ভারতে ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক: পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা চালু ও কড়া নিরাপত্তা বিধি

ভারতে ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক: পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা চালু ও কড়া নিরাপত্তা বিধি

ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোম্পানি স্টারলিঙ্ক ভারতে পূর্ণাঙ্গভাবে পরিষেবা চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোম্পানি দেশের ৯টি প্রধান শহরে গেটওয়ে স্টেশন তৈরি করবে। ট্রায়ালের সময় ১০০টি ইউজার টার্মিনাল ব্যবহার করা হবে এবং সমস্ত ডেটা ভারতেই সুরক্ষিত থাকবে। নিরাপত্তা বিধি অনুযায়ী শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকরাই স্টেশনগুলি পরিচালনা করতে পারবেন।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট: ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক এখন ভারতে তার পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা চালুর জন্য প্রস্তুত। কোম্পানি দেশের ৯টি শহরে গেটওয়ে আর্থ স্টেশন তৈরি করবে এবং প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ গিগাবিট ক্ষমতার জন্য জেন ১ স্যাটেলাইট কন্সটেলেশনের ট্রায়াল চালাবে। টেলিযোগাযোগ বিভাগ (DoT) ১০০টি ইউজার টার্মিনালের জন্য অস্থায়ী স্পেকট্রাম দিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকরাই এই স্টেশনগুলি পরিচালনা করতে পারবেন এবং সমস্ত ডেটা ভারতের মধ্যেই সুরক্ষিত রাখা হবে। কোম্পানিকে প্রতি ১৫ দিনে DoT এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে রিপোর্ট পাঠাতে হবে।

প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ গিগাবিট ক্ষমতা 

দ্য ইকোনমিক টাইমস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, স্টারলিঙ্ক ভারতে তাদের জেন ১ স্যাটেলাইট কন্সটেলেশনের অধীনে প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ গিগাবিট গতির ক্ষমতার জন্য আবেদন করেছে। টেলিযোগাযোগ বিভাগ (DoT) বর্তমানে কোম্পানিকে ডেমোর জন্য অস্থায়ী স্পেকট্রাম দিয়েছে, যাতে নিরাপত্তা মানগুলি যাচাই করা যায়। এই অনুমতির অধীনে স্টারলিঙ্ক ১০০টি ইউজার টার্মিনাল আমদানি করতে পারবে এবং শুধুমাত্র ফিক্সড স্যাটেলাইট সার্ভিসের ডেমো চালানোর অনুমতি রয়েছে।

স্টারলিঙ্কের এই ট্রায়ালের উদ্দেশ্য হল ভারতে হাই-স্পিড ইন্টারনেটের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করা। এর মাধ্যমে কোম্পানি এটিও দেখতে পারবে যে ভারতীয় বাজারে এই প্রযুক্তির চাহিদা কতটা এবং কোন শহরগুলিতে পরিষেবার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

কঠোর নিরাপত্তা বিধি ও পর্যবেক্ষণ

সরকার স্টারলিঙ্কের উপর কঠোর নিরাপত্তা বিধি আরোপ করেছে যাতে যেকোনো ধরনের অপব্যবহার রোধ করা যায়। কোম্পানি তাদের স্টেশন পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আনার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকরাই এই স্টেশনগুলি পরিচালনা করতে পারবেন।

নিরাপত্তা সংস্থাগুলির তত্ত্বাবধানে স্টারলিঙ্কের প্রতিটি স্টেশনের অবস্থা এবং পরিচালনার রিপোর্ট নিয়মিতভাবে সরকারকে পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যে কোনো সংবেদনশীল ডেটা বা প্রযুক্তি ভুল হাতে না যায়।

আগেও উঠেছিল নিরাপত্তা উদ্বেগ

ভারতে স্টারলিঙ্কের কার্যক্রম নিয়ে আগেও নিরাপত্তা উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। মার্চ ২০২৫-এ মণিপুর এবং আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অবৈধ স্টারলিঙ্ক সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এর পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক টেলিযোগাযোগ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিল যে এই ধরনের কার্যকলাপের তদন্ত করা হোক। এর পাশাপাশি ডেটা লোকালইজেশন এবং নিয়মিত রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সরকারের এই নীতি নিশ্চিত করে যে স্টারলিঙ্কের ডেটা এবং স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক ভারতের নিরাপত্তা মানগুলির অধীনেই পরিচালিত হবে। এর ফলে যেকোনো সম্ভাব্য বিপদ সময় থাকতে আটকানো সম্ভব হবে।

ভারতে ডেটার নিরাপত্তা

ট্রায়ালের সময় স্টারলিঙ্ক সাধারণ মানুষকে তাদের পরিষেবা প্রদান করবে না। এই সময়ে যে ডেটা তৈরি হবে, তা ভারতের মধ্যেই সুরক্ষিত রাখা হবে। কোম্পানিকে প্রতি ১৫ দিনে টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। এই রিপোর্টে তাদের স্টেশনগুলি কোথায় অবস্থিত, কোন টার্মিনাল ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ব্যবহারকারীদের অবস্থান কী, সেই তথ্য থাকবে।

এই নিয়মের উদ্দেশ্য হল দেশে ইন্টারনেট ও ডেটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। স্টারলিঙ্কের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এটিও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ভারতে কোনো বিদেশি প্রযুক্তি নজরদারি ছাড়া কাজ করতে পারবে না।

ভারতে স্টারলিঙ্কের গুরুত্ব

স্টারলিঙ্ক ভারতের এমন অঞ্চলগুলির জন্য অত্যন্ত উপযোগী প্রমাণিত হতে পারে, যেখানে এখনও মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট পৌঁছায়নি। কোম্পানির হাই-স্পিড স্যাটেলাইট পরিষেবা গ্রামীণ এলাকা, পার্বত্য অঞ্চল এবং দূরবর্তী এলাকায় ইন্টারনেটের প্রবেশাধিকার বাড়াতে পারে। এর ফলে দেশে ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সাহায্য করবে।

স্টারলিঙ্কের এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতে ইন্টারনেট সংযোগের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। শিক্ষা, ব্যবসা বা স্বাস্থ্যসেবা যাই হোক না কেন, হাই-স্পিড ইন্টারনেটের উপস্থিতি ডিজিটাল পরিষেবাগুলির সম্প্রসারণকে সহজ করে তুলবে।

Leave a comment