ছট পূজা ২০২৫-এর চার দিনের মহোৎসব ২৫শে অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত পালিত হবে। সূর্যদেব এবং ছঠি মাইয়াকে উৎসর্গীকৃত এই উৎসব নহায়-খায়, খরনা, সন্ধ্যা অর্ঘ্য এবং ঊষা অর্ঘ্যের মতো আচারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এটি বিশ্বাস, পরিচ্ছন্নতা এবং সম্মিলিত ঐক্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।
ছট পূজা: এই বছর ছট পূজার মহোৎসব ২৫শে অক্টোবর (শনিবার) থেকে শুরু হয়ে ২৮শে অক্টোবর (মঙ্গলবার) উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদনের সাথে সমাপ্ত হবে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত এই উৎসব সূর্যদেব এবং ছঠি মাইয়ার আরাধনায় উৎসর্গীকৃত। চার দিন ধরে চলা এই লোকোৎসব শ্রদ্ধা, শৃঙ্খলা এবং প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতার উৎসব, যেখানে নহায়-খায়, খরনা, সন্ধ্যা অর্ঘ্য এবং ঊষা অর্ঘ্যের বিশেষ পদ্ধতিগুলি অন্তর্ভুক্ত।
ছট পূজা
ছট পূজার উৎসব সূর্যদেব এবং ছঠি মাইয়াকে উৎসর্গীকৃত। এটি হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে কঠিন এবং পবিত্র ব্রতগুলির মধ্যে গণ্য করা হয়। চার দিন ধরে চলা এই লোকোৎসব শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং পরিচ্ছন্নতার বার্তা দেয়। এটি কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং পরিবার, সমাজ এবং প্রকৃতির মধ্যে গভীর সংযোগের প্রতীকও।
এই বছর ছট পূজা ২৫শে অক্টোবর ২০২৫ (শনিবার) থেকে শুরু হয়ে ২৮শে অক্টোবর ২০২৫ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত চলবে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলগুলিতে এটি বিশেষ জাঁকজমকের সাথে পালিত হয়। ঘাটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ঘরে প্রস্তুতি এবং লোকগানের প্রতিধ্বনি এই উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
ছট পূজা ২০২৫-এর প্রধান তারিখগুলি
- প্রথম দিন (নহায়-খায়): ২৫শে অক্টোবর ২০২৫, শনিবার
- দ্বিতীয় দিন (খরনা): ২৬শে অক্টোবর ২০২৫, রবিবার
- তৃতীয় দিন (সন্ধ্যা অর্ঘ্য): ২৭শে অক্টোবর ২০২৫, সোমবার
- চতুর্থ দিন (ঊষা অর্ঘ্য): ২৮শে অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার
প্রথম দিন
ছট মহোৎসবের সূচনা হয় নহায়-খায় দিয়ে। এই দিন ব্রতী (ব্রত পালনকারী নারী বা পুরুষ) পবিত্র নদী বা জলাশয়ে স্নান করেন। যদি নদী পাওয়া না যায়, তবে ঘরেই গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করা হয়। এরপর ঘরের সম্পূর্ণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং শুদ্ধিকরণ করা হয়।
পদ্ধতি
এই দিন ব্রতী কেবলমাত্র একবার সাত্ত্বিক আহার করেন। আহারে সৈন্ধব লবণ ব্যবহার করা হয় এবং এতে সাধারণত লাউয়ের তরকারি, ছোলার ডাল এবং ভাত অন্তর্ভুক্ত থাকে। মনে করা হয় যে এই দিনের আহার পবিত্রতার প্রতীক এবং ব্রতীর শরীর ও মনকে ব্রতের জন্য প্রস্তুত করে।
নহায়-খায় এর পর ব্রতী পরের দিন থেকে কঠোর উপবাসের জন্য প্রস্তুতি নেন।
দ্বিতীয় দিন
ছট পূজার দ্বিতীয় দিনকে খরনা বলা হয়, যা কিছু জায়গায় লোহণ্ডা নামেও পরিচিত। এই দিন থেকে ব্রতীর ৩৬ ঘণ্টার নির্জলা ব্রত শুরু হয়। অর্থাৎ, এই ব্রত চলাকালীন ব্রতী অন্ন এবং জলও গ্রহণ করেন না।
পদ্ধতি
সারাদিন নির্জলা উপবাস রাখার পর সন্ধ্যায় ব্রতী মাটির উনুনে আমের কাঠ দিয়ে গুড়ের পায়েস (রসিয়া) এবং ঘি মাখানো রুটি তৈরি করেন। সূর্যদেবের পূজার পর ব্রতী প্রথমে এই প্রসাদ গ্রহণ করেন।
খরনার প্রসাদ পরিবার এবং আশেপাশের মানুষের মধ্যেও বিতরণ করা হয়। এটি পবিত্রতা এবং সম্মিলিততার প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। খরনার পর ব্রতী পরের দিন সকাল পর্যন্ত অন্ন-জল ত্যাগ করেন এবং সন্ধ্যা অর্ঘ্যের জন্য প্রস্তুতি নেন।
তৃতীয় দিন
