মালদহের কালিয়াচকের পরিযায়ী শ্রমিককে ঘিরে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অভিযোগ, রাজস্থানে তাঁকে আটক করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। পরে বিএসএফ ওই ব্যক্তিকে ফেরত এনে বসিরহাট থানার হাতে তুলে দেয়। ঘটনার জেরে নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ—মুক্তি দিতে হবে আমির শেখকে
বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার জানায়, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দেখে বসিরহাট থানাকে আমির শেখকে মুক্তি দিতে হবে। শুধু তাই নয়, পুলিশের কাছে তাঁর মুক্তি সংক্রান্ত রিপোর্টও আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২৭ অগস্টে পরবর্তী শুনানি, বিএসএফকে জানাতে হবে অবস্থান
আদালত নির্দেশ দিয়েছে, এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৭ অগস্ট। তার আগে বিএসএফকে জানাতে হবে তারা এ বিষয়ে কী অবস্থান নেবে। এর ফলে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর ভূমিকাও এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে।
বিএসএফের বক্তব্য—বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরার সময় ধরা
কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযুক্ত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে যায়। এরপর ১২ অগস্ট আবার ভারতে ফেরার চেষ্টা করলে বিএসএফ তাঁকে আটক করে এবং বসিরহাট থানায় হস্তান্তর করে। এই তথ্য আদালতের নথিতেও তোলা হয়েছে।
‘বাবার হাতে তুলে দিন’—আদালতের মানবিক নির্দেশ
শুনানির সময় বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশ তাহলে ওকে বাবার হাতে তুলে দিক।” এই মানবিক মন্তব্য আদালতের কক্ষে উপস্থিত অনেককেই আবেগপ্রবণ করে তোলে। পাশাপাশি বিএসএফকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নিজেদের বিস্তারিত অবস্থান আদালতে জানায়।
নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন—প্রমাণ দিতে ব্যর্থ অভিযুক্ত
সরকারি পক্ষের আইনজীবী শুনানিতে দাবি করেন, অভিযুক্ত নিজের ভারতীয় নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণপত্র আদালতে দেখাতে পারেননি। ফলে গোটা ঘটনায় এক নতুন আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই বিষয়েই আদালত আগামী শুনানিতে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
আইনজীবীদের মতে—অভিযোগের সত্যতা নির্ভর করবে তদন্তে
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলায় মূল প্রশ্ন হল, অভিযুক্ত সত্যিই কি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন, নাকি ভুলবশত তাঁকে বিদেশি বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। তদন্তের ফলেই তা স্পষ্ট হবে। পাশাপাশি বিএসএফ ও পুলিশের সমন্বয় নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
মানবাধিকার বনাম সীমান্ত নিরাপত্তা—দ্বন্দ্ব তুঙ্গে
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ থাকলেও তার আইনি প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে এভাবে বিদেশে পাঠানো ঠিক নয়। অপর দিকে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর দাবি, সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা রোধ করাই তাদের প্রধান দায়িত্ব। এই দ্বন্দ্বই মামলাটিকে সংবেদনশীল করে তুলেছে।
মালদহ থেকে রাজস্থান—তারপর সীমান্তের পথে রহস্যময় যাত্রা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াচকের বাসিন্দা আমির শেখ জীবিকার সন্ধানে রাজস্থানে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক কীভাবে তিনি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে গেলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এই রহস্য উন্মোচনই এখন তদন্তের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
আগামী শুনানি নজরে—পুরো রাজ্যের দৃষ্টি বসিরহাটে
২৭ অগস্টের শুনানিকে ঘিরে শুধু মালদহ বা বসিরহাট নয়, সারা রাজ্যের আইনি মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ, এই রায় সীমান্তবর্তী এলাকার বহু শ্রমিকের জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নজর এখন সর্বত্র।এক পরিযায়ী শ্রমিক, অভিযোগ অনুযায়ী রাজস্থানে আটক → সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো → বিএসএফ ফেরত এনে পুলিশের হাতে তুলে দেয় → হাইকোর্টের মুক্তির নির্দেশ → নাগরিকত্বের প্রমাণ না থাকায় আইনি জটিলতা → ২৭ অগস্টে পরবর্তী শুনানি।