ভারত ও চীনের সম্মিলিত প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন মোড়, জিডিপিতে ৩০% অবদানের পূর্বাভাস

ভারত ও চীনের সম্মিলিত প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন মোড়, জিডিপিতে ৩০% অবদানের পূর্বাভাস

ডিবিএস ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, এই দশকের শেষ নাগাদ ভারত এবং চীন সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক জিডিপিতে ৩০% এর বেশি অবদান রাখবে। ভারতে সরকার এবং আরবিআই (RBI) কর হ্রাস, সুদের হার কমানো এবং জিএসটি (GST) সংস্কারের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং বিনিয়োগকে বাড়িয়ে তুলবে এবং বৈশ্বিক পরিবর্তনের মধ্যেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে।

ডিবিএস ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ভারত এবং চীন আবারও বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি বড় শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। অনুমান করা হচ্ছে যে এই দশকের শেষ নাগাদ উভয় দেশের বৈশ্বিক জিডিপিতে অবদান ৩০% এর বেশি হবে। ভারতে এপ্রিল-জুন ২০২৫-এ ৭.৮% জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল ছিল। এটি উন্নত করার জন্য সরকার আয়কর হার কমিয়েছে, আরবিআই (RBI) সুদের হার কমিয়েছে এবং সেপ্টেম্বরে জিএসটি (GST) সংস্কার কার্যকর করেছে। এই পদক্ষেপগুলি ভোগ এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর আশা করা হচ্ছে, যার ফলে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলির সাথে অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।

ভারতের অর্থনৈতিক গতি ও চ্যালেঞ্জ

ভারতের অর্থনীতি গত কয়েক বছর ধরে শক্তিশালী দেখা যাচ্ছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে। এপ্রিল থেকে জুন ২০২৫-এর ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি ৭.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণভাবে চাহিদা ততটা শক্তিশালী ছিল না। পণ্য ও পরিষেবার ভোগ দুর্বল ছিল। বিনিয়োগের গতিও ধীর ছিল এবং মজুরিতে প্রত্যাশিত বৃদ্ধি হয়নি।

মানুষের সঞ্চয় কমেছে, ব্যাংক ডিপোজিট এবং ঋণের বৃদ্ধিও গত চার বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। শেয়ার বাজারেও আগের মতো গতি দেখা যায়নি। এই লক্ষণগুলি থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এখন সরকার এবং নীতি নির্ধারকরা অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর উপর বেশি জোর দেবে।

সরকার এবং আরবিআই (RBI)-এর বড় উদ্যোগ

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাংক ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বেশ কিছু বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফেব্রুয়ারিতে মধ্যম ও নিম্ন-আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য আয়কর হার কমানো হয়েছে। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে আরবিআই (RBI) নীতিগত সুদের হারে ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে, যাতে মানুষ এবং কোম্পানিগুলি কম সুদে ঋণ পেতে পারে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।

সেপ্টেম্বরের শুরুতে জিএসটি (GST)-তে সংস্কার করা হয়েছে। অনেক উচ্চ করের স্ল্যাব সরিয়ে কর কাঠামোকে সহজ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি ভোগ, আয় এবং বিনিয়োগে গতি আনার আশা করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন সুযোগ

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে যে আমেরিকা সম্প্রতি শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এর প্রভাব ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সেমিকন্ডাক্টর-এর মতো খাতগুলিতে পড়তে পারে। ভারত আমেরিকার সাথে তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, তবে এখন ইউরোপ, সিঙ্গাপুর এবং চীনের মতো দেশগুলির সাথে নতুন সুযোগ খোঁজার দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে। এটি ভারতকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

চীন ও ভারতের সম্মিলিত প্রভাব

ডিবিএস ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে যে ভারত এবং চীন সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির দিক পরিবর্তন করতে পারে। ১৯৬০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলির আধিপত্য ছিল, কিন্তু আগামী বছরগুলিতে এশিয়ার শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আমেরিকার অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এখনও বজায় থাকবে, তবে ভারত এবং চীনের দ্রুত অগ্রগতি তাকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিতে পারে।

ভারত সরকার এবং আরবিআই (RBI)-এর প্রচেষ্টা এই দিকে যে অর্থনৈতিক সংস্কার কেবল সংখ্যাতেই নয়, সাধারণ মানুষের জীবনেও প্রভাব ফেলবে। কর ছাড়, সুদের হার হ্রাস এবং জিএসটি (GST) সংস্কারের মতো পদক্ষেপগুলি এই দিকেই রয়েছে। এই প্রচেষ্টাগুলি অভ্যন্তরীণ ভোগ বৃদ্ধি করবে, কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বজায় রাখবে।

ভারতীয় কোম্পানিগুলির ক্রমবর্ধমান ভূমিকা

ভারতীয় শেয়ার বাজারের শক্তি বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে আকৃষ্ট করেছে। অনেক বৈশ্বিক কোম্পানি এখন ভারতে তাদের সহায়ক কোম্পানিগুলির তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।

একই সাথে, ভারতীয় কোম্পানিগুলিও এখন বিদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলিতে একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণ (M&A)-এর মাধ্যমে ভারতীয় কোম্পানিগুলি তাদের ব্যবসার বিস্তার ঘটাচ্ছে। এটি তাদের নতুন প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করবে।

Leave a comment