বুরারি-তে বন্যার কারণে শিল্পাঞ্চল ও আবাসিক এলাকাগুলি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারুতি স্টকইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ৩০০টি নতুন গাড়ি জলে ডুবে গেছে, অন্যদিকে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা বেকারত্বের মুখে পড়েছে।
নতুন দিল্লি: বুরারি শহরে ভয়াবহ বন্যার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। আবাসিক এলাকাগুলিতে জল ঢুকে যাওয়ায় মানুষজন নিজেদের বাড়িতেই বন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক বাড়িতে জল কোমর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, যার ফলে রান্না, ঘুম এবং এমনকি দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। শিশু ও বয়স্করা বিশেষ কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছেন।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে অনেক পরিবার নিজেদের বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় বা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে। যদিও ত্রাণ শিবিরগুলিতেও অতিরিক্ত ভিড় এবং সীমিত সুবিধার কারণে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ দ্বিগুণ হয়েছে।
বন্যায় ডুবে গেল ৩০০টি নতুন মারুতি গাড়ি
মারুতির স্টকইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ৩০০টি নতুন গাড়ি জলে ডুবে যাওয়াকে বন্যার কারণে হওয়া অন্যতম বড় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই গাড়িগুলির মধ্যে Alto, WagonR, Baleno, Vitara এবং Invicto-র মতো জনপ্রিয় মডেলগুলিও রয়েছে। অনেক গাড়ির এয়ারব্যাগ নিজে থেকেই খুলে গেছে এবং ইলেকট্রনিক সিস্টেমগুলি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জলের কারণে গাড়িগুলির ইঞ্জিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি নষ্ট হয়ে গেছে, যার ফলে এগুলির ব্যবহার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শোরুম মালিকদের মতে, হঠাৎ আসা বন্যায় তাঁদের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগই ছিল না এবং অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো স্টক ডুবে যায়। অনুমান করা হচ্ছে যে এর ফলে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা পূরণ করা সহজ হবে না।
কারখানা বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা সমস্যায়
শিল্পাঞ্চলেও বন্যা গভীর আঘাত হেনেছে। আধুনিক শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলিতে ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত জল জমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। মেশিনপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কারখানাগুলি বড় আর্থিক ধাক্কার মুখে পড়েছে। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও দ্বিধায় রয়েছেন যে কবে আবার উৎপাদন শুরু করা যাবে।
সবচেয়ে বড় আঘাত পড়েছে শ্রমিক শ্রেণীর উপর। হাজার হাজার শ্রমিক তাঁদের রুটি-রুজি নিয়ে সংঘাতে রয়েছেন, কারণ কারখানা বন্ধ থাকার কারণে তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না। রোজগার করে জীবনযাপন করা মানুষ এখন বেকারত্বের দ্বারপ্রান্তে এবং অনেক শ্রমিক তাঁদের পরিবার নিয়ে গ্রামের দিকে ফিরে যাচ্ছেন। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান ও আয় উভয়ের উপর বড় সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যা মোকাবিলায় উদ্ধারকাজ জোরদার
প্রশাসন, এসডিআরএফ এবং পৌরসভা দলগুলি নিরন্তর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কাজে যুক্ত রয়েছে। নৌকা ও বড় গাড়ির সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, সেচ বিভাগ জলের স্তর নিয়ন্ত্রণের জন্য ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে। যদিও মুঙ্গেশপুর ড্রেনের বড় অংশ বন্ধ করার পরেও অন্য জায়গায় ভাঙনের সমস্যায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
সরকার ও প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে যে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী, ওষুধ এবং পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ দল মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৃষ্টি আরও বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, আর জল কমলে শিল্পাঞ্চলের কারখানা ও গাড়িগুলির মেরামতের দীর্ঘ কাজ শুরু হবে।