বুলন্দশহরে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে হরিদ্বারের প্রিন্স তার নাবালিকা প্রেমিকাকে গুলি করে হত্যা করার পর নিজেও আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের ধাওয়ার মুখে ঘরে লুকিয়ে থাকা প্রেমিক যুগল এই ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নিয়েছে।
বুলন্দশহর: উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহরে একটি প্রেম কাহিনি ভয়ংকর মোড় নিয়েছে। হরিদ্বারের বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী যুবক প্রিন্স এবং মুজাফফরনগরের ১৫ বছর বয়সী কিশোরী ২০ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে পালিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে বাস করছিল। বুধবার রাতে পুলিশ পৌঁছানোর পর তারা দুজনেই লুকিয়ে পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ধরা পড়ার ভয় এতটাই গভীর ছিল যে, যুবকটি প্রথমে তার নাবালিকা প্রেমিকাকে গুলি করে হত্যা করে এবং তারপর নিজেও নিজেকে গুলি করে। এই মর্মান্তিক ঘটনা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
পরিবারের অভিযোগের পর তল্লাশি জোরদার
মুজাফফরনগরের কিশোরী বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যরা পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করেছিল। অভিযোগে সরাসরি প্রিন্সের নাম উল্লেখ করা হয়। পরিবারের সন্দেহ ছিল যে প্রিন্সই কিশোরীকে নিয়ে পালিয়েছে। এরপর পুলিশ তার সন্ধান শুরু করে এবং মোবাইল লোকেশনের ভিত্তিতে সূত্র সংগ্রহ করে।
তদন্তে জানা যায় যে প্রিন্স বুলন্দশহরের মহল্লা সরাইকিশনে একটি ভাড়া বাড়িতে বাস করছিল। সে বাড়ির মালিককে নিজেকে মৌমাছি পালনের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। পুলিশ এই ঠিকানা পাওয়ার সাথে সাথেই একটি দল গঠন করা হয় এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে ঘটনাস্থলে অভিযান চালানো হয়।
ছাদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লুকিয়ে ছিল প্রেমিক যুগল
পুলিশ এবং পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে পৌঁছানোর সাথে সাথেই প্রিন্স এবং তার প্রেমিকা টের পেয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে তারা পিছনের রাস্তা দিয়ে ছাদে উঠে লুকানোর চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ তারা পালানোরও চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিল।
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তারা দুজনেই ছাদে লুকিয়ে ছিল। বাইরে থেকে পুলিশ ক্রমাগত দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিল, যার ফলে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। প্রেমিক-প্রেমিকাকে বোঝানোরও চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
রাত তিনটায় মহল্লায় গুলি চালানো
রাত প্রায় তিনটে নাগাদ হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। মহল্লায় নীরবতা নেমে আসে এবং পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সক্রিয় হয়। যখন ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, প্রিন্স এবং মেয়েটি রক্তে ভেসে ছিল। তথ্য অনুযায়ী, যুবকটি প্রথমে মেয়েটিকে গুলি করে এবং তারপর নিজেকেও গুলি করে।
দুজনাকেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ডাক্তাররা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল এবং খালি কার্তুজও উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ দুজনের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
পুরো এলাকায় শোক ও আতঙ্ক
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই আশেপাশের মানুষজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। কেউই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে একটি প্রেম কাহিনি এমন ভয়াবহ মোড় নিতে পারে। মহল্লায় আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে এবং মানুষ এটিকে একটি মর্মান্তিক পরিণতি হিসেবে বর্ণনা করছে।
পরিবারগুলোতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা বলছেন যে তারা চেয়েছিলেন তাদের মেয়ে নিরাপদে ফিরে আসুক, কিন্তু এই ধরনের খবর শুনে তাদের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। বর্তমানে পুলিশ ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত রয়েছে এবং পুরো ঘটনার প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।