ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ওয়েস্ট ব্যাংক দখল বরদাস্ত করবে না আমেরিকা, ইসরায়েলকে বড় ধাক্কা

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ওয়েস্ট ব্যাংক দখল বরদাস্ত করবে না আমেরিকা, ইসরায়েলকে বড় ধাক্কা
সর্বশেষ আপডেট: 1 ঘণ্টা আগে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে বড় ধাক্কা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে ওয়েস্ট ব্যাংক দখল বরদাস্ত করা হবে না। ট্রাম্পের এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও কূটনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

আমেরিকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বড় ধাক্কা দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি ওয়েস্ট ব্যাংক (West Bank) দখল করার অনুমতি দেবেন না। বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “অনেক হয়েছে, এবার থামার সময় এসেছে।” তাঁর এই মন্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, কারণ এতদিন পর্যন্ত ট্রাম্পকে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

ওভাল অফিস থেকে কঠোর বার্তা

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে কিছু নির্বাহী আদেশ (executive orders) স্বাক্ষর করছিলেন। এই সময়েই তিনি ইসরায়েলের উল্লেখ করে ওয়েস্ট ব্যাংক দখলের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাম্প বলেন যে, আমেরিকা ইসরায়েলকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি দেবে না, কারণ এটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। তিনি আরও বলেন যে, এখন একটি সীমা নির্ধারণের সময় এসেছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনো কাজ বরদাস্ত করা হবে না।

নেতানিয়াহুর সঙ্গে সম্পর্ক এবং নতুন অবস্থান

ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর দৃঢ় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে এসেছেন। বহুবার তিনি নিজেকে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র বলে দাবি করেছেন এবং নেতানিয়াহুকে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেছেন। তবে, এবার তাঁর অবস্থানে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে আরব দেশগুলির ক্রমবর্ধমান চাপকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। সৌদি আরব, জর্ডন এবং মিশর-এর মতো দেশগুলি সম্প্রতি প্রকাশ্যে সতর্ক করে দিয়েছে যে, ওয়েস্ট ব্যাংক-এর উপর আরও দখলদারিত্ব এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং সার্বভৌমত্ব (sovereignty) উভয়ের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

আরব দেশগুলির চাপ এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া

আরব দেশগুলির পাশাপাশি ইউরোপ এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলিও ওয়েস্ট ব্যাংক-এর পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কানাডা, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলি সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে (Palestine) স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে আমেরিকা এবং ইসরায়েল কূটনৈতিক স্তরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই চাপ ক্রমাগত বাড়ছে যে ওয়েস্ট ব্যাংক-এর উপর যেকোনো ধরনের দখল বা বসতি স্থাপন বন্ধ করা হোক এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

গাজা সংঘাত এবং ওয়েস্ট ব্যাংক-এর জটিল পরিস্থিতি

বর্তমানে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে গাজায় (Gaza) সংঘাত চলছে। সেখানে লাগাতার সামরিক অভিযান এবং রকেট হামলায় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। তবে, ওয়েস্ট ব্যাংক-এর পরিস্থিতি গাজা থেকে আলাদা। এই অঞ্চলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (Palestinian Authority) প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, কিন্তু নিরাপত্তা ও সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রভাব বজায় আছে। এখানে খোলা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি নেই, তবে উত্তেজনা সবসময়ই বিদ্যমান থাকে।

বিতর্কিত বসতি প্রকল্প বাড়িয়েছে উদ্বেগ

ইসরায়েল সম্প্রতি ওয়েস্ট ব্যাংক-এ একটি বিতর্কিত বসতি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রকল্পের ফলে ওয়েস্ট ব্যাংক কার্যত দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে। এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দেবে এবং শান্তি প্রক্রিয়ার উপর একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমেরিকা সহ অনেক দেশ ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, এবং এখন ট্রাম্পের বিবৃতির পর এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ওয়াশিংটনও এই প্রকল্পকে সমর্থন করবে না।

ওয়েস্ট ব্যাংক-এর ইতিহাস

ওয়েস্ট ব্যাংক-এ প্রায় ৩০ লক্ষ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে (Arab-Israeli War) ইসরায়েল এই অঞ্চল দখল করে নেয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই অঞ্চল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা চায় যে এটি তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রধান অংশ হোক, কিন্তু ইসরায়েল ক্রমাগত এখানে বসতি স্থাপন করে আসছে। এখন পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি বসতি নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে প্রায় পাঁচ লক্ষ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করেছে। এই কারণে ওয়েস্ট ব্যাংক-এর ভূগোল এবং রাজনীতি উভয়ই অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে।

ফিলিস্তিনিদের আশা

ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আশা করে আসছে যে ওয়েস্ট ব্যাংক-এর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা হবে। জাতিসংঘের (UN) বেশ কয়েকটি রিপোর্ট এবং প্রস্তাব এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যে এই অঞ্চলকে ফিলিস্তিনের অংশ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দেশ কর্তৃক ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে ফিলিস্তিনি জনগণের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে।

Leave a comment