ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র ঘিরে ফের উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। বিজেপির দাবি—এখানে কয়েক লক্ষ ‘ভুয়ো ভোটার’ ভোট দিয়েছেন, যা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেকর্ড জয়ের অন্যতম কারণ। অপর দিকে, তৃণমূলের জবাব—সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ, রাজনৈতিক লাভের আশায় বিজেপি এই নাটক সাজাচ্ছে।
অনুরাগ ঠাকুরের অভিযোগে বিস্ফোরণ দিল্লির মাটিতে
বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সরাসরি আঙুল তোলেন অভিষেকের দিকে। তাঁর দাবি—ডায়মন্ড হারবারে অন্তত ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ভুয়ো ভোটার রয়েছে। গত চার বছরে ফলতা, বিষ্ণুপুর, মহেশতলা ও বজবজ সহ পাঁচটি বিধানসভা মিলিয়ে ৩০১টি বুথে ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে ১৫ শতাংশ। তাঁর কথায়, এই বুথগুলিতে প্রতিবার তৃণমূলই জিতেছে, যা সন্দেহজনক।
ভোটার বৃদ্ধি নিয়ে বিজেপির ‘চমকপ্রদ’ পরিসংখ্যান
অনুরাগের যুক্তি—বছর কয়েকের মধ্যে এত বিশাল ভোটার বৃদ্ধি স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে যখন সব ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট দল জিতে যাচ্ছে, তখন প্রশাসনের নজরদারি থাকা উচিত ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, বুথভিত্তিক তথ্য দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যাবে, পরিকল্পিতভাবে ভোটার তালিকা ফুলিয়ে ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের পাল্টা আক্রমণ—‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’
তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগকে একেবারেই আমল দিচ্ছে না। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বৃহস্পতিবারই পাল্টা পদক্ষেপ নেন। তিনি অনুরাগ ঠাকুরের দিল্লির বাসভবনে পাঠিয়ে দেন তথাকথিত ‘প্রমাণ’—যা দিয়ে দেখাতে চান, বিজেপির দাবি সম্পূর্ণ ভুল। কুণালের বক্তব্য, ভোটার যদি বৈধ হন, তাহলে সংখ্যাবৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। অনুরাগ ঠাকুর হয় তথ্য জানেন না, নয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যে বলছেন।
২৬৫ নম্বর বুথের ‘প্রমাণপত্র’ কুণালের হাতে
কুণালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডায়মন্ড হারবারের ২৬৫ নম্বর বুথে আগের ভোটার সংখ্যা ছিল ৪৭, বর্তমানে ৪১ জন রয়েছেন। অনুপস্থিত ৬ জনের মধ্যে ১ জন মারা গিয়েছেন, ১ জন ওড়িশায়, ৩ জন বিবাহসূত্রে অন্যত্র এবং ১ জন কর্মসূত্রে বাইরে আছেন। এই উদাহরণ দেখিয়ে তিনি প্রমাণ করতে চান—বিজেপির ‘বৃদ্ধি’ তত্ত্ব কাগজে-কলমেই।
পরিসংখ্যানে তৃণমূলের পাল্টা যুক্তি
তৃণমূল নেতার দাবি, গত চার বছরে গোটা ডায়মন্ড হারবারে ভোটার বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪.৭০ শতাংশ। ফলতার ১৪৪ নম্বর বুথে এই বৃদ্ধি ৪.০৯ শতাংশের বেশি নয়। কুণালের বক্তব্য—যেখানে স্বাভাবিক হারে ভোটার বাড়ছে, সেখানে ‘ভুয়ো ভোটার’ বলে চিৎকার করা শুধু রাজনৈতিক নাটক।
রাজনৈতিক ফায়দার অভিযোগ তৃণমূলের মুখে
তৃণমূলের মতে, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে টার্গেট করছে। ভোটের আগেই ‘ভুয়ো ভোটার’ ইস্যু তুলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বার্তা স্পষ্ট—এই ধরনের অভিযোগে জনমত বদলানো যাবে না, বরং উল্টো প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
অভিষেককে ঘিরে নতুন কাদা ছোড়াছুড়ি
ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটের ব্যবধান বরাবরই নজরকাড়া। এ কারণে বিরোধীরা বহুবার তাঁর বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। এবারের ‘ভুয়ো ভোটার’ ইস্যুও সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই লড়াই আসলে ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক তাপমাত্রা বাড়ানোর কৌশল।