তিন বছর পর চীনের বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফর: সম্পর্ক উন্নতির পথে?

তিন বছর পর চীনের বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফর: সম্পর্ক উন্নতির পথে?

তিন বছর পর চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফরে এসেছেন। এই সফরের উদ্দেশ্য হল ভারত-চীন সম্পর্কের উত্তেজনা কমানো এবং সীমান্ত বিরোধ, বাণিজ্য, এবং সংযোগের মতো বিষয়গুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এসসিও এবং ব্রিকস মঞ্চে দুই দেশের মধ্যে নতুন আলোচনা সম্ভাব্য 'রিসেট'-এর দিকে পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

নয়াদিল্লি: তিন বছরের ব্যবধানের পর ওয়াং ই সোমবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন এবং তিনি বিদেশমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হওয়ার কথা। এই সফর ভারত-চীন সম্পর্ককে উন্নত করতে, লাদাখ ও অরুণাচল প্রদেশে সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে এবং বাণিজ্য, সংযোগ ও মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এসসিও এবং ব্রিকস মঞ্চে উভয় দেশের সহযোগিতা আরও জোরদার করার ইঙ্গিতও রয়েছে।

তিন বছরের ব্যবধানের পর শুরু হল আলোচনা

গত কয়েক বছরে ভারত-চীন সম্পর্কের মধ্যে অনেকগুলো উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায় দেখা গেছে। লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশে সীমান্ত বিরোধের কারণে উভয় দেশের সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল। কোভিড মহামারী এবং লাদাখ সংঘর্ষ মানুষের মধ্যে যোগাযোগকেও প্রভাবিত করেছিল। ভিসা পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায় এবং সরাসরি বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ওয়াং ই-এর সফর আশা জাগাচ্ছে যে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, বাণিজ্যিক আলোচনা এবং সীমান্ত বিরোধ সমাধানের প্রচেষ্টা আবার সক্রিয় হবে।

ট্রাম্পের শুল্ক থেকে ভারত-চীন সম্পর্কের পরিবর্তন

ভারত-চীন সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নতির প্রভাব বিশ্ব রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গেও জড়িত। আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্চ মাসে চীনের উপর ২০% শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এর পর চীন ভারত ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়। ওয়াং ই ভারতকে এই বার্তা দিয়েছেন যে "হাতি ও ড্রাগনকে একসঙ্গে আসা উচিত, সহযোগিতা আমাদের অগ্রাধিকার।" প্রধানমন্ত্রী মোদীও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং আলোচনার মাধ্যমে মতভেদগুলি সমাধান করা যেতে পারে।

স্থায়ী উন্নতিতে পাকিস্তানের বাধা

ভারত-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল চীনের পাকিস্তান নীতি। মে মাসে চীন জাতিসংঘে পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদীদের "গ্লোবাল টেররিস্ট" ঘোষণার প্রস্তাব আটকে দেয়। জুন মাসে এসসিও বৈঠকেও ভারত যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি। নথিতে ভারতের উপর বেলুচিস্তানে অস্থিরতা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল, যা পাকিস্তানের চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ভারত-চীন সম্পর্কের স্থায়ী উন্নতি তখনই সম্ভব যখন চীন পাকিস্তানের বিষয়গুলোতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে।

অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার সুযোগ

সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওয়াং ই ভারতের তিনটি প্রধান উদ্বেগের—সার, রেয়ার আর্থ এবং টানেল বোরিং মেশিন—সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আলোচনায় বাণিজ্য, তীর্থযাত্রা, মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, নদীর ডেটা শেয়ার করা, সীমান্ত বাণিজ্য এবং সংযোগের মতো বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত ছিল। জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে বাণিজ্যে কোনও নিষেধাজ্ঞা বা বাধা থাকা উচিত নয়। তাঁর বক্তব্য ছিল যে ভারত-চীনের স্থিতিশীল এবং গঠনমূলক সম্পর্ক কেবল উভয় দেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের স্বার্থে প্রয়োজনীয়।

সীমান্তে ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি এবং আস্থা

২০২০ সালে লাদাখে অচলাবস্থার পর উভয় দেশ সম্প্রতি টহল ব্যবস্থাগুলোতে সম্মত হয়েছে। এটি একটি ইঙ্গিত যে সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে উভয় পক্ষই আন্তরিক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a comment