দেশে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এর ব্যবহার সাধারণ হয়ে উঠেছে। ৫টি লোকসভা এবং ১৩০টির বেশি বিধানসভা নির্বাচন ইভিএম-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
নয়াদিল্লি: দেশ এ পর্যন্ত ইভিএম-এর মাধ্যমে ৫টি লোকসভা এবং ১৩০টিরও বেশি বিধানসভা নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। তবে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, রাজ্যসভা এবং বিধান পরিষদ নির্বাচনে এখনো ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ হলো, ইভিএম-কে ভোট এগ্রিগেটর (vote aggregator) হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে।
অর্থাৎ, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলি সেইসব নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া সরাসরি হয় এবং ভোটারকে শুধুমাত্র একজন প্রার্থীকে বেছে নিতে হয়। ভোটাররা কেবল একজন প্রার্থীর পাশের বোতাম টিপে ভোট দিতে পারেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া ভিন্ন, কারণ এখানে ভোটারদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে একাধিক প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
কেন ইভিএম সরাসরি নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত?
ইভিএম মেশিনগুলি ভোট এগ্রিগেটর হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। এর মানে হল, এটি এমন নির্বাচনের জন্য তৈরি করা হয়েছে যেখানে ভোটার শুধুমাত্র একজন প্রার্থীকে বেছে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে ভোটাররা কোনো একজন প্রার্থীর নামের পাশে বোতাম টিপে ভোট দেন। মেশিনটি ভোট গণনা করে বিজয়ী ঘোষণা করে।
তবে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া ভিন্ন। এখানে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (proportional representation) এবং একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট (Single Transferable Vote) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা একাধিক প্রার্থীকে অগ্রাধিকার ক্রমে ভোট দেন।
রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া
রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যদি পাঁচজন প্রার্থী থাকেন, তবে ভোটাররা তাদের ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের নামের পাশে ক্রমিক সংখ্যা (১, ২, ৩, …) দিয়ে অগ্রাধিকার জানান। প্রথম পছন্দের ভোট: সর্বোচ্চ প্রথম পছন্দের ভোট প্রাপ্ত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। টাই হলে দ্বিতীয় পছন্দের ভোট: যদি প্রথম পছন্দের ভোট সমান হয়, তবে দ্বিতীয় পছন্দের ভোটে যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনি বিজয়ী ঘোষিত হন।
ভোটের স্থানান্তর: যদি কোনো প্রার্থী পর্যাপ্ত ভোট না পান, তবে তার ভোট দ্বিতীয় পছন্দের প্রার্থীকে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমান ইভিএম প্রযুক্তি এই জটিল প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে সক্ষম নয়।
ইভিএম-এর ইতিহাস ও আইনি স্বীকৃতি
ইভিএম-এর ধারণা ১৯৭৭ সালে আসে। ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (ECIL), হায়দ্রাবাদকে এর নকশার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথম প্রোটোটাইপ ১৯৭৯ সালে তৈরি হয় এবং ১৯৮২ সালে কেরালার বিধানসভা নির্বাচনে এর প্রথম ব্যবহার হয়। তবে, সেই সময়ে আইনের অভাবে সুপ্রিম কোর্ট ইভিএম-এর ব্যবহার প্রত্যাখ্যান করে। এরপর ১৯৮৯ সালে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১ সংশোধন করে ইভিএম-কে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৯৮ সালে দিল্লি, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের ২৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।
২০০১ সালে তামিলনাড়ু, কেরালা, পুদুচেরি এবং পশ্চিমবঙ্গ-এর নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে ইভিএম-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এরপর থেকে দেশজুড়ে ইভিএম-এর ব্যবহার স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ইভিএম মেশিনগুলি গণনা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও স্বচ্ছ করতে সাহায্য করেছে। ২০০৪ সাল থেকে লোকসভা নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে ইভিএম-এর উপর নির্ভরশীল। ভোটাররা শুধুমাত্র একজন প্রার্থীকে নির্বাচন করতে পারেন এবং মেশিনটি তাৎক্ষণিকভাবে ভোট গণনা করে ফলাফল প্রদান করে।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের স্থানান্তর এবং অগ্রাধিকার-ভিত্তিক গণনা হয়। এটি পরিচালনার জন্য নতুন প্রযুক্তি বা উন্নত ইভিএম মডেলের প্রয়োজন।