রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ভারতকে অতিরিক্ত শুল্কের বিষয়ে আমেরিকার সতর্কতা

রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ভারতকে অতিরিক্ত শুল্কের বিষয়ে আমেরিকার সতর্কতা

আমেরিকা ভারতকে সতর্ক করেছে যে রাশিয়া থেকে তেল কেনার উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার ফলাফলের উপর এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।

Trump-India: আমেরিকা সম্প্রতি ভারতকে সতর্ক করেছে যে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল না এলে ভারতের উপর অতিরিক্ত দ্বিতীয় স্তরের শুল্ক (secondary sanctions) আরোপ করা হতে পারে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে তাঁরা রাশিয়া থেকে তেল কেনা ভারতীয়দের উপর ইতিমধ্যেই শুল্ক বসিয়েছেন এবং পরিস্থিতি ঠিক না থাকলে তা আরও বাড়তে পারে।

ট্রাম্প এবং পুতিনের বৈঠকের প্রভাব

এই সিদ্ধান্তটি এই মাসে আলাস্কায় রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের উপর নির্ভর করবে। মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্য, যদি এই বৈঠক থেকে যুদ্ধ সমাধানের কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত না পাওয়া যায়, তাহলে ভারতের উপর আরও কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে।

আমেরিকার অভিযোগ এবং শুল্কের পরিস্থিতি

মার্কিন প্রশাসন ভারতের উপর অভিযোগ করেছে যে তারা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে পরোক্ষভাবে অর্থ যোগান দিচ্ছে। সম্প্রতি ট্রাম্প ভারতীয় আমদানির উপর ২৫ শতাংশ জরিমানা ধার্য করেছেন এবং রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার উপরও ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছেন। এখন মোট শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। ভারত একে অনুচিত এবং অবিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছে এবং তাদের জ্বালানি সুরক্ষা বজায় রাখার স্বার্থে তেল আমদানিকে সমর্থন করেছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারত আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে। সরকার বলেছে যে এই শুল্ক ভারতের জাতীয় জ্বালানি সুরক্ষা এবং বাণিজ্য স্বার্থের পরিপন্থী। ভারতীয় কর্মকর্তারা এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে আলোচনায় ভারত তাদের কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার সুরক্ষিত রাখার অবস্থান থেকে সরবে না।

বাণিজ্য আলোচনার পরিস্থিতি

নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা এই মাসের শুরুতে সামান্য বাধা পাওয়ার পর শুরু হয়েছিল। মার্কিন আলোচকরা ২৫শে আগস্ট ভারতে পৌঁছানোর আশা করছেন, যার ফলে বাণিজ্য আলোচনা আবার শুরু হতে পারে। ভারতে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার ঠিক দুই দিন আগে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারত তার অভ্যন্তরীণ বাজার এবং কৃষকদের সুরক্ষিত রাখার অবস্থানে অনড় থাকলে তা আলোচনায় বিরোধের মূল কারণ হবে।

পুতিন-ট্রাম্প আলোচনা এবং ইউক্রেনের ভূমিকা

আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের উদ্দেশ্য হল ইউক্রেনে চলমান সংঘাত বন্ধ করার জন্য একটি শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা। ট্রাম্প বলেছেন যে এই বৈঠক রুশ নেতার যুদ্ধবিরতির ইচ্ছার মূল্যায়ন করার জন্য অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক হবে। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে শান্তি চুক্তিতে কিছু অঞ্চলের বিনিময় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

তবে ইউক্রেন এই ধারণার বিরোধিতা করেছে। ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি বলেছেন যে কিয়েভের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো শান্তি চুক্তি হবে না এবং দেশ রাশিয়াকে কোনো অঞ্চল দেবে না। ইউরোপীয় কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন যে এই মুখোমুখি বৈঠকে ইউক্রেনের অংশগ্রহণ না থাকায় ফলাফল রাশিয়ার পক্ষে যেতে পারে। আমেরিকা ভারতকে সতর্ক করেছে যে রাশিয়া থেকে তেল কেনার উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার ফলাফলের উপর এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।

Leave a comment