সিবিআই তদন্তে প্রশ্ন হাইকোর্টের প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ধোঁয়াশা

সিবিআই তদন্তে প্রশ্ন হাইকোর্টের প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ধোঁয়াশা

তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে সংশয় প্রকাশ আদালতের

কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানাল, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির সিবিআই তদন্ত কোন দিকে এগোচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রর মন্তব্য, “রাজ্যের সমস্ত নিয়োগ দুর্নীতিই সিবিআই ও ইডি খতিয়ে দেখছে। কিন্তু তদন্ত শেষ হতে কত সময় লাগবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।” আদালতের মতে, তদন্ত সম্পূর্ণ হলে তবেই বোঝা যাবে আসল অপরাধী কারা।

বেআইনি সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে তর্ক-বিতর্ক

মূল মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, যাঁরা ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন, তাঁরাও বেআইনি সুবিধা পেয়েছেন। তবে আদালতের প্রশ্ন, “কীভাবে প্রমাণ করা হবে তাঁদের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি? পাল্টা যুক্তি দেন আইনজীবীরা—“প্যানেল প্রকাশের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। এতে আবারও আদালতের কটাক্ষ—“নিয়মে যদি প্যানেল প্রকাশের পদ্ধতি উল্লেখই না থাকে, তবে বোর্ড কি নিজের মতো করে নিয়ম তৈরি করতে পারে না?

প্যানেল প্রকাশের বিধি নিয়েই ধোঁয়াশা

আইনজীবীদের বক্তব্য, বিধিতে স্পষ্টভাবে বলা না থাকলেও প্যানেল প্রকাশ অবশ্যই করতে হবে। আদালত এ নিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন তোলে, “যদি অ্যাপটিটিউড টেস্ট না হয়ে থাকে, তবে প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত কেউই সেই সুযোগ পাননি। এখন আলাদা করা হবে কীভাবে?” এর ফলে আবারও মামলার জটিলতা সামনে আসে।

৩২ হাজার অপ্রশিক্ষিত বনাম প্রশিক্ষিত প্রার্থীর চাকরি

আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, যদি এখন ৩২ হাজার অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীর চাকরি বাতিল হয়, তবে বাকি প্রশিক্ষিত প্রার্থীরা কি রেহাই পাবেন? আদালতের যুক্তি, সবাই একই নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ ছিলেন। সেক্ষেত্রে আলাদাভাবে কোনও গোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখা ন্যায়সঙ্গত হবে না। আদালত স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়—প্রশিক্ষিত প্রার্থীদেরও মামলায় পক্ষ হিসেবে শোনা দরকার।

মামলাকারীদের দাবি, নতুন করে প্যানেল প্রকাশ

আইনজীবীদের একাংশ আদালতের কাছে প্রস্তাব দেন, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিই বাতিল করে নতুন করে প্যানেল গঠন হোক। তাঁদের যুক্তি, অন্যথায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রশ্নের মুখে পড়বে। তবে আদালতই পাল্টা প্রশ্ন তোলে, “এত বিপুল সংখ্যক আবেদনকারী ও চাকরিপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে তা আদৌ সম্ভব কি?”

আদালতের হিসেব, চাকরিজীবনের প্রভাব কী হবে?

ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, “১ লাখ ২৫ হাজার আবেদনকারী, ৪২ হাজার চাকরিপ্রাপক—এত পরিবারকে প্রভাবিত করবে এই রায়। ইতিমধ্যেই তাঁরা পাঁচ বছর চাকরি করেছেন। আরও কয়েক বছর মামলা চললে সাত বছর পূর্ণ হবে। তখন তাঁরা গ্র্যাচুইটির মতো সুবিধার দাবিদার হয়ে উঠবেন।” আদালতের কণ্ঠে উদ্বেগ, এমন পরিস্থিতির সমাধান কীভাবে সম্ভব? কিন্তু কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি আইনজীবীদের কাছ থেকে।

আদালতের নজরে নিয়োগ দুর্নীতির বিস্তৃত চক্র

বিচারপতিদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, শুধু প্রাথমিক শিক্ষা নয়, গোটা রাজ্যের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই আদালতের সংশয় আছে। ইডি ও সিবিআইয়ের তদন্ত চললেও শেষ পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট দায় নির্ধারণ হয়নি। আদালত ইঙ্গিত দেয়, “চক্রের পিছনে কারা ছিল, তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।

শিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিরতা, প্রার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তার মুখে চাকরিপ্রার্থীরা। অনেকেই বছর কয়েক ধরে চাকরি করছেন, আবার অনেকের জীবনে চাকরির আশা পুরোপুরি ভেস্তে গেছে। আদালতের নতুন প্রশ্নে তাঁদের অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে গেল।

আগামী শুনানিতে নজর রাজ্যের

মঙ্গলবারের শুনানির পর আদালত জানায়, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১১ সেপ্টেম্বর। রাজ্য, সিবিআই ও মামলাকারী পক্ষ, সবার দিকেই এখন চোখ। শিক্ষাক্ষেত্রে চাকরির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আদালতের এই মামলার রায়ের উপর। আদালতের পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই মামলার সমাধান একদিনে সম্ভব নয়।

Leave a comment