ছট পূজার তৃতীয় দিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যখন ব্রতী এবং ভক্তরা অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। এটিকে সন্ধ্যা অর্ঘ্য বলা হয়। এই দিন ঘাটগুলিতে বিপুল ভিড় হয়। মহিলারা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সূপ, বাঁশের ডালা এবং প্রসাদ নিয়ে নদী বা পুকুরের ধারে যান।
পদ্ধতি
সূপ বা ডালায় ঠেকুয়া, কলা, নারকেল, আখ, লেবু এবং মৌসুমী ফলের প্রসাদ রাখা হয়। জলে দাঁড়িয়ে ব্রতীরা অস্তগামী সূর্যকে দুধ, জল এবং ফুল দিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করেন।
অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করার অর্থ হল জীবনের প্রতিটি ধাপে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, তা যতই কঠিন সময় হোক না কেন। এই দিন ঘাটগুলিতে গাওয়া লোকগান এবং ‘ছঠি মাইয়া’-এর জয়ধ্বনি পরিবেশকে ভক্তিময় করে তোলে।
চতুর্থ দিন
উৎসবের সমাপ্তি হয় চতুর্থ দিনে ঊষা অর্ঘ্য অর্থাৎ উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করে। ব্রতী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা সূর্যোদয়ের আগে ঘাটে পৌঁছান।
পদ্ধতি
সূর্যের প্রথম রশ্মি দেখা গেলে ব্রতী দুধ, জল এবং ফুল দিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। এই সময় পরিবেশ শ্রদ্ধা ও ভক্তিতে ভরে ওঠে। অর্ঘ্য নিবেদনের পর ব্রতীরা কাঁচা দুধ এবং প্রসাদ দিয়ে ব্রত ভঙ্গ করেন, যাকে পারণ বলা হয়। এরপর প্রসাদ পরিবার এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
এই মুহূর্তটি কেবল ব্রত সমাপ্তিরই নয়, বরং জীবনে নতুন শক্তি এবং শুভতার প্রতীক হিসাবেও বিবেচিত হয়।

ছট পূজার ধর্মীয় গুরুত্ব
ছট পূজার ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উভয় দিক থেকেই গভীর গুরুত্ব রয়েছে। এটি সূর্যদেবের উপাসনার উৎসব। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, সূর্যদেব শক্তি, স্বাস্থ্য এবং জীবনের দাতা।
এই দিন সূর্যদেবের পত্নী ঊষা এবং প্রত্যুষা এবং ছঠি মাইয়া (ষষ্ঠী দেবী)-এরও পূজা করা হয়। ছঠি মাইয়াকে সন্তানের রক্ষক এবং মনোবাঞ্ছা পূরণকারী দেবী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
সূর্যের উপাসনা দ্বারা শরীরে জীবনদায়ী শক্তি লাভ হয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, সকাল এবং সন্ধ্যার সময় সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শ শরীরের জন্য উপকারী হয়। এই কারণেই ছট পূজাকে স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের সাথে জড়িত উৎসবও বলা হয়।
ছট এবং লোক সংস্কৃতির সম্পর্ক
ছট পূজা কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি ভারতীয় লোকসংস্কৃতির মূলের সাথে জড়িত একটি উৎসব। এই সময়ে সমগ্র অঞ্চলে লোকগান, ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং সম্মিলিততার অনুভূতি দেখা যায়।
বিহার এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশে 'কেলওয়া জে হরওয়া', 'ছঠি মাইয়া আয়ল বাড়ি অঙ্গনা'-এর মতো গান ঘরে ঘরে প্রতিধ্বনিত হয়। এই গানগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লোকপরম্পরার অংশ এবং সমাজে বিশ্বাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
এছাড়াও, ছট পূজা প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতার উৎসবও বটে। পূজায় ব্যবহৃত সমস্ত প্রসাদ যেমন আখ, কলা, ঠেকুয়া, নারকেল সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক হয়। এর মাধ্যমে এই উৎসব পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তাও দেয়।
ছট পূজার সামাজিক ভাবনা
ছট পূজার সবচেয়ে বিশেষ দিক হল এর সামাজিক সংহতি। এই সময়ে জাতি বা শ্রেণীর কোনো ভেদাভেদ থাকে না। সবাই এক সাথে ঘাটগুলিতে একই ভাবনার সাথে উপস্থিত হন।
ব্রতীর জন্য পুরো পরিবার এবং সমাজ সহযোগিতা করে। কেউ প্রসাদ তৈরি করেন, কেউ সজ্জা করেন













