প্রথমবার প্রকাশ্যে এল 'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টার। এই হেলিকপ্টারটি ১৬,৪০০ ফুট উচ্চতায় কাজ করতে সক্ষম। ছয়জন সৈন্যসহ অস্ত্র বহন করতে পারে।
Defence News: ভারতীয় সেনাবাহিনী শীঘ্রই তাদের বহরে ১৫৬টি 'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টার যুক্ত করতে চলেছে। এই হেলিকপ্টার বিশেষভাবে উঁচু পার্বত্য অঞ্চল যেমন সিয়াচেন, লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশে অপারেশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। 'প্রচণ্ড' হল বিশ্বের একমাত্র অ্যাটাক হেলিকপ্টার, যা ১৬,৪০০ ফুট অর্থাৎ ৫,০০০ মিটার উচ্চতায়ও উড়তে পারে। এটি উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে সৈন্য পরিবহন, হাই অলটিটিউড ডিফেন্স এবং এইচএডিআর অপারেশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টারের ক্ষমতা এবং সৈন্যদের জন্য সুবিধা
'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টার একসঙ্গে ছয়জন সৈন্যকে বহন করতে সক্ষম। প্রত্যেক সৈন্য তাদের সাথে ২০ কেজি পর্যন্ত ব্যাটারি লোড বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিতে পারে। এই হেলিকপ্টার টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত সক্ষম। পুরনো চেতক এবং চিতা হেলিকপ্টারের জায়গায় এটি সেনাবাহিনীর বহরে যুক্ত করা হচ্ছে। এই পুরনো হেলিকপ্টারগুলোতে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটতো এবং অপারেশন চালানোর সময় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিত।
'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টারের টেস্টিং বিভিন্ন উচ্চতার অঞ্চলে করা হয়েছে। এতে আধুনিক সেন্সর এবং ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, যার ফলে এটি সহজেই উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে ল্যান্ড এবং টেকঅফ করতে পারে। এর বিশেষত্ব হল এটি ২০,০০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায়ও অপারেশন করতে পারে।
টেকনোলজি এবং হাই অলটিটিউড অপারেশন
'প্রচণ্ড'-এ হাই-টেক সরঞ্জাম লাগানো হয়েছে। এতে সেন্সর এবং ক্যামেরা সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আশেপাশের এলাকার ওপর নজর রাখা যায়। এই হেলিকপ্টার এয়ার-টু-গ্রাউন্ড এবং এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল ছুঁড়তে পারে। এর ২০ এমএম বন্দুক শত্রুর সুরক্ষায় ক্ষতি করতে সক্ষম। এছাড়াও, এটি রকেট এবং অন্যান্য অস্ত্র বহন করতে পারে।
সিয়াচেনের ফরোয়ার্ড এরিয়া যেমন সোনম পোস্টেও 'প্রচণ্ড' তার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এতে থাকা প্রযুক্তির কারণে এটি উঁচু অঞ্চলের অপারেশনের জন্য আদর্শ। হেলিকপ্টারে লাগানো সেন্সরের মাধ্যমে সরাসরি মিসাইল লঞ্চ করা যেতে পারে।
সুরক্ষা এবং দুর্ঘটনায় হ্রাস
পুরনো চেতক এবং চিতা হেলিকপ্টারের অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। 'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টারকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি হাই অলটিটিউডে অপারেশন করার সময় নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য হবে। এর ফলে সেনাবাহিনীর অপারেশনে ঝুঁকি কম হবে এবং সৈন্যদের সুরক্ষা বাড়বে।
এছাড়াও, 'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টারের টেকনিক এবং এয়ার সিস্টেম শত্রুর আকাশ পথে সুরক্ষাকে নষ্ট করতে সক্ষম। এই হেলিকপ্টার ৩৬০ ডিগ্রি নজরদারি করতে পারে এবং প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা হামলা করতে পারে।
ভারত-চীন সীমান্তে কৌশলগত গুরুত্ব
'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টারের প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারত-চীন সীমান্তে মোতায়েন করা। এই হেলিকপ্টার এলওসি-র ফরোয়ার্ড পোস্টে অপারেশন করতে পারে এবং সৈন্য ও অস্ত্র দ্রুত পৌঁছে দিতে পারে। এটি এয়ার-টু-এয়ার এবং এয়ার-টু-গ্রাউন্ড মিসাইল দ্বারা সজ্জিত, যা শত্রুর সুরক্ষা ব্যবস্থাকে সহজেই পরাস্ত করতে পারে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই ১৫টি 'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বেড়ে ১৫৬টি হবে। এই হেলিকপ্টার সিয়াচেন হিমবাহ এবং লাদাখের মতো উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে তার অপারেশনাল ক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
মেক ইন ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগ
'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টারের নির্মাণ সম্পূর্ণরূপে মেক ইন ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগের অধীনে করা হয়েছে। এর ফলে শুধু প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বাড়েনি, ভারতীয় বায়ুসেনা ও সেনাবাহিনীর জন্য আধুনিক ও কার্যকরী হেলিকপ্টারও পাওয়া গেছে।
এই হেলিকপ্টার ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে নতুন দিশা দেবে। এটি সীমান্তে সৈন্যদের মোতায়েন, হাই অলটিটিউড অপারেশন এবং আকাশপথে নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হবে।
'প্রচণ্ড' হেলিকপ্টারের প্রধান বৈশিষ্ট্য
- উচ্চতায় টেকঅফ এবং ল্যান্ডিংয়ের ক্ষমতা।
- ছয়জন সৈন্যকে সাথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা।
- ২০ কেজি পর্যন্ত ব্যাটারি লোড বহন করতে পারে।
- এয়ার-টু-এয়ার এবং এয়ার-টু-গ্রাউন্ড মিসাইল।
- ২০ এমএম বন্দুক এবং রকেট সিস্টেম।
- আধুনিক সেন্সর ও ক্যামেরা দ্বারা ৩৬০ ডিগ্রি নজরদারি।
- হাই অলটিটিউড ওয়ারফেয়ার এবং এলওসি ফরোয়ার্ড পোস্টে অপারেশন করতে সক্ষম।