশাসের সংস্থাগুলিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে বিনিয়োগকারীদের দেখানোর জন্য ব্রহ্মভট্ট যে ব্যালেন্স শীট এবং আর্থিক রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন, সেগুলি সম্পূর্ণ ভুয়ো ছিল। সংস্থাটি বলেছে যে এটি ছিল একটি “ব্রেথটেকিং ফ্রড (Breathtaking Fraud)”, যেখানে বড় আকারে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট এবং নকল লেনদেনের ব্যবহার করা হয়েছিল।